বেসরকারি সংস্থার চাকরির কৃতিত্ব নিলেও সরকারি শূন্যপদের দায় নিতে নারাজ মোদী
বেসরকারি সংস্থার চাকরির যাবতীয় কৃতিত্ব তাঁর। কিন্তু সরকারি শূন্যপদের দায়? তা নিতে নারাজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের উপর আলোচনায় সরকারের তরফে জবাবি বক্তৃতা ছিল নরেন্দ্র মোদীর। আর এই মঞ্চে তাঁর লক্ষ্য ছিল একটাই, বাড়তে থাকা বেকারত্ব নিয়ে বিরোধীদের লাগাতার অভিযোগ খণ্ডনের চূড়ান্ত আগ্রাসী চেষ্টা। সেই মতো হোম ওয়ার্কও সেরে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু সবটাই দাঁড়িয়ে গেল বেসরকারি হিসেবনামায়। দেশে বেকারত্ব নেই—এই মরিয়া দাবির পক্ষে যেসব উদাহরণ তিনি হাজির করলেন, তার পুরোটাই বেসরকারি সংস্থার নিয়োগ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান। সরকারি চাকরি কত হয়েছে, তার কোনও হিসেবই দিলেন না প্রধানমন্ত্রী। বরং হাজির করলেন কয়েকটি অঙ্ক।
প্রথম দাবি, ‘এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ড ফান্ডের হিসেবে এক বছরে ১ কোটি ২০ লক্ষ নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সি যুবক-যুবতীর।’ আসল যুক্তি হল, সংগঠিত ক্ষেত্রের বেসরকারি সংস্থায় যে কোনও চাকরিতে ঢুকলে সবার আগে তৈরি হয় প্রভিডেন্ড ফান্ড অ্যাকাউন্ট। অর্থাৎ এদিন নরেন্দ্র মোদী সেই হিসেবই দাখিল করলেন। দ্বিতীয় দাবি, ‘ন্যাসকমের সমীক্ষা অনুযায়ী ২৭ লক্ষের বেশি নিয়োগ হয়েছে শুধুমাত্র তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে।’ এই পরিসংখ্যানও কিন্তু দেশি-বিদেশি বেসরকারি তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থায় নিয়োগের অঙ্ক। আর তৃতীয় দাবি, স্টার্ট আপ। মোদি বললেন, ‘গত এক বছরে রেকর্ড পরিমাণ ইউনিকর্ন সংস্থা হয়েছে।’ এর অর্থ কী? দেশে বহু সংখ্যক স্টার্ট আপ ব্যবসা চালু হয়েছে। যদিও তার সিংহভাগ তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর। অর্থাৎ, এও বেসরকারি। এবং যে সরকারি চাকরিকে দেশের যুবসমাজ কাঙ্ক্ষিত বিবেচনা করে, সে ব্যাপারে কোনও উচ্চবাচ্যই নেই। আর তাকেই হাতিয়ার করল বিরোধীরা। মোদীর ভাষণ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বাজেট নিয়ে আলোচনায় চেপে ধরলেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। প্রশ্ন করলেন, ‘দেশে প্রায় ৮ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি শূন্যপদ পড়ে রয়েছে। নিয়োগ হচ্ছে না কেন? ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ৮ লক্ষ ৭২ হাজার ২৪৩টি কেন্দ্রীয় শূন্যপদ ছিল। সরকার সেখানে নিয়োগ করেছে মাত্র ৭৮ হাজার ২৬৪ জনকে। অর্থাৎ এখনও লক্ষ লক্ষ শূন্যপদ কেন্দ্রীয় সরকারের অসংখ্য দপ্তরে। সেই নিয়োগ কবে হবে? বাজেটে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা পাঁচ বছরে ৬০ লক্ষ চাকরি হবে। অর্থাৎ বছরে ১২ লক্ষ। কিন্তু প্রতি বছর ভারতে নতুন কর্মপ্রার্থী তৈরি হচ্ছে ৪৭ লক্ষের বেশি। বছরে ১২ লক্ষ চাকরি সরকার দেবে বলে বাজেটে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। তাহলে বাকিরা কী করবে? পকোড়া ভেজে বিক্রি করবে?’ এই কটাক্ষ কেন? কয়েক বছর আগে নরেন্দ্র মোদি নিজেই বেকারত্ব প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘পকোড়া বিক্রি করাও একটা ভালো জীবিকা।’ চিদম্বরম সেই বিবৃতি শুধু মনে করিয়ে দিলেন। এদিন মোদি অবশ্য মূল্যবৃদ্ধিকেও গুরুত্ব দেননি। বলেছেন, আমেরিকা এবং ব্রিটেন সহ ইউরোপের ১৯টি দেশে মূল্যবৃদ্ধি অনেক বেশি। আমাদের দেশেই বরং অনেক কম।
সংসদের এই ভাষণের ফাঁকেই অবশ্য মোদী গোয়ার নির্বাচনী বক্তৃতাও দিয়ে ফেলেছেন। নিশানায় সেই কংগ্রেস। উপকূলের এই রাজ্যে ভোট আসন্ন। আচমকাই মোদি বলেছেন, ‘জওহরলাল নেহরুর অনিচ্ছাতেই স্বাধীনতার পরও ১৫ বছর ধরে পরাধীন ছিল গোয়া। সেকথা গোয়াবাসী মনে রেখেছেন।’ গোয়ার মেয়ে লতা মঙ্গেশকরের পরিবারকে কীভাবে ইন্দিরা গান্ধী সরকার জরুরি অবস্থার সময় বিপদে ফেলেছে, সেকথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন। গোটা বক্তৃতায় তীব্রভাবে নেহরু ও ইন্দিরা গান্ধীর সমালোচনা করেছেন মোদি। বলেছেন, ‘কংগ্রেস হল নাগরিক নকশাল।’ চিদম্বরম অবশ্য ঠিক তারপরই শ্লেষ ফিরিয়ে দিয়েছেন—‘কত শবদেহ গঙ্গায় ভেসে গিয়েছে? সরকার বলেছে, সেই ডেটা নেই। কত পরিযায়ী শ্রমিক হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরেছে? সরকার বলেছে ডেটা নেই। আমাদের সম্পর্কে বলা হয় টুকরে টুকরে গ্যাং। অথচ এই সরকারই সংসদে বলেছে, টুকরে টুকরে গ্যাং কাকে বলে সে সম্পর্কে ডেটা নেই। অর্থনীতি সম্পর্কে ডেটা নেই। এনডিএ কথাটির অর্থ, নো ডেটা অ্যাভেলেবল!