পাহাড়ী সান্যাল : নায়ক-গায়কের মিশেলে এক স্বার্থক শিল্পীজীবন

চলচ্চিত্র জগত এই কিংবদন্তিকে পাহাড়ী সান্যাল নামে চেনে। অভিনয়-জীবনে বাংলা, হিন্দি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষার ছবি মিলিয়ে প্রায় দেড়শটি ছবিতে অভিনয় করেছেন।

February 22, 2022 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

গায়ক হতে গিয়ে হলেন নায়ক, কিন্তু সারাজীবন অক্ষত রাখলেন নিজের গায়কসত্ত্বা। তিনি একজন অসাধারণ গায়ক হতে পারতেন, কিন্তু হয়ে গেলেন অভিনেতা। বাংলা এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র জগত তাঁকে মনে রেখেছে অভিনেতা হিসেবেই।
তিনি নগেন্দ্রনাথ সান্যাল; যদিও এ নামে তাঁকে নাও চিনতে পারেন। কারণ চলচ্চিত্র জগত এই কিংবদন্তিকে পাহাড়ী সান্যাল নামে চেনে। অভিনয়-জীবনে বাংলা, হিন্দি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষার ছবি মিলিয়ে প্রায় দেড়শটি ছবিতে অভিনয় করেছেন।

জন্ম হয়েছিল সেনা পরিবারে, বাবার কর্মসূত্রে লক্ষ্ণৌতেই বেড়ে উঠেছিলেন। লক্ষ্ণৌ ঘরানার সমৃদ্ধ উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সংস্পর্শে এসেই সঙ্গীতের প্রতি তাঁর অনুরাগের জন্ম হয়। উস্তাদ, পণ্ডিতদের কাছে তালিম নিতেন নিয়মিত। শিখেছিলেন তবলাও। গানবাজনার প্রতি এই অনুরাগের নেপথ্যে ছিল তাঁর বাবা। বাবার কাছেই পেয়েছিলেন সঙ্গীতের প্রথম পাঠ। সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ তাঁকে বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির পড়া শেষ করতে দিল না। লক্ষ্ণৌর ভাতখন্ডে মিউজিক ইনস্টিটিউটে ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের পাঠ নিতে শুরু করলেন।

তাঁর সঙ্গীতপ্রীতির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে ছিলেন অতুলপ্রসাদ সেন। গানপাগল পাহাড়ী সান্যালকে স্নেহের চোখে দেখতেন তিনি। নিজের বহু গান তাঁকে দিয়ে তুলিয়েছিলেন। পিতা-পুত্রের সম্পর্কই হয়ে গিয়েছিল তাঁদের।

এর ১৯৩৩ সাল। কলকাতা তখন ভারতীয় চলচ্চিত্রের রাজধানী। সবে মাত্র সবাক হয়েছে ভারতীয় সিনেমা, ওদিকে স্ত্রী-পুত্রকে হারিয়ে মাত্র সাতাশ বছর বয়সে লক্ষ্ণৌ থেকে কলকাতায় চলে এলেন পাহাড়ী। দাপিয়ে অভিনয় করছেন প্রমথেশ বড়ুয়া, কানন দেবীর মতো স্বনামধন্য তারকারা। নিজের জায়গা তৈরি করলেন পাহাড়ী সান্যাল। কলকাতায় এসে নিউ থিয়েটার্সে যোগ দিয়েছিলেন। প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর হিন্দি-উর্দু ছবি, ‘ইহুদি কি লেড়কি’ থেকেই পথচলা শুরু হল, পাহাড়ী অভিনয় করলেন রোমান সম্রাটের ভূমিকায়।

কিন্তু তাঁর গানের কী হল?
গানকে কোনদিন ছাড়েননি এই অভিনেতা। ১৯৩৪ সালে নীতিন বসু পরিচালিত চণ্ডীদাস ছবিতে পাহাড়ী সান্যাল অভিনয় করেছিলেন রজকিনী রামীর দাদা বৈজুর চরিত্রে। ছবিতে গান গাইলেন। সায়গল ও উমাশশীর সঙ্গে, যৌথভাবে গাইলেন প্রেম কি হো জয় জয়। 
পরের বছর ১৯৩৫ সালে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসের অনন্য নজিরের সঙ্গে জুড়ে গেল পাহাড়ী সান্যালের নাম। ‘ভাগ্যচক্র’ ছবির মধ্য দিয়ে ভারতীয় ছবিতে প্রথম নেপথ্যে সঙ্গীতের প্রচলন হল। তিনি প্লেব্যাক করলেন কেন পরাণ হল বাঁধনহারা, গানটি জনপ্রিয়তাও পেল।
বাংলা ছবিতে শেষবারের মতো তাঁর গান শোনা গিয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের অরণ্যের দিনরাত্রি ছবিতেই। প্রিয় অতুলপ্রসাদের গানই গেয়েছিলেন, ‘সে ডাকে আমারে’।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen