রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

বন্দিদের অবসাদ কাটানোর জন্য সংশোধনাগারে ‘মিউজিক থেরাপি’-র ব্যবস্থা রাজ্য সরকারের

March 4, 2022 | 2 min read

ছবি: ফাইল চিত্র

সংশোধনাগারের চার দেওয়ালের মধ্যে ভাসবে গানের ভেলা! বন্দিরা ভেসে যাবেন সেই ভেলায়! না, এটা কোনও হেঁয়ালি বা ধাঁধা নয়। বন্দিদের মনমেজাজ ঠিক রাখতে এই ‘মিউজিক থেরাপির ব্যবস্থা করছে রাজ্য সরকারের কারাদপ্তর। জেলকর্তারা লক্ষ্য করেছেন, বন্দি জীবনে অনেকে ক্রমশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। মানসিক অসুস্থতার শিকার হচ্ছেন কেউ কেউ। সেই সমস্যা থেকে আসছে শারীরিক অসুস্থতা। তখন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা থেকে শুরু করে যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে কারাদপ্তরকেই। মানসিক অবসাদে আত্মঘাতীও হয়েছেন কেউ কেউ। এই ধরনের সমস্যা এড়াতে গানের ‘ওষুধ’ প্রয়োগ করার পথে হাঁটছে কারাদপ্তর।

জানা গিয়েছে, রাজ্যের সাতটি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার এবং জেলা ও মহকুমা উপ-সংশোধনাগারে এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। লাউড স্পিকার এবং স্বয়ংক্রিয় পরিচালন পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে এখন। সকাল ও বিকেলে এক ঘণ্টা করে বাজানো হবে গান। তালিকায় মূলত থাকবে পুরনো দিনের বাংলা ও হিন্দি গান। মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা, লতা, আরতি থেকে শুরু করে মহম্মদ রফি, কিশোরকুমার সহ আগেকার দিনের শিল্পীদের গানই মূলত বাজানো হবে। এখন এসব গান এক জায়গায় সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ চলছে জোরকদমে। আরও জানা গিয়েছে, জেলের লাইব্রেরিতেও থাকবে এই গান শোনার ব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার তো বটেই, জেলা ও মহকুমা উপ সংশোধনাগারগুলিতে রয়েছে ছোট-বড় লাইব্রেরি। সেখানে বন্দিরা খবরের কাগজ সহ নানা বইপত্র, ম্যাগাজিন পড়ার সুযোগ পান। সেখানে মৃদু শব্দে বাজবে হারানো দিনের গান। কারাদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন বিভিন্ন জেলে লাউড স্পিকার বসানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে।

বন্দিরা যাতে অবসাদগ্রস্ত না হয়ে পড়েন, তার জন্য এর আগেও একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে কারাদপ্তর। এই কারণে বিভিন্ন সময় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্বাধীনতা দিবস, নেতাজি জয়ন্তী, নববর্ষ উৎসব, এমনকী দুর্গাপুজোও করা হয় কারাগারের অভ্যন্তরে। অপরাধী বা সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের সমাজের মূলস্রোতে ফেরাতে তাঁদের দিয়ে অভিনয়, নৃত্য, অঙ্কনের মতো নানা নান্দনিক কাজকর্মও করানো হয়। সেই তালিকায় এবারের সংযোজন এই ‘মিউজিক থেরাপি’। কারাদপ্তর সূত্রে খবর, করোনাকালে বন্দিদের মানসিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। মহামারী পরিস্থিতির কারণে বিচারাধীন বন্দিদের মামলার শুনানির তারিখ বারবার পিছিয়েছে। সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিরা যেসব কাজ করতেন, তা ও বন্ধ ছিল করোনার সময়। কারণ সেই কাজের প্রশিক্ষক, সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা আসতে পারেননি। কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহও বন্ধ ছিল। কাজ বন্ধ থাকায় সেই বাবদ যে টাকা বন্দিরা বাড়িতে পাঠাতে পারতেন, তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে হতাশাগ্রস্ত হচ্ছিলেন বন্দিরা। এই ‘মিউজিক থেরাপি’ তাঁদের মনকে সতেজ রাখতে কতটা কার্যকরী হয়, সেটাই এখন দেখার।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#prisoners, #Music Therapy, #jail, #Prison

আরো দেখুন