দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

কৃষিতে আয় বেড়েছে বহুগুন, কাজ খুঁজতে অন্য রাজ্যে যাচ্ছেন না জঙ্গলমহলবাসী

April 2, 2022 | 2 min read

লালগড়ের রতনপুর। একদা মাওবাদীদের উপদ্রুত এলাকার ছবিটাই যেন বদলে গিয়েছে। নিজের বাগানে দাঁড়িয়ে ছোট ছোট কাজুগাছগুলিকে দেখিয়ে সেকথাই বলছিলেন পরিমল হাঁসদা। এক একর জমিতে কাজুগাছ বসিয়েছেন। এবারই প্রথম ফল ধরেছিল। প্রায় ৫০ কেজি কাজুবাদাম বিক্রি হয়েছে। কেজি পিছু দেড়শো টাকায় সব কিনে নিয়ে গিয়েছে পাইকাররা। এলাকাবাসী মোহন হাঁসদার মুখেও হাসির ঝিলিক। বলছিলেন, ‘গাছ যত বাড়বে, তত কাজু ফলবে ডালে ডালে। আয়ও হবে ভালো।’ শুধু কি কাজু? মোটেই না। গাছগাছালির ফাঁকে ফাঁকে যেটুকু জমি রয়েছে, সেখানেই এখন তিল, সরষের চাষ করছেন তাঁরা। জমির ধার ঘেঁষে বসানো হয়েছে সোনাঝুরি। বছর কুড়ি পার করলে সেই কাঠ বেচেও ভালো আয় হবে। অথচ বছর ছয়েক আগে সবই ছিল পতিত জমি। এখানে ফসল ফলানোই এখন ঘোরতর বাস্তব। আর তাই এলাকার বাসিন্দা পরিমল, সনাতন, রবিরা আর পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে পাড়ি দেন না ভিন রাজ্যে। এই গাছগুলোই তাঁদের বেঁধে রেখেছে সংসারে। শুধু রতনপুরেই ৫০০ একর জমিতে চাষ হচ্ছে কাজু, পেয়ারা আর আমের।  

বিনপুর দু’নম্বর ব্লকের কাঁকো গ্রাম। হাতে বোনা পুরুষ্টু করোলা এনে দেখাচ্ছিলেন চঞ্চল দণ্ডপাট। তিনি স্থানীয় ‘ঝাড়গ্রাম কৃষক প্রোডিউসার কোম্পানি’র পাঁচ বছরের সদস্য। তাঁর মতো আরও দেড় হাজার সদস্য রয়েছেন। চঞ্চলবাবুর আড়াই বিঘা জমিতে বছর দশেক আগে ২০ কুইন্টাল ধান হতো। দাম মিলত কুইন্টাল পিছু গড়ে হাজার টাকা। এখন দেড় বিঘা জমিতে ১৫ কুইন্টাল ধান ফলে। দাম মেলে ১ হাজার ৬০০ টাকা করে। বাকি এক বিঘায় বছরে এক লখের করোলা। চঞ্চলবাবুরা বলছিলেন, ‘এই জমিতে যে করোলা, বাঁধাকপি, ঢ্যাঁড়শ বা সূর্যমুখীর চাষ হতে পারে, কল্পনাও করিনি।’ স্থানীয় বাজারে ২২ টাকা কেজিতে করোলা বিক্রি হয়। সেখানে টাটানগর, বোকারো বা রাঁচিতে গিয়ে ৩০ টাকায় ফসল বেচে আসেন চঞ্চলবাবুরা। 

চাষির আয় দুই বা তিনগুণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। তার অধীনে পশ্চিমের জেলাগুলিতে কৃষি ও পশুপালন ভিত্তিক আয়ে জোর দিয়েছে রাজ্য। জঙ্গলমহলের বেলপাহাড়ী, শিলদার মতো সন্ত্রাস আর আতঙ্কের গ্রামগুলিতে তাই এখন অন্য বাতাস। হাল ধরেছে ‘নাবার্ড’ও। পশ্চিম মেদিনীপুর আর ঝাড়খণ্ডের দায়িত্বে থাকা নাবার্ডের ডিস্ট্রিক্ট ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার আকাশ শর্মার কথায়, ‘আমরা শুধু ঝাড়খণ্ডেই সাড়ে আট হাজার জমিতে ফসল ফলাতে সাহায্য করছি। সাড়ে সাত হাজার পরিবার উপকৃত হচ্ছে।’ কম খরচে সার, বীজ দেওয়া থেকে শুরু করে বাজার পাইয়ে দেওয়া বা আর্থিক সাহায্য করছে তারা। কৃষি ঋণ মিলছে। রাজ্য সরকারও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিতে ৪০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। সরকারি কৃষক বাজারে কম খরচে পণ্য নিয়ে যেতে পারছেন চাষিরা। আর তাই হাসছে জঙ্গলমহল।    এই মুহূর্তে

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Jangal Mahal, #Agriculture Department, #Income

আরো দেখুন