পেয়াঁজ সংরক্ষণ পরিকাঠামো গড়তে বাংলায় ২০০০ কোটি বিনিয়োগ
বছরের কোনও কোনও সময়ে যার আকাশছোঁয়া দামের জন্য প্রায় প্রতি বছরই বাঙালিকে হাহুতাশ করতে হয়, কামাল করতে চলেছে সেই পেঁয়াজ। রান্নাঘরের এই বিশেষ পণ্যটির সংরক্ষণ পরিকাঠামোয় ১৩৬৮ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে রাজ্য সরকারে কাছে। পেঁয়াজ শীর্ষে থাকলেও সব মিলিয়ে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা জাগিয়ে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে প্রায় দু’হাজার কোটি টাকার ‘নিশ্চিত’ লগ্নির প্রস্তাব এসেছে।
রাজ্যের গত শিল্প সম্মেলনে (বিজিবিএস) খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের সঙ্গে ‘মৌ’ বা সমঝোতাপত্র সই করেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রের অন্তত প্রায় ৫০টি সংস্থা। তাতে সম্মিলিত ভাবে প্রায় ১৯৫৭ কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের কর্তাদের ধারণা, এই বিনিয়োগ কার্যকর হলে সরাসরি অন্তত ৩৫ হাজার এবং পরোক্ষে কমবেশি ১.২৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
প্রায় দু’হাজার কোটি টাকার ওই বিনিয়োগ-প্রস্তাবের মধ্যে সব চেয়ে বড় অঙ্ক রয়েছে পেঁয়াজের জন্য। প্রায় দু’লক্ষ মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন পেঁয়াজ সংরক্ষণের ওই পরিকাঠামোয় ১৩৬৮ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাজ্যে এখন পেঁয়াজ চাষ বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। সংরক্ষণ পরিকাঠামো যথাযথ করা গেলে সেই চাষ আরও গুরুত্ব পাবে। দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে ১৪৭ কোটি, ডেয়ারি, বহুমুখী হিমঘর ইত্যাদি খাতে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে। এ ছাড়া আরও প্রায় ৪৭টি ক্ষেত্রে বেশ কয়েক কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করতে চেয়েছেন উদ্যোগপতিরা।
প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং উদ্যানপালনের গুরুত্ব যে-ভাবে বাড়ছে, তাতে বিনিয়োগকারীরা আরও আগ্রহী হচ্ছেন।’’ ওই কর্তা জানান, পেঁয়াজ চাষে স্বনির্ভর হতে পৃথক নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে দু’টি লক্ষ্য রয়েছে। ১) খরিফ মরসুমে পেঁয়াজ চাষের পরিমাণ বাড়ানো। তাতে চাহিদার সময়ে পেঁয়াজের জোগান স্বাভাবিক রাখা যাবে। ২) স্বল্পমূল্যে পেঁয়াজ সংরক্ষণের অনেক পরিকাঠামো তৈরি করা। তাতে পেঁয়াজের জোগান অতিরিক্ত তিন মাসের জন্য নিশ্চিত করা যাবে।
তৃণমূল সরকারের গত দু’টি পর্বে বড় এবং উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ তেমন একটা আসেনি। ফলে তৃতীয় তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের অগ্রাধিকারে স্বাভাবিক ভাবেই চলে এসেছে শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, গোটা দেশেই বড় শিল্পে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের মন্দা রয়েছে। ফলে তার আঁচ এড়াতে পারে না পশ্চিমবঙ্গও। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, চিরাচরিত কৃষির সমান্তরালে উদ্যানপালন এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রকে মজবুত করা গেলে বিনিয়োগ যেমন টানা যাবে, সুযোগ-সম্ভাবনা তৈরি হবে কর্মসংস্থানেরও।