UGC’র গাইডলাইনে আপত্তি, কেন্দ্রকে চিঠি রাজ্যের
স্নাতক-স্নাতকোত্তরে মূল্যায়ন নিয়ে ইউজিসি নিজেই যে স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না–তা মনে করিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে উচ্চশিক্ষা সচিব মনীশ জৈন কেন্দ্রকে কড়া চিঠি দিলেন।
রাজ্যের তরফে ফের স্পষ্ট ভাবেই জানানো হল, পড়ুয়াদের ক্যাম্পাসে এনে লিখিত পরীক্ষা নয়, রাজ্য চাইছে অন্য ভাবে মূল্যায়নের যে পন্থা তারা প্রকাশ করেছে, তাতেই অনড় থাকতে। ২৯ এপ্রিল ইউজিসির চিঠিতেও যে এই বিকল্প পন্থার কথাই বলা হয়েছিল, তা-ও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে সেই অবস্থান পরিবর্তন করে কেন্দ্রের তরফে রাজ্যগুলিকে জানানো হয়, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত বর্ষের পড়ুয়াদের সেপ্টেম্বরে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া বাধ্যতামূলক। এই পরিবর্তিত অবস্থানের সমালোচনা করে রাজ্য জানিয়েছে, এমন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। শিক্ষা কেন্দ্রের একার নয়,রাজ্যেরও বিষয়।
বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার মূল্যায়নের জন্য যে ‘৮০-২০’ পদ্ধতিই অনুসরণ করতে চায়, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিবকে চিঠি দিয়ে সেটা ফের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। চিঠির বয়ান চূড়ান্ত করার আগে উপাচার্যদের পরামর্শকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হওয়ায় পরীক্ষাগ্রহণ আপাতত অসম্ভব বলেই মনে করছে রাজ্য। ইতিমধ্যেই পাঞ্জাব, রাজস্থান, তামিলনাড়ু বা মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যও পরীক্ষার বিরুদ্ধেই তাদের অবস্থানের কথা বলেছে।
চিঠিতে পরীক্ষা না নিতে পারার পক্ষে তিনটি কারণের উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতির জন্য বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই কোয়ারান্টিন সেন্টার হয়ে রয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে উম্পুনে বিধ্বস্ত এলাকা। সে সব জায়গায় অফলাইনে পরীক্ষাগ্রহণ অসম্ভব। ইন্টারনেট সংযোগ অপর্যাপ্ত, ফলে অনলাইনে পরীক্ষাগ্রহণে বড় সংখ্যক পড়ুয়ার বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা। এ ছাড়া পরীক্ষা নিলে ফলপ্রকাশে দেরি হবে। তার জন্য এই সঙ্কটের সময়ে চাকরি হাত ছাড়া হবে বহু পড়ুয়ার।
বহু পড়ুয়া, অভিভাবক এবং শিক্ষক-শিক্ষাবিদও এই মুহূর্তে পরীক্ষা নেওয়ার বিপক্ষেই মত জানিয়েছেন রাজ্যকে। আইআইটি কানপুর, খড়্গপুর, রুরকি, মুম্বইয়ের মতো কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানও এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নিচ্ছে না বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন মনীশ জৈন। সব শেষে রাজ্যের আবেদন, এই অতিমারির পরিস্থিতি এবং পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ ও স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে যেন পরীক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করে ইউজিসি।
এরই মধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০-২০ ফর্মুলায় মূল্যায়ন সম্পন্ন করার সময়সূচি শেষ হতে চলেছে। আজ শুক্রবারের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরের ইন্টারনাল অ্যাসেসমেন্ট জমা করার কথা।কিন্তু বহু পড়ুয়ারই অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে বিভাগের তরফে কেউ যোগাযোগই করেননি।
তাঁরা জানতেও পারছেন না কী ভাবে তাঁদের মূল্যায়ন হবে। এখনও প্রকাশিত হয়নি স্নাতকোত্তরের তৃতীয় সেমেস্টারের ফলাফল। স্নাতকে কর্মাসের পঞ্চম সেমেস্টারের ফলাফলও আটকে।
আজ, শুক্রবার তা প্রকাশের কথ। স্নাতকোত্তর তৃতীয় সেমেস্টারের ফল প্রকাশিত হতে আরও দু’তিন দিন লাগতে পারে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।