মার্ক্স্ বিসর্জন? CPI(M)-এর দাপুটে সাংসদ লক্ষণ এবার প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি!
সত্তরের দশক। বাংলায় চলছে নকশালবাড়ি আন্দোলন। চারু মজুমদার, জঙ্গল সাঁওতাল, কানু সান্যালদের সামলাতে সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের কংগ্রেস সরকার রুনু গুহ নিয়োগীর মতো দুঁদে পুলিশ কর্তাদের দিয়ে নকশালদমন চালাচ্ছিলেন এই পশ্চিমবঙ্গে। অভিযোগ উঠেছিল, আন্দোলন ভাঙতে চলেছিল অসংখ্য এনকাউন্টার। ঝড়ে গেছিল শ’য়ে শ’য়ে বামমনস্ক সবুজ প্রাণ। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বোস তখন SFI-এর প্রথম সর্বভারতীয় সম্পাদক থেকে রাজ্য কমিটির সদস্য হয়েছেন। কলেজ স্ক্যোয়ারে সরকারবিরোধী আন্দোলন চালাচ্ছেন। বিমান বোসদের প্রিয়পাত্র হলদিয়ার হর্তা-কর্তা-বিধাতা, নন্দীগ্রাম গণহত্যার পেছনে যার আসল হাত আছে বলে অভিযোগ, সেই লক্ষণ শেঠ এবার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন। হাত মেলালেন সত্তরের সেই রক্তাক্ত ‘হাত’-এর সঙ্গে।
গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি করা হল প্রাক্তন সিপিআইএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠকে, প্রদেশ কংগ্রেস তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে; প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীর নির্দেশেই প্রাক্তন বাম সাংসদকে সহ-সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক আন্দোলন থেকে উঠে এসেছিলেন লক্ষণ শেঠ। বাম আমলে পূর্ব মেদিনীপুরের দাপুটে নেতা হিসেবে লক্ষণ শেঠের পরিচিতি ছিল। নন্দীগ্রাম আন্দোলনকারীদের উপর হামলার অভিযোগে তৃণমূল আমলে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন তিনি। ১৯৮২-৯১ সাল পর্যন্ত পরপর তিনবার সুতাহাটা কেন্দ্র থেকে বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়ে বিধায়ক হন লক্ষ্মণ। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত তিনবার সাংসদও হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি। ‘ভারত নির্মাণ মঞ্চ’ নামে একটি দলও তৈরি করেন। ২০১৬ সালে বিজেপিতে যোগ দেন লক্ষ্মণ। বিজেপিও তাকে বহিষ্কার করেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসে যোগদান করেন লক্ষ্মণ। যদিও কংগ্রেসের অন্দরে সে সময় লক্ষণের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ক্ষোভের আগুন জ্বলেছিল।
প্রসঙ্গত, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটেই ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন লক্ষ্মণ। কিন্তু জিততে পারেননি। এরপর কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। চলতি বছরে একাধিকবার লক্ষণের তৃণমূলে যোগদানের জল্পনা শোনা গিয়েছিল। প্রকাশ্যে তিনি নিজেও তৃণমূলে যোগদানের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।