গা ছমছমে পরিবেশ, রইল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু ভূতের মন্দিরের কিসসা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ভূতেরও আবার দেবতা হয়? শুনতে অবাক লাগলেও বিচিত্রময় বাংলায় এমনই বহু লৌকিক দেবতা আছেন যা ভূতের দেবতা বা ভূতবাবা হিসেবে পূজিত হন। অনেক লৌকিক উৎসবে ভূতের আলপনা আঁকা হয়। ভূতের পালকি চড়ে ভূত দম্পতি তাদের উত্তরপুরুষের তিনি আসে। মহাদেব – ভূতনাথ, ভূতেশ, ভূতপতি, ভূতেশ্বর ইত্যাদি শুরুতে ভূত শব্দে বিভিন্ন নামে পরিচিত। তাই ভূতবাবা আদপে মহাদেবেরই অংশ।
রইল বাংলার কিছু ভূতের মন্দিরের হদিস
ভূতবাবা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার এক বিশিষ্ট লোকদেবতা হলেন ভূতবাবা বা ভূতেশ্বরবাবা। আদিগঙ্গার তীরে শুলিপোতা কৃষ্ণমোহন রেলস্টেশনের রেলগেটের কাছে ভূতবাবা থানটি অবস্থিত। এই অঞ্চলের লোকেরা এই থানকে ছোটকাছারী বলে ডাকেন। অন্যদিকে বিষ্ণুপুরে থানার অন্তর্গত ঝিকুরবেড়িয়া গ্রামে যে থানটি রয়েছে সেটি ভক্তদের কাছে বড়কাছারী নামে পরিচিত। জনশ্রুতি রয়েছে যে, আদিতে কোন মূর্তি বা দেবতার মূর্তি ছিল না। এখন ভূতবাবার যে মূর্তিটি রয়েছে তা মর্মর মূর্তি, মৃত্তিকা নির্মিত। এই মূর্তিটি গঠনশৈলী পরিকল্পনা কার এবং কোথা থেকে তা সংগৃহীত সে বিষয় কিছুই জানা যায় না। এখানে একটি শ্যাওড়া গাছকেই ভূতবাবার প্রতীক হিসাবে পুজো করা হত। স্থানীরা এই গাছকে বলে দুধে–আশ–শ্যাওড়া।
ভূতবাবা সিংহাসনের উপর বামপদ ঝুলিয়ে বসে আছেন। দক্ষিণপদ বাম জানু উপর উপবিষ্ট। হাতে গলায় রুদ্রাক্ষ দেখা যায়। বিস্তৃত মোটা গোঁফ। দেবতার দুই হাত। এক হাতে গাঁজার কলকে। মাথায় চুল ও সৌম্যমুখ। ভূতবাবার ডানদিকে সহচর, বামদিকে নৃত্যরত আরেক সহচরী চোখে পড়ে।
অতীতে এখানে কোন মূর্তি পুজো হত না। ভক্তরা এই গাছের গোড়ায় মাটি ও শিকড় ঔষধ রূপে ব্যবহার করে। মেলার সময় এইগাছের শিকড় তুলে বাচ্চাদের মাদুলি দেওয়া হয়। ভক্তদের বিশ্বাস এই মাদুলি পরলে শিশুদের ভয় ও রোগ নিরাময় হয়ে যাবে।
বড়কাছারির মন্দির- বহু বছর ধরে এখানে মহাদেব পূজিত হয়ে আসছেন। একটা প্রাচীন অশ্বত্থ গাছকে ঘিরে রয়েছে মন্দির। পাশে তারকেশ্বরের মতো দুধপুকুর। শনি ও মঙ্গলবার ভক্তসমাগম হয়, মূলত সন্তান লাভের আশায় এখানে মানত করা হয়। মানত পূরণ হলে গোপাল ঠাকুরের মূর্তি দিয়ে পুজো দেওয়া হয়। ভূত বাবা খুবই জাগ্রত দেবতা বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস।
ভূতবাবার বাত্সরিক পুজো হয় ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষে যে কোনও শনিবার ধরে। সেই দিন এখানে মেলা বসে। এছাড়াও প্রতি সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার ১২ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত বিশেষ পুজো হয়। বাবার পুজোর নৈবেদ্য দেওয়া হয় শোলমাছ , মদ, গাঁজা, সিদ্ধি, বাতাসা ও ফলমূল। অনেকে ভূতবাবার শ্যাওড়া গাছতলায় মদ, গাঁজা শোলমাছ দিয়ে পুজো দেন।
সুন্দরবন অঞ্চলের উপাস্য জল, জঙ্গল, বন্যপ্রাণী, ভূত-প্রেতের দেবতা দক্ষিণ রায়। তিনি বিশেষ করে বাঘের দেবতা। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ধপধপিতে রয়েছে দক্ষিণ রায়ের বিরাট মন্দির।