পঞ্চায়েতের পুকুরে বেআইনি নির্মাণকাজ! অভিযুক্ত বিজেপি
বিজেপির মালদার জেলা পরিষদ সদস্য এবং বিজেপি পরিচালিত গাজোল-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মদতে পঞ্চায়েতের পুকুরে বেআইনিভাবে নির্মাণকাজ শুরুর অভিযোগ উঠল। এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকে ঘিরে তীব্র ক্ষোভ ঘনীভূত হচ্ছে গাজোলের ধর্মতলা ঘোষপাড়া এলাকায়।
অভিযোগকারীদের দাবি, বিজেপির জেলা পরিষদ সদস্য সাগরিকা সরকারের মদতে নির্মাণ কাজ চালাচ্ছেন ওই ব্যক্তি। এমনকি কাজে বাধা দিতে গেলে এলাকাবাসীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই নেত্রীর বিরুদ্ধে।যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজেপি জেলা পরিষদ সদস্য সাগরিকা সরকার। ঘটনা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন গাজোল বিধানসভার বিধায়িকা দিপালী বিশ্বাস। তিনি বলেছেন, প্রশাসনকে বলবো পুরো ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যে ক্ষমতায় না থেকেও যেভাবে বিজেপি চারিদিকে জোর-জুলুম চালাচ্ছে তাতে তাদের স্বরূপ প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে। মানুষ সমস্ত বিষয়ের উপর নজর রাখছে। তাঁরা প্রকৃত সময়ে জবাব দেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
এই ঘটনা গাজোল-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ধর্মতলা ঘোষপাড়া এলাকার। এই এলাকায় একটি সরকারি পুকুর রয়েছে। পুকুরের জেএল নম্বর ৮৪ এবং দাগ নম্বর ২১। সরকারিভাবে সেই পুকুরের লিজ পেয়েছে স্থানীয় মহাতপা মহিলা সমিতি। ৭১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ৩১/০৩/২০২৩ সাল পর্যন্ত পুকুরের লিজ পেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু হঠাৎ করেই তাঁরা খেয়াল করেন, সেই পুকুরের ধার এবং পুকুরের ভেতরের বেশ কিছু অংশ বেআইনিভাবে দখল করে নির্মাণকার্য চালাচ্ছে মেঘলাল মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি। পুকুরে জায়গায় তোলা হচ্ছে ঘর। স্থানীয় মহিলা সমিতির সদস্যরা সেই কাজে বাধা দেন। লিখিত অভিযোগ জানান পঞ্চায়েত দপ্তরে। কিন্তু কাজে বাধা দিতে গিয়েই মিলেছে হুমকি এমনটাই জানিয়েছেন অভিযোগকারীরা।
মহাতপা মহিলা সমিতির সদস্য দীপিকা চক্রবর্তী, পূর্ণিমা সরকার জানালেন, পঞ্চায়েত থেকে লিজ নিয়ে তাঁরা এই পুকুরে মাছ চাষ করছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তাঁরা দেখছেন জেলা পরিষদ সদস্য সাগরিকা সরকারের মদতে পুকুরে চলছে বেআইনি নির্মাণকার্য। আর তাতে বাধা দিতে গেলে মিলেছে হুমকি। তাই এলাকার বাসিন্দারা সবাই মিলে গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে অভিযোগ দায়ের করেছেন।যদিও গ্রামবাসীদের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা পরিষদ সদস্য সাগরিকা সরকার। তাঁর দাবি, আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যে।
তিনি জানান, দীর্ঘদিন আগে ওই জায়গাটি এলাকার উজ্জ্বল ঘোষ নামে এক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন হওয়ায় সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে ওই জায়গাটি তিনি একজনকে দিয়েছেন। এরপর গ্রামবাসীরা মীমাংসা করে ওই ব্যক্তিকে পুকুরের ধারে থাকতে দিয়েছেন। এরপর তিনি সেখানে নির্মাণকার্য চালাচ্ছেন। এমনকি পঞ্চায়েতেও মীমাংসা হয় এই বিষয় নিয়ে। এতে তাঁর কোনও মদত নেই। আর তিনি পুকুরে কোনও নির্মাণ কাজ করছেন না, ঘর বানাচ্ছেন পুকুরের ধারে।
যদিও সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে পুকুরের ভিতর খুঁটি পুঁতে চলছে নির্মাণ কাজ। বিজেপি পরিচালিত গাজোল ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিন্দু পুঝর মাল এই বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছুই জানাতে পারেননি। আমতা আমতা করে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁর কাছে অভিযোগ এসেছিল। তিনি নোটিশ করে দুই পক্ষকে ডেকে মীমাংসা করেছেন। কিন্তু কী মীমাংসা হয়েছে,পঞ্চায়েতের পুকুরে নির্মাণ কাজ চালানোর বিষয়ে তিনি কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন, নির্মাণ কাজ বন্ধ করার জন্য কোনও আদেশ দিয়েছেন কিনা এইসব প্রশ্নের কোনও উত্তর তিনি দিতে পারেননি।
আর এইসব প্রশ্নের উত্তর না পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য। প্রশ্ন উঠছে, সরকারি জায়গা বিলিবণ্টনের জন্য প্রধান কে কী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি কী পারেন এভাবে জায়গা বিলিবণ্টন করতে। আর এই জন্যেই সরকারি খাস জমি কাদের মদতে হাতবদল হচ্ছে তা নিয়েও দেখা দিয়েছে বড়সড় প্রশ্ন চিহ্ন। এদিকে পুরো ঘটনা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছে গাজোল বিধানসভার বিধায়ক দিপালী বিশ্বাস। তিনি জানান, সরকারি জায়গা কোনওভাবেই কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না।
তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনকে বলব সঠিক তদন্ত করে যাতে সমস্যার সমাধান করা হয়। তবে এলাকাবাসীরা জেলা পরিষদ সদস্যের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। একজন জেলা পরিষদ সদস্য হয়ে সাধারণ মানুষকে হুমকি দিচ্ছেন তিনি। এরা যদি রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তাহলে সাধারণ মানুষের উপরে কী পরিমাণ অত্যাচার নেমে আসতে পারে, এই ঘটনা তারই প্রমাণ। সাধারণ মানুষ সবকিছু দেখছেন, মানুষই এর জবাব দেবেন। প্রশাসনকে বলব ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
সব মিলিয়ে সরকারি জায়গায় নির্মাণকার্য নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে ওই এলাকার পরিবেশ। এখন দেখার শেষ পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েত বা প্রশাসন এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।