কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

চৌকিতে দিন গুজরান, কলকাতার প্রাণকেন্দ্র যেন একালের ‘বারো ঘর এক উঠোন’

February 18, 2024 | < 1 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: কলকাতা এক বিচিত্র শহর, ত্রিশ টাকার সবজি ভাত থেকে তিন হাজারের থালি, এখানে যে কী নেই তার ইয়ত্তা করা দায়। ‘রুটি ও কাপড়া’র সন্ধানে এ শহরে ছুটে এসেছিলেন বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশের মানুষজন। সাধারণ পেশায় নিযুক্ত হয়ে পরিবারের অন্ন সংস্থান হল আর তারা রয়ে গেলেন শহরে। বড়বাজার চত্বরের মতো কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে গেলে দেখবেন, সার বেঁধে রয়েছে চৌকি। খাটিয়াও বলতে পারেন। দেখবেন তাতে জনা বারো মধ্য বয়সী পুরুষ ঘুমাচ্ছেন।

একদিকে ভাঙা ফুটপাথ অন্যদিকে রাস্তা, স্টেশনারী দোকান, সাইকেলের দোকান, টিউব এবং টায়ার বিক্রির দোকান, স্ট্রিট ফুডের দোকান, রেস্তোরাঁ, গাড়ি, ভ্যান, বাইক, টানা রিকশা, ছোট ও মাঝারি আকারের লরি, তার মাঝেই জিরিয়ে নেওয়া। সকাল ছয়টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত, কাজের ফাঁকে বিশ্রাম। কথায় বলে না, যদি হও সুজন তেঁতুল পাতায় ন’জন তেমনই ব্যাপার।

নির্মীয়মান বিল্ডিংয়ের নীচে তাঁদের দেখা মিলবে। এমন এক বিল্ডিং, যার নির্মাণ কখনও শেষ হবে না। তার মধ্যেই চৌকি পেতে দিন গুজরান। কেউ হয়ত লরি চালান, কেউ রান্না করেন, রিকশা চালান, বড়বাজারের দোকানদার, ডেলিভারি ম্যান, কিন্তু কাজের শেষ বিশ্রাম নেন। খাটগুলোর মালিকানা আবার সময়তে সময়তে বদলে যায়। মালিকানা স্থানান্তরিত হয় নির্বিবাদে। প্রয়োজন অনুসারে ফের পরিবর্তিত হয়। কখনও কখনও, একই সঙ্গে তিনজন মালিক এসে জড়ো হন। এক সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়েন। এতটাই ক্লান্তি থাকে, যে অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়া, সেই অবস্থাতেই জেগে ওঠা। ১৫-২০ জনের জন্য একটি সিলিং ফ্যান। আকাশ পরিষ্কার থাকলে, চৌকিগুলো ফুটপাথের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। এটাই তাঁদের ঠিকানা, ইঁদুর, ছুঁচো তাঁদের সহ-আবাসিক। সঙ্গে পায়রা, কুকুররাও থাকে। সকাল হতেই সব ভ্যানিস! যে যার রুজি-রুটির খোঁজে।

তারপর বেলা পড়তেই ফেরা। সবাই মিলে রান্নার জোগাড়, যে যার ‘দেশী বেশে’ দিনের অবসান। রাস্তার কলের জলেই যাবতীয় কাজ সারা। অন্যের ফেলে দেওয়া জিনিসেই সংসার, কারও ফেলে দেওয়া সোফা, ভাঙা চেয়ার, আলমারি ইত্যাদি। রয়েছে ঠাকুরও -শেরওয়ালি, শিব-পার্বতী, হনুমানজি, গণেশ, তারা মা, রাধা কৃষ্ণ, লক্ষ্মী-নারায়ণ, সবাই ঠাঁই পেয়েছে দেওয়ালে। পরিবার থাকে দেশে (গ্রামের বাড়িতে), এখানের সবাই মিলেই হয়ে উঠেছে একটি পরিবার।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kolkata, #burrabazar, #Bara Bazar

আরো দেখুন