সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যকর কেন?
যে কোনও উন্নত দেশে সাইকেলের জন্য পৃথক রাস্তা থাকে। সেখানে গাড়ি-ঘোড়া দূর অস্ত, সাধারণ পথচারী উঠলেও জরিমানা দিতে হয়। ভারতের সব শহরে নানা কারণে এই ধরনের আলাদা রাস্তা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তবে করোনা নাগরিক জীবনে সাইকেলের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। বহু মানুষ দু’চাকার যানটিকেই একমাত্র বিশ্বস্ত বাহন করে তুলেছে। এতে তাঁদের শারীরিক ও মানসিক লাভই হয়েছে। দেখে নেওয়া যাক কি লাভ হয়েছে?
শারীরিক লাভ
ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি: সাইকেল চালালে ফুসফুসে বেশি পরিমাণে বাতাস প্রবেশের দরকার পড়ে। কারণ সাইকেল চালানোর জন্য বেশি মাত্রায় অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। তাই নিয়মিত সাইকেল চালালে ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: নিয়মিত সাইকেল চালালে ডায়েটে বেশ কিছু পরিবর্তন আনার দরকার পড়ে। প্রোটিনজাতীয় খাদ্যগ্রহণ বাড়াতে হয়। শাকসব্জি বেশি খেতে হয়। সঠিক খাদ্যগ্রহণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। তাছাড়া রক্তে কিছু অলস শ্বেত কণিকা থাকে। সাইক্লিং-এ সেগুলি উজ্জীবিত হয়েও ইমিউনিটি বাড়ায়।
শক্তিশালী হার্ট: প্রতিদিন আধ থেকে এক ঘণ্টা সাইকেল চালালে হার্টের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা বাড়ে ও হার্টের রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে।
স্ট্রোক প্রতিরোধ: নিয়মিত সাইকেল চালালে ব্রেনের বিভিন্ন রক্তবাহী নালীতেও রক্তসঞ্চালনের হার বাড়ে। স্ট্রোকের আশঙ্কা কমে।
ভুলে যাওয়া রোগ: অ্যালঝাইমার্স, ডিমেনশিয়ার মতো স্মৃতিনাশকারী রোগের আশঙ্কাও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ: সাইকেল চালালে গ্লুকোজ মেটাবলিজমের প্রভূত উন্নতি হয়। এভাবে সুগার আটকানোও সম্ভব। ডায়াবেটিসে আক্রান্তরাও সাইকেল চালিয়ে সহজে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
মানসিক লাভ
মন খারাপ ও অবসাদ: নিয়মিত সাইকেল চালালে অবসাদ দূর করা সম্ভব। দেখা গিয়েছে, লকডাউনের বিপর্যয়েও যাঁরা সাইকেল চালিয়ে অফিস গিয়েছেন, তাঁদের দুশ্চিন্তা, অবসাদ কম হয়েছে।
আত্মবিশ্বাস ও মনোযোগ বাড়ায়: সাইকেল চালাতে রাস্তার উপর নজর রাখতে হয় একটানা। মনোযোগ ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
অনিদ্রার সমস্যায়: জড়ভরত হলে রাতে যে ঘুম আসে না, তা নিশ্চয় অনেকে লকডাউনে টের পেয়েছেন। অথচ প্রতিদিন মাত্র ৩০ থেকে ৬০ মিনিট সাইকেল চালালেই ফিটনেস ফিরে আসে। অনিদ্রার সমস্যাও দূর করা যায়।
সাইকেল চালানোর অবশ্য প্রয়োজনীয় শর্ত
- যে কোনও বয়সে চালানো যেতে পারে। ফিট থাকলে আশি বছর বয়সের পরেও চালানো যায়।
- স্বাভাবিক গতিতে সাইকেল চালানোর সময় ত্রিস্তরীয় মাস্ক পরুন।
- দীর্ঘসময় রোদে সাইকেল চালাতে হলে এক বোতল জলে এক প্যাকেট ওআরএস গুলে সঙ্গে রাখুন। শ্রান্ত বোধ করলে পান করুন।
- ধূমপানের অভ্যেস থাকলে এখনই ছাড়ুন।
- সাইক্লিং-এর সময় মোবাইলে কথা বলবেন না।
শেষ কথা: বায়ু দূষণ কমাতে পারে সাইকেল। কমাতে পরে গ্রিন হাউজ এফেক্ট। পেট্রোল-ডিজেল চালিত নানা পরিবহণে যেসব মানুষ কাজে যান, তাঁদের ৩০ শতাংশও পরিবহণের জন্য সাইকেল ব্যবহার করলে হু হু করে বায়ুদূষণ কমবে!