আয়ুর্বেদ মতে সুস্থ জীবন ধারণের প্রণালীগুলি কী? দেখে নিন
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আয়ুর্বেদ শব্দের অর্থ জীবন সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান। ভারতীয় উপমহাদেশে আয়ুর্বেদ হল একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি। এই চিকিৎসা পদ্ধতি শুধুমাত্র রোগের চিকিৎসা নয়, বরং সুস্থতা বজায় রাখার উপর জোর দেয়। আয়ুর্বেদ মতে, কোনও রোগের চিকিৎসার জন্য শুধু শারীরিক সমস্যা নয়, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক দিকগুলোও বিবেচনা করা হয়।
দেখে নিন আয়ুর্বেদের মূল স্তম্ভগুলি কী কী?
১. নিদান পরিবর্জন:
আয়ুর্বেদের মূল স্তম্ভ নিদান পরিবর্জন। আয়ুর্বেদ চিকিৎসার অভ্রান্ত সিদ্ধান্ত। কারণ নিদান গ্রহণের পাশাপাশি কোনভাবেই সুচিকিৎসা হতে পারে না। এই জন্যেই অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির দৃষ্টিকোণ থেকে আয়ুর্বেদকে আলাদা করে তুলেছে।
২. মন্দাগ্নি সকল রোগের মূল কারণ
‘রোগা সর্বাদপি মন্দাগ্নি…’ অর্থাৎ সর্ব প্রকার রোগের মূল ও প্রাথমিক কারণ হচ্ছে মন্দাগ্নি। বর্তমানে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় খাদ্যাভাস থেকে অনেক রোগের বাসা তৈরি হয়। স্ট্রিট ফুড হোক রেস্টুরেন্টে অতিরিক্ত তেল মশলা জাতীয় খাবার গ্রহণে কুপ্রভাব পড়ে। ফলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। ফলে আয়ুর্বেদ মতে সুস্থতা বজায় রাখতে অগ্নির সাম্যতা জরুরি।
৩. কতটা, কীভাবে কখন জল পান:
অজীর্ণ রোগের ক্ষেত্রে জল পান করা হল প্রধান ওষুধ। খাওয়ার জীর্ণ হাওয়ার পর জল পান শরীরে বল প্রদানকারক। খাদ্য গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে জলপান করা বিষের সমতুল্য ক্ষতিকর।
৪. বিরুদ্ধ আহার ও দুরারোগ্য রোগব্যাধি:
- দুধের সাথে কাঠাল,মাছ, লবন, খিচুড়ি, মুলা, জাম, ছাতু, তরমুজ ইত্যাদি।
- দইয়ের সঙ্গে ক্ষীর, পনীর, দুধ, গরম পদার্থ, কলা ইত্যাদি।
- ঘি ও মধু ঘন ঘন সেবন উচিত নয়।
- তামার পাত্রে ঘি, গরম মধু সেবন, রাতে ছাতু খাওয়া, পায়েস ও ঘোল একসঙ্গে সেবন, পুঁইশাকের সঙ্গে তিল ইত্যাদি খাদ্যগুলো একসাথে আহার করা উচিত নয়।
- চরক সংহিতা মতে বিরুদ্ধ আহার সেবন ত্বকের সমস্যা, পেটের বিভিন্ন রোগ, জ্বর, বন্ধ্যাত্ব, উন্মাদ, অন্ধত্ব ইত্যাদি হতে পারে।
৫. নিত্য সেবনীয় পথ্য-অপথ্য:
- আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের চরক সংহিতা অনুযায়ী,শালি চাল, মুগ, সৈন্ধব লবণ, আমলকী, যব, দুধ, ঘি, *মধু, রুক্ষ এলাকার প্রাণীর মাংস ইত্যাদি নিত্য সেবনীয় দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত।
- মাছ, দই, মাষকলাই ইত্যাদির নিত্য সেবন শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।
- অধিক গরম, টক ও নোনতা জাতীয় খাদ্যদ্রব্য, শীতল এবং গুরু দ্রব্য, তেলে পাক করা পুরি, মালপুয়া, শাক সেবন। দিনে ঘুমানো ,অত্যধিক শারীরিক পরিশ্রম এবং যে কোনও নেশা পেটের রোগের ক্ষেত্রে বর্জনীয়।
৬. অধ্যসন অর্থাৎ খিদে না পেলেও খাওয়া:
বর্তমানে ব্যস্ত জীবনযাত্রায় খিদের সময় না খাওয়া অথবা আগের খাওয়া হজম হওয়ার পূর্বেই খাওয়া, এই দুটোই ক্ষতিকর। আয়ুর্বেদ মতে, খিদে পেলে তবেই খাবার খাওয়া উচিত। সর্বদা ত্রিবিধ কুক্ষী বিমান অনুযায়ী অর্থাৎ পেটের একভাগ খাদ্যদ্রব্য যেমন, ভাত, রুটি, শাক ইত্যাদি একভাগ তরল পদার্থ যেমন, জল, দুধ ইত্যাদি এবং একভাগ ফাঁকা রেখে খাওয়া উচিত।
৭. অধারণীয় বেগ ধরে না রাখা ও রোগ সমূহ:
দেহে অজানা রোগের মূলে রয়েছে অধারণীয় বেগ। অধারণীয় বেগ জনিত রোগগুলি হল, গুল্ম, উদরশূল, শিররোগ, উদ্গার, অস্মরী (পাথুরি রোগ), অঙ্গ বেদনা, মূত্রাশয়, মূত্রমার্গ ও বৃক্কে শৃল, শিরশূল, কর্ণরোগ, অদি’ত, ঘাড়ে ব্যথা, কাশি বৃদ্ধি, শ্বাসরোগ, অরুচি, হৃদরোগ, মুখাশোষ, বধিরতা, অরুচি, গ্লানি, কৃশতা, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা ইত্যাদি।
আয়ুর্বেদ মতে ১৩ টি বেগ ধারণ করতে সর্বদা নিষেধ করা হয়েছে। এই ১৩ টি বেগ হল— অপনবায়ু বেগ, মল বেগ, মূত্র বেগ, হাঁচিবেগ, তৃষ্ণাবেগ, ক্ষুধা বেগ, নিদ্রা বেগ, কাস বেগ, শ্রমজনিত শ্বাসবেগ, জৃম্ভা (হাই তোলা) বেগ, কান্না বেগ, বমনবেগ, শুক্র বেগ।
৮.দিনচর্যা ও ঋতুচর্যা:
আয়ুর্বেদ মতে, প্রত্যেক ঋতুতে ঋতুভিত্তিক বিধিনিষেধ পালনকে বলা হয় ঋতুচর্যা। রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলা, নিদান বর্জনের সঙ্গে রোগ গোড়া থেকে সারানো, সুনির্দিষ্ট জীবনশৈলীতে পথ্য সেবন, অহিতকারক খাদ্যদ্রব্য বর্জন করা আয়ুর্বেদের মূল লক্ষ্য।