‘অন্যরকম’ বাংলা গানের এক অন্যতম স্বর প্রতুল মুখোপাধ্যায়

প্রতুল মুখোপাধ্যায় ১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন।

February 15, 2025 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

প্রতুল মুখোপাধ্যায় (২৫.০৬.১৯৪২-১৫.০২.২৫)

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: প্রতুল মুখোপাধ্যায় ১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক ও মা বাণী মুখোপাধ্যায় ছিলেন গৃহিণী। দেশবিভাগের সময় তিনি পরিবারের সাথে এপার বাংলায় চলে আসেন। শৈশব কেটেছে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুচুড়ায়।

ছোটবেলা থেকেই তিনি নিজের লেখা ও সুরে গান গাইতেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে কবি মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতায় প্রথম সুরারোপ করেন। নিজের লেখা গানের পাশাপাশি ছড়া, কবিতায়ও তিনি বিভিন্ন সময় সুরারোপ করেছেন।

তবে তাঁর গাওয়া গান ‘আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই’… এক অলৌকিক বিভা ছড়িয়ে মিশে যায় আপামর বাঙালি শ্রোতার শরীরে। কেবল ঠোঁট বা কণ্ঠ নয়, তাঁর গোটা শরীর যেন ভেসে যেত গানের আলোয়।

গত শতকের নয়ের দশকে সুমন চট্টোপাধ্যায় গাইলেন ‘তোমাকে চাই’। উথালপাতাল হয়ে গেল বাংলার শ্রোতৃসমাজ। এর প্রায় একদশক আগেই কিন্তু এসে গিয়েছেন প্রতুল। সেই অর্থে কোনও প্রশিক্ষণ নেই। তুলনায় কিছুটা সরু, রিনরিনে কণ্ঠস্বর। গানের সময় সঙ্গে থাকে না কোনও যন্ত্র। কেবলই গলার মডিউলেশনকে ব্যবহার করে আশ্চর্য ‘এফেক্ট’ তৈরি করে নিতেন। প্রয়োজনে তুড়ি দিতেন। ধীরে ধীরে ওই নয়ের দশকের সময়কাল তাঁকেও পৌঁছে দিল শ্রোতার কাছে, ক্যাসেটবন্দি করে। তিনিও হয়ে উঠলেন ‘অন্যরকম’ বাংলা গানের এক অন্যতম স্বর। বহু কিছু থেকেই তিনি গানের রশদ সংগ্রহ করেছেন। মন দিয়ে শুনেছেন গান। খুব অল্প বয়স থেকেই বুঝেছিলেন, কণ্ঠে রয়েছে সুরের জলছাপ। তবু প্রথম প্রথম নিজে গান লেখার চেষ্টা করেননি। কবিতা-ছড়ায় সুর বসিয়ে গেয়েছেন। কবিতার ধ্বনিমগ্নতা তাঁকে স্পর্শ করেছিল তখনই। ধীরে ধীরে গান লেখাও শুরু হয়। সারা জীবন গান তাঁকে ঘিরে রেখেছে। পেশার তাগিদে কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। তবু গানকে সঙ্গে করেই এগিয়ে গিয়েছে জীবন।

‘আনমনে গান মনে’ নামের একটি রচনায় প্রতুল লিখেছিলেন, ‘একটা গান ‘হয়ে উঠেছে’ কিনা সেটা অনুভব করা যায়।’ এই অনুভবের জায়গাতেই সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন তিনি। ওই একই রচনায় পাই ‘… মাউন্ট আবুর দিলওয়ারা মন্দিরের মর্মরভাস্কর্য দেখলে বোঝা যায় শিক্ষা ও সাধনা কোন স্তরে গেলে এমন সৃষ্টি সম্ভব। এখানে বাইরের আড়ম্বর একেবারেই নেই। কিন্তু দেখলে চোখ ফেরানো দুঃসাধ্য।’ এভাবেই নিজের মনের ভিতরে ‘বাইরের আড়ম্বর’কে সরিয়ে রেখে গানকে স্পর্শ করেছেন প্রতুল। বিশ্বাস রেখেছেন পরিবেশনে। ‘পরিবেশন বা প্রেজেন্টেশন আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। এটার অভাবে বা দোষে অনেক মহান শিল্পসৃষ্টি মানুষের কাছে গ্রহণীয় হতে চায় না।’ প্রতুলের গানে এই পরিবেশন কোন স্তরে পৌঁছত, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইউটিউব দেখে জানতে পারবে। গোটা শরীর দিয়ে গানটিকে গড়ে তুলতেন তিনি। যেন কোনও স্থাপত্য। তিলে তিলে তা তৈরি হত কণ্ঠ ও শরীরী ভাষার সমন্বয়ে।
বাংলা ভাষায় গণসঙ্গীতের অন্যতম সেরা কণ্ঠ তিনি। ‘চ্যাপলিন’-এর মতো গান শ্রোতার হৃদয়ে তাঁকে চিরকালীন করে রেখেছে। আরও বহু উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের ম্যাগনাম ওপাস বাছতে বললে বোধহয় বিতর্কও হবে না, যদি এক নম্বরে ‘আমি বাংলায় গান গাই’কে রাখা যায়। কিছু মানুষ থাকে, যাঁদের সৃষ্টি তাঁদের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে তাঁদের অনন্তের বাসিন্দা করে তোলেন জীবদ্দশাতেই। প্রতুল তেমনই একজন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen