সবজি চাষে জোর, স্বনির্ভর গোষ্ঠিকে আর্থিক অনুদান রাজ্যের
অসময়ের সব্জি চাষে লক্ষ্মীলাভ বেশি। বাজারে তুলনামূলক বেশি দামে বিক্রি হয় সেই সব্জি। চাষিদের আয় বাড়াতে এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাচ্ছে পঞ্চায়েত দপ্তর। সে ক্ষেত্রে ‘ঝুলন্ত বীজতলা’ তৈরিতে জোর দিচ্ছে তারা। এর জন্য পরিকাঠামো গঠনে আর্থিক সহযোগিতাও পাবেন কৃষকরা। প্রকল্প রূপায়ণে মূলত মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে পাখির চোখ করছে রাজ্য। সূত্রের খবর, গোষ্ঠীর সদস্যরা অসময়ের সব্জি চাষে উদ্যোগী হলে তাঁরা তিন থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক অনুদান পাবেন। ফলে বাড়িতে বসেই গ্রামের মহিলারা ভালো উপার্জনের দিশা পাবেন বলে মনে করছেন সরকারি কর্তারা।
গ্রীষ্মে ফুলকপি। শীতকালে পটল। বর্ষায় মুলো। অসময়ের সব্জি চাষে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল ‘পলি হাউস’। কিন্তু তা তৈরি করার খরচ প্রচুর। তাই বিকল্প হিসেবে ‘ঝুলন্ত বীজতলা’ তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে পঞ্চায়েত দপ্তর। ‘আনন্দধারা’ প্রকল্পের আওতায় এই সুযোগ করে দেবে তারা। দপ্তরের অধীন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কম্প্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ ইতিমধ্যেই পাঁচ হাজার কৃষককে ‘সিড বেড’ বা ঝুলন্ত বীজতলা তৈরিতে সাহায্য করেছে। ঠিক হয়েছে, চাষের এই পরিকাঠামো তৈরির জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে জেলাপিছু এক হাজার কৃষক আর্থিক অনুদান পাবেন। কর্পোরেশনের হাতে থাকা অর্থের পাশাপাশি ‘আনন্দধারা’ এবং ১০০ দিনের কাজের তহবিল থেকেও ওই অনুদান দেওয়া হবে।
‘ঝুলন্ত বীজতলা’ আসলে কী? দপ্তরের কর্তারা বলছেন, এটি আসলে কাঠের বা বাঁশের মাচা। যার দুই বা তিনটি স্তর থাকতে পারে। মাচার উপরে পলি হাউসের মতোই ছাউনি তৈরি করা হয়। এর ফলে সূর্যের তাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। বাইরে থেকে বীজ বা চারাগাছে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। একই পরিকাঠামোয় মাচায় উপর-নীচ করে একাধিক ফসলের বীজতলা বোনা সম্ভব। জায়গায়ও লাগে কম। লম্বায় ১২ ফুট ও চওড়ায় ৪ ফুট জায়গাতেও বীজতলা করা যাবে। অ্যাজোলা, কেঁচো ও জৈব সার দেওয়া মাটি তৈরি করে মাচায় রাখতে হয়। যা থেকে উন্নত মানের চারাগাছ তৈরি সম্ভব। ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলক চাষে অযোধ্যা পাহাড়ে ফুলকপির চারা বেড়ে উঠেছে। সবচেয়ে ছোট পরিকাঠামোর জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা মিলবে। আয়তন বাড়লে সাড়ে সাত থেকে আট হাজার টাকা পাওয়া যেতে পারে।
কর্পোরেশনের প্রশাসনিক অধিকর্তা সৌম্যজিৎ দাস বলেন, ‘ঝুলন্ত বীজতলা থেকেই মাসে ১০ হাজার টাকা রোজগার সম্ভব। এছাড়াও আমরা আরও দু’টি প্রকল্প নিয়েছি। এক, বাড়ির উঠোনে মাটি খুঁড়ে, তাতে প্লাস্টিকের চাদর বিছিয়ে অস্থায়ী জলাশয় তৈরি করা। এতে মাগুর, শিঙি চাষ করে রোজগার সম্ভব। দুই, গবাদিপশু, বিশেষত ছাগলের খাবার তৈরি। থালায় বা ট্রেতে ঘাস তৈরি করা যায় এবং ১৩ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে বাজারে বিক্রি করা সম্ভব।’