South Korea: দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন লি জে-মিউং
লি-র জয় দক্ষিণ কোরিয়ার চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় ইতি টানল, যা শুরু হয়েছিল ইউন সুক-ইওলের স্বল্পস্থায়ী সামরিক আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্তের পর।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৩:২৬: দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন লিবারেল (Liberal) বিরোধী নেতা লি জে-মিউং (Lee Jae-myung)। দেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশন (National Election Commission) আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফলাফল ঘোষণা করেছে। পূর্বতন রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইওলের (Yoon Suk Yeol) অপসারণের (impeachment) পরে আয়োজিত একটি স্ন্যাপ নির্বাচনে (snap election) জে-মিউং নিরঙ্কুশ জয়লাভ করেছেন। এক ব্যর্থ সামরিক আইন (martial law) জারির চেষ্টার জন্য ক্ষমতাচ্যুত হন সুক-ইওল।
লি জে-মিউং মোট ভোটের ৪৯.৩ শতাংশ পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন, যেখানে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ (conservative) পিপল পাওয়ার পার্টির (People Power Party – PPP) কিম মুন-সু (Kim Moon-soo) পেয়েছেন ৪১.৩ শতাংশ ভোট। ৯৯ শতাংশের বেশি ব্যালট গণনার পরে এই তথ্য সামনে এসেছে। ফলাফল প্রকাশের আগেই পরাজয় মেনে নিয়ে কিম বলেন, “আমি জনগণের রায় মাথা পেতে নিচ্ছি। প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট (President-elect) লিকে অভিনন্দন ও তার সাফল্য কামনা করছি।”
লি-র জয় দক্ষিণ কোরিয়ার চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় ইতি টানল, যা শুরু হয়েছিল ইউন সুক-ইওলের স্বল্পস্থায়ী সামরিক আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্তের পর।
নির্বাচনে ভোটার টার্নআউট (voter turnout) পৌঁছায় প্রায় ৮০ শতাংশে – ১৯৯৭ সালের পর যা সর্বোচ্চ। এই ভোটের হারকে নজরকাড়া বলছেন পর্যবেক্ষকরা।
সংগ্রামী জীবন থেকে রাষ্ট্রপতির আসনে
লি জে-মিউং ১৯৬৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন গিয়ংবুক প্রদেশের (Gyeongbuk Province) আন্দং (Andong) নামক এক পাহাড়ি গ্রামে। তিনি ছিলেন পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। দারিদ্র্যতার কারণে স্কুলে না গিয়ে নাবালক বয়সে কাজ শুরু করতে হয় তাঁকে।
১৩ বছর বয়সেই কারখানায় কাজ করার সময় একটি মেশিনে তাঁর হাত আটকে যায় এবং তাঁর কব্জি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। তবে দমে যাননি তিনি। ১৯৭৮ সালে হাইস্কুল ও ১৯৮০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে একটি পূর্ণ বৃত্তি (full scholarship) পেয়ে আইন (law) পড়েন এবং ১৯৮৬ সালে বার এক্সামিনেশন (Bar Examination) পাশ করেন।
১৯৯২ সালে লি বিয়ে করেন কিম হে-কিয়ংকে (Kim Hye-kyung), এবং তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে।
আইনজীবী থেকে জনপ্রতিনিধি
দুই দশকের বেশি সময়কালে লি একজন মানবাধিকার আইনজীবী (human rights lawyer) হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০৫ সালে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং তখনকার সোশ্যাল-লিবারেল উরি পার্টিতে (social-liberal Uri Party) যোগ দেন, যা বর্তমানের ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ কোরিয়ার (Democratic Party of Korea) পূর্বসূরি।
তাঁর সংগ্রামী জীবন এবং অভিজাত শ্রেণির প্রতি সমালোচনার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী শ্রেণি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাঁকে নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে দেখেন।
২০১০ সালে লি নির্বাচিত হন সিয়ংনাম (Seongnam) শহরের মেয়র হিসেবে, যেখানে তিনি বিভিন্ন বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প (free welfare policies) চালু করেন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি গিয়ংগি প্রদেশের (Gyeonggi Province) গভর্নর হন।
লি জে-মিউংয়ের জয় কেবল একটি রাজনৈতিক পালাবদল নয়, বরং দক্ষিণ কোরিয়ায় সমাজের নিম্নশ্রেণী থেকে উঠে আসা মানুষের জন্য এক নতুন আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে।