একুশের মঞ্চ থেকে ভাষা আন্দোলনের ডাক, ছাব্বিশের রণকৌশল সাজিয়ে নিলেন মমতা
আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলায় অনুপ্রবেশ নিয়ে কুৎসা শুরু করেছে বিজেপি। বিজেপির কোনও এক নেতা বলছেন ১৭ লক্ষ রোহিঙ্গা বাস করছে পশ্চিমবঙ্গে।”

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৬:৪০: বাংলা ভাষাকে বাঁচাতে লড়াইয়ের ডাক দিলেন মমতা। একুশে তৃণমূলের শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে ভাষা আন্দোলনের আহ্বান জানালেন বাংলার মু্খ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তৃণমূল নেত্রী বলেন, “বাংলা ভাষার উপর সন্ত্রাস চলছে। কে কোন ভাষায় কথা বলবে, কে কী খাবে, তা নিয়েও বলে দেবে ওরা! জেনে রাখবেন, এখানে সবার অধিকার রক্ষিত হবে।”
বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের রক্ষায় দলের জনপ্রতিনিধিদের নির্দিষ্ট কর্মসূচিও বেঁধে দিলেন মমতা। বাংলায় সব ভাষাভাষীর মানুষকে নিয়ে শনি-রবিবার মিছিল, মিটিংয়ের কথা বললেন তিনি। দলের সাংসদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সমাজের বিশিষ্টজনেদের সঙ্গে নিয়ে ভাষা শহিদ উদ্যানে ধরনায় বসুন। বাংলা ভাষা আর বাঙালির সম্মান পুনরুদ্ধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একদম ছেড়ে দেবেন না। মনে রাখবেন, আমাদের রাজ্যে সকলে নিজের নিজের ভাষায় নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। আমরা সব ভাষাকে সমানভাবে সম্মান করি।”
মমতা আরও বলেন, “বাংলা ভাষার উপর সন্ত্রাস চলছে কেন? বাংলা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে। নবজাগরণ হয়েছে বাংলা থেকেই। বাংলার মাটি দুর্বৃত্তদের হবে না। বাংলার মানুষকে যদি বাংলা বলার জন্য বাইরে গ্রেফতার করা হয় এই লড়াই কিন্তু দিল্লিতে হবে। আমি কিন্তু ছাড়ার লোক নেই। মনে আছে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের কথা? দরকারে আবার ভাষা আন্দোলন শুরু হবে। ২৭ জুলাই নানুর দিবস থেকে প্রতি শনি ও রবিবার বাংলা ভাষার উপর আক্রমণের প্রতিবাদে মিটিং-মিছিল করুন। প্রতিবাদে নামুন। এ বার শুরু হল ভাষারক্ষার শপথ।”
বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলায় অনুপ্রবেশ নিয়ে কুৎসা শুরু করেছে বিজেপি। বিজেপির কোনও এক নেতা বলছেন ১৭ লক্ষ রোহিঙ্গা বাস করছে পশ্চিমবঙ্গে।” এই অভিযোগের পালটা সুর চড়ালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার প্রশ্ন, রাষ্ট্রসংঘ বলছে সারা পৃথিবীতে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লক্ষ। তাহলে বাংলায় ১৭ লক্ষ রোহিঙ্গা কোথায় পেলেন বিজেপি নেতারা? অনুপ্রবেশ এবং দেশজুড়ে বাংলা ও বাঙালি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠলেন তৃণমূল নেত্রী। বৃহত্তর পরিসরে আন্দোলনের ডাক দিলেন তিনি।
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন ইস্যুতে বিজেপি (BJP) সরকারকে আক্রমণ শানিয়ে মমতা বলেন, “একটা সার্কুলার লুকিয়ে বানিয়ে বিজেপি শাসিত রাজ্যে পাঠিয়ে বলা হয়েছে যাকেই সন্দেহ হবে, বাংলায় কথা বলে, তাঁকে অ্যারেস্ট করবে, ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেবে এক মাস।” বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষী মানুষদের বন্দি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, “বাংলা ভাষার ওপর বিরাট সন্ত্রাস চলছে, ওরা বলছে বাংলা ভাষায় কথা বলা যাবে না, কে মাছ খাবে, ডিম খাবে ওরা ঠিক করে দিচ্ছে। বাংলা এসব মানবে না, সব মানুষের অধিকার এখানে সুরক্ষিত করা হবে।”
অনুপ্রবেশ ইস্যুতে মোদী সরকারকে একহাত নেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল নেত্রীর কথায়, সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে বিএসএফ। যারা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন। তাহলে সেখান থেকে যদি কেউ অনুপ্রবেশ করে তাহলে তার দায় কীভাবে রাজ্য সরকারের হয়। যদি অনুপ্রবেশ হয়ে থাকে তবে সেটা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অধীনে থাকা বিএসএফের ব্যর্থতার জন্য।
বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে শেষ একুশ জুলাই, দলের মেগা কর্মসূচি থেকে কী বার্তা দেবেন মমতা, সেদিকে নজর ছিল। কার্যত একুশের মঞ্চ থেকে ছাব্বিশের বার্তা দিলেন তিনি। বাংলা ও বাঙালির অস্মিতা ও অস্তিত্ব রক্ষা লড়াইকে উপজীব্য করেই নীল বাড়ির লড়াইয়ে নামবে তৃণমূল। সে লড়াইয়ের সুর বেঁধে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।