RG Kar কাণ্ডের এক বছর: তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কী বলছে রিপোর্ট?

এই আন্দোলন কি শুধুই প্রতিবাদ, না কি শাসকদলের বিরুদ্ধে রাম-বাম জোটের এক নতুন কৌশল? অতিবাম শক্তিরা কি রাজ্যে অস্থিরতা তৈরির পরিকল্পনা করছে?

August 9, 2025 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৪:২৩: গত বছরের ৮ অগস্ট। টানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটির পর গভীর রাতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চেস্ট ডিপার্টমেন্টের সেমিনার হলে বিশ্রামে গিয়েছিলেন ৩১ বছরের এক ডাক্তারি ছাত্রী। পরের দিন সকাল ৯ অগস্ট, সেখান থেকেই উদ্ধার হয় তাঁর রক্তাক্ত দেহ। ময়নাতদন্তে উঠে আসে ভয়ঙ্কর তথ্য, যৌন নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে খুন।

প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করলেও পরে ধর্ষণ ও খুনের মামলা নেয় কলকাতা পুলিশ। গ্রেপ্তার হয় সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। পুলিশ দাবি করে, সঞ্জয়ই একমাত্র অভিযুক্ত। কিন্তু মৃতার পরিবার ও সহকর্মীদের অভিযোগ, এটি পরিকল্পিত অপরাধ, জড়িত আরও কয়েকজন, যাদের অনেকেই হাসপাতালের ভেতরের লোক।

প্রতিবাদ ও তদন্তের গতি

দেশজুড়ে প্রতিবাদে শামিল হন চিকিৎসকরা, কর্মবিরতিতে নামেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আদালতের নির্দেশে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। কিন্তু সিবিআই (CBI) ও দ্বিতীয় কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। চার্জশিটে সঞ্জয়কে একমাত্র অভিযুক্ত দেখিয়ে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি শিয়ালদহ আদালত (Sealdah Court) তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।

তবে এখানেই শেষ নয়। সিবিআই ও নির্যাতিতার পরিবার সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবি তোলে। একই সঙ্গে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করারও আবেদন জানায়। অপরদিকে সঞ্জয় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে হাইকোর্টে খালাসের আবেদন করেছেন।

নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার দিন হাসপাতালের পক্ষ থেকে তিনবার ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়। প্রথমে আত্মহত্যার ইঙ্গিত, পরে দেহ দেখাতে বিলম্ব, দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত ছাড়াই দ্রুত দেহ হস্তান্তর, এবং তড়িঘড়ি সৎকার, সব নিয়েই সন্দেহ। পুলিশের তৎপরতাও অনেক ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক ছিল বলে অভিযোগ।

সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ

গত বৃহস্পতিবার দিল্লিতে গিয়ে সিবিআই ডিরেক্টরের সঙ্গে দেখা করেছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। তাঁদের অভিযোগ, কলকাতা পুলিশের মতোই সিবিআই আসল অপরাধীদের আড়াল করছে। তাঁদের প্রশ্ন, “এত বড় মেডিক্যাল কলেজে একজন ঢুকে ধর্ষণ করে খুন করে বেরিয়ে গেল, কেউ জানল না?”

সুপ্রিম কোর্টে পুলিশের রিপোর্ট ও আদালতের প্রশ্ন

পুলিশের টাইমলাইন অনুযায়ী—

  • সকাল ১০:১০: টালা থানায় খবর
  • ১০:৩০: পুলিশ ঘটনাস্থলে
  • ১২:৪৪: মৃত ঘোষণা
  • ১:৪৭: ইউডি মামলা রুজু
  • ৬:১০ – ৭:১০: ময়নাতদন্ত
  • ১১:৪৫: FIR দায়ের

এ নিয়ে শীর্ষ আদালতের দুটি প্রশ্ন—

  1. ময়নাতদন্তের আগেই কীভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর সিদ্ধান্ত?
  2. দেহ উদ্ধারের প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর FIR, এত দেরি কেন? অধ্যক্ষ FIR করতে বাধা পেলেন কেন?

তদন্তে উঠে আসে দুর্নীতি ও প্রমাণ নষ্টের অভিযোগ। গ্রেপ্তার হন তৎকালীন প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। বর্তমানে অভিজিৎবাবু জামিনে। অভিযোগ, সিবিআই সময়মতো চার্জশিট না দেওয়ায়ই তিনি মুক্তি পান।

প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত

বিচারের দাবিতে ৮ অগস্ট রাতভর শ্যামবাজারে মশাল মিছিল ও ধিক্কার সভা করেছে অভয়া মঞ্চ ও জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। শনিবার ৯ অগস্ট নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে নাগরিক সমাজ, যেখানে উপস্থিত থাকবেন নির্যাতিতার মা-বাবাও।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে অভয়ার ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রথম বর্ষপূর্তিতে আজ নবান্ন অভিযান ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক উত্তাপ। অভয়ার বাবা-মাকে সামনে রেখে কিছু গোষ্ঠী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তাঁদের দাবি, ন্যায়বিচার চাইতে নবান্ন যাওয়া হবে। তবে এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, এ ঘটনায় খুনি গ্রেপ্তার হয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই। কোর্টে সিবিআই তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে, দুর্নীতির অংশ আলাদা তদন্তাধীন। তবুও ‘বিচার হয়নি’ স্লোগান তুলে রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি করার চেষ্টা চলছে।


তাঁদের মতে, তিন স্তরের আদালত—ট্রায়াল কোর্ট, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট, সবই প্রমাণ পর্যালোচনা করেছে। বাবা-মায়ের হয়ে সেরা আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছেন। তবুও এখন সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে নতুন করে ধামাচাপার অভিযোগ তোলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা আদালতের বাইরে রাজনৈতিক ‘মার্কেটিং’-এর ইঙ্গিত দিচ্ছে।

প্রশ্ন উঠছে, সিবিআইয়ের তদন্তে সন্তুষ্ট না হয়েও কেন নবান্ন অভিযান? কেন্দ্রীয় সংস্থার নিয়ন্ত্রণ যখন কেন্দ্রের হাতে, তখন রাজ্য সরকারের দফতর ঘেরার যুক্তি কী? সমালোচকদের অভিযোগ, মৃত অভয়ার দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু ঘিরে কিছু গোষ্ঠী রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে। এতে যেমন অভয়ার প্রতি সম্মান অক্ষুণ্ণ থাকছে না, তেমনি বাবা-মায়ের আবেগও আঘাত পাচ্ছে।

উল্লেখ্য, এর আগে বিজেপি শাসিত রাজ্য এবং সিপিএম আমলেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সমালোচকদের দাবি, বাংলায় তুলনামূলক কম হলেও সামাজিক এই অপরাধ পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। কিন্তু অভয়া কাণ্ডে মূল অপরাধী ধরা পড়েছে, আদালতে বিচার হয়েছে এবং সাজা ঘোষিত, তাই ‘বিচারহীনতার’ স্লোগান কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করা হচ্ছে।

বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, এই আন্দোলন কি শুধুই প্রতিবাদ, না কি শাসকদলের বিরুদ্ধে রাম-বাম জোটের এক নতুন কৌশল? অতিবাম শক্তিরা কি রাজ্যে অস্থিরতা তৈরির পরিকল্পনা করছে?

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen