বন্ধ হবে কবি সুভাষ থেকে দক্ষিণেশ্বর মেট্রো রুট?
কবি সুভাষ থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রো যাত্রায় এবার শঙ্কার সুর।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ৯:০৬: কবি সুভাষ থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রো যাত্রায় এবার শঙ্কার সুর। ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রো ট্র্যাকের ‘স্বাস্থ্য’ ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। ৪০ বছরের মধ্যে কোটি কোটি যাত্রীর বোঝা বয়ে কলকাতার এই লাইফলাইন ভঙ্গুর হয়ে গেছে। এ কারণে মেট্রো চালকদের পক্ষ থেকে ভারতীয় রেলকে চূড়ান্ত সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, যাত্রীবোঝাই রেক নর্থ-সাউথ করিডরে চলাচলের সময় প্রায়ই কম্পন ও প্রচণ্ড শব্দ হচ্ছে। রেল বোর্ডের অনুমোদন অনুযায়ী কলকাতা মেট্রো ঘণ্টায় ৮০ কিমি বেগে রেক চালাতে সক্ষম। কিন্তু রেল লাইনের ভগ্নদশার কারণে ব্লু-লাইন ক্রমেই গতি হারাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেট্রো চালক বলেন, “বোর্ডের নির্দেশে অনুমোদিত গতিবেগে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ৪০ থেকে ৫০ কিমি বেগে রেক চালাতে হচ্ছে। কিছু সেকশনে তো গতিবেগ আরও কমিয়ে দিতে হচ্ছে।” এর ফলে প্রতিদিন আপ-ডাউনে গন্তব্যে পৌঁছাতে ধারাবাহিকভাবে লেট করছে মেট্রো।
সূত্রের দাবি, সমীক্ষক সংস্থা রাইটসকে দিয়ে পুরো রুটের বাস্তব চিত্র জানার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রেল। প্রথম দফার রিপোর্টে সংস্থা জানিয়েছে, পুরো রুটের সার্বিক খোলনলচে বদলানো একান্ত জরুরি। সেক্ষেত্রে শহরের ব্যস্ততম এই মেট্রো করিডর সম্পূর্ণ বন্ধ করে সামগ্রিক সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আনুমানিক ব্যয় ৬০০ থেকে ৬৫০ কোটি টাকা।
মেট্রো ভবনের এক কর্তা বলেন, “টালিগঞ্জ (মহানায়ক উত্তকুমার) থেকে দমদম প্রায় সাড়ে ১৬ কিলোমিটার মেট্রো পথের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। ১৯৯৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর এই সেকশনে যাত্রী পরিষেবা শুরু হয়েছিল। কালের নিয়মে মাটির নিচে পাতা মেট্রো ট্র্যাক ক্রমাগত ভার বইতে বইতে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি কংক্রিটের পিলারগুলির উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণও অত্যন্ত জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ব্রিটিশ আমলের হওয়ায়, মাটির তলার অংশ আরও বেশি ক্ষয় হচ্ছে। বর্ষায় কলকাতার বহু অংশে জল জমে। এই জল পাতালের নির্মাণ অংশের ক্ষতি করছে। রুটের বিভিন্ন স্টেশনে ছাদ বা পাঁচিল দিয়ে লাগাতার জল ঢুকছে। ফলে সাম্প্রতিক অতীতে পার্ক স্ট্রিট, ময়দান, এসপ্লানেড, গিরিশ পার্কসহ একাধিক স্টেশনে জল থইথই হয়ে উঠেছে। গত বছর বর্ষায় পার্ক স্ট্রিট স্টেশন ও প্ল্যাটফর্ম জলে ডুবে গিয়েছিল। ৫ ঘণ্টার বেশি সময় নর্থ-সাউথ মেট্রো লাইনে যাত্রী পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল।”
আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত মেট্রো রেলওয়ে প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত বিষয়টি কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমরা ইউনিয়নের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে মেট্রো লাইনের উপযুক্ত মেরামতির দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি।”
এই বেহাল দশার জন্য কর্মীদের অভাবকে দুষছেন তিনি। তাঁর দাবি, “মেট্রো ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বেসরকারি এজেন্সির হাতে দেওয়া হয়েছে। তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণই নেই। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন মেট্রোতে নিয়োগ বন্ধ। প্রায় সমস্ত বিভাগ কর্মী-শূন্যতায় ভুগছে। এই লাইন থেকে কর্মী এবং মেট্রো চালকদের সরিয়ে শহরের অন্য রুটে কাজে লাগানো হচ্ছে। তাই মেট্রোর এই কঙ্কালসার চেহারা আরও প্রকট হচ্ছে।”