মমতার পুজো অনুদানে নিন্দা, নিজে অনুদান ঘোষণা, প্রকাশ্যে বঙ্গ BJP-র দ্বিচারিতা
রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য (Samik Bhattacharya) দাবি করেছেন, দলের সঙ্গে এর সরাসরি যোগ নেই, আয়োজন করছে পশ্চিমবঙ্গ সাংস্কৃতিক মঞ্চ।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৩:৪৯: পুজো কমিটিগুলিকে অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে এতদিন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব ছিল বিজেপি (BJP)। আদালত পর্যন্ত গিয়ে এই নীতির কড়া বিরোধিতা করেছিল তারা। অথচ বিধানসভা ভোটের আগে সেই বিজেপিই এবার জেলায় জেলায় পুজো কমিটিগুলিকে অর্থ সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, এই অর্থ বণ্টনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অভিনেতা ও বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে (Mithun Chakraborty)।
দলীয় শিবিরে খবর, পাঁচ বছর আগে দিল্লি থেকে পাঠানো কোটি কোটি টাকা গায়েব হয়ে যাওয়ার অভিযোগে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। বহু ক্লাব টাকা না পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে, আবার যেসব ক্লাব টাকা পেয়েছিল বলে দাবি করেছিল, তাদের অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। সেই অভিজ্ঞতার পর এ বার স্থির হয়েছে, কোনও জেলার নেতার হাতে টাকা যাবে না। ক্লাবের প্রতিনিধিদের সরাসরি এসে অর্থ নিতে হবে। এ নিয়েই দলের অন্দরে ক্ষোভ বাড়ছে বলে জানা গেছে।
সমালোচকরা প্রশ্ন তুলছেন, যে বিজেপি এতদিন রাজ্যের অনুদান নীতি নিয়ে সরব ছিল, তারাই বা হঠাৎ ভোটের আগে এই পথে হাঁটছে কেন? বিরোধীদের মতে, এটি বিজেপির দ্বিচারিতা।
এর মধ্যেই ফের ২০২০ সালের ধাঁচে ইজেডসিসি-তে (EZCC) দুর্গাপুজো আয়োজন শুরু করেছে বঙ্গ বিজেপি। সেই বছর এই পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। এ বার উদ্বোধনে নাম রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর। যদিও রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য (Samik Bhattacharya) দাবি করেছেন, দলের সঙ্গে এর সরাসরি যোগ নেই, আয়োজন করছে পশ্চিমবঙ্গ সাংস্কৃতিক মঞ্চ। মূল উদ্যোক্তা রুদ্রনীল ঘোষ (Rudranil Ghosh) জানিয়েছেন, বাজেট ৩০ লাখের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে এবং দল থেকে কোনও অর্থ দেওয়া হচ্ছে না।
অন্যদিকে, বিজেপি থেকে তৃণমূলে (TMC) যোগ দেওয়া সঙ্ঘমিত্রা চৌধুরীর কটাক্ষ, “ভোটের সময়েই বিজেপি দুর্গাপুজো নিয়ে মাতামাতি করে। অন্য বছরগুলোয় কেন এমন আয়োজন হয় না?”
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সম্প্রতি পুজো অনুদান বাড়িয়ে প্রতি পুজো কমিটিকে ১.১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন, যা আগে ছিল ৮৫,০০০ টাকা। প্রায় ৪৫,০০০ পুজো কমিটি এই অনুদান পাবে, ফলে মোট খরচ দাঁড়াবে ৪০০ কোটিরও বেশি। বিজেপি এই সিদ্ধান্তকে তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, এটি “হিন্দু ভোটের জন্য ঘুষ” এবং ট্যাক্সের টাকার অপব্যবহার। তাদের অভিযোগ, উন্নয়নের বদলে তৃণমূল সরকার ধর্মীয় রাজনীতিকে বাড়িয়ে তুলছে।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী যুক্তি দিয়েছেন, দুর্গাপুজো (Durga Puja) বাংলার সংস্কৃতির অঙ্গ এবং এই উৎসবের সঙ্গে বহু মানুষের জীবিকা জড়িত। তাই সরকারের এই সাহায্য অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। সব মিলিয়ে পুজো অনুদান ও আয়োজন ঘিরে রাজনীতির রং ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় নেই।