মনের অসুখে জর্জরিত বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষ! WHO-র রিপোর্টে চিন্তা ভারতেও
বর্তমানে বিশ্বের ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। কোভিড-পরবর্তী সময়ে এই সংকট আরও গভীর হয়েছে।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৯:৪০: শরীরের অসুখ চোখে দেখা যায়, পরীক্ষায় ধরা পড়ে। কিন্তু মনের অসুখ? তা নিঃশব্দে, অদৃশ্যভাবে গ্রাস করে মানুষকে। চাকরি হারানো, প্রিয়জনকে হারানোর শোক, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং নিরাপত্তাহীনতা- সব মিলিয়ে উদ্বেগ, ভয় এবং অবসাদ এখন কার্যত এক নতুন ‘মহামারি’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র সাম্প্রতিক দুটি রিপোর্ট ‘World Mental Health Today’ এবং ‘Mental Health Atlas 2024’ জানাচ্ছে, বর্তমানে বিশ্বের ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। কোভিড-পরবর্তী সময়ে এই সংকট আরও গভীর হয়েছে।
যদিও WHO-এর রিপোর্টে ভারতের নাম আলাদা করে উল্লেখ নেই, মনোবিদেরা বলছেন, ভারতের অবস্থাও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ‘ল্যানসেট’-এর এক গবেষণায় উঠে এসেছে, কোভিড-পর্বে প্রায় ২০ কোটি ভারতীয় মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষ করে ১৭-২৪ বছর বয়সি তরুণদের মধ্যে প্রতি সাত জনে এক জন বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং উৎসাহহীনতায় ভুগছেন।
মনোবিদ রঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি’-র (Mental Health Awareness) তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৫% মানুষ অ্যাংজাইটি বা OCD-তে ভুগছেন এবং ১% মানুষ সিভিয়ার মানসিক রোগে আক্রান্ত। জনসংখ্যার অনুপাতে, স্কিৎজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক কোটিরও বেশি।
মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মানুষ ভাল নেই। পারস্পরিক হিংস্রতা ও অসহিষ্ণুতা আমাদের মানসিক ক্ষতকে আরও গভীর করছে।” তাঁর মতে, সামাজিক মাধ্যমে বিদ্বেষমূলক আচরণ, নিরাপত্তাহীনতা এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতির অভাব এই সংকটকে তীব্রতর করছে।
তিনি আরও বলেন, “উদ্বিগ্ন মানুষ সমাধান খোঁজেন, কিন্তু অবসাদ মানুষকে নিষ্ক্রিয় করে তোলে। তখন মনে হয়, কোনও চেষ্টাই আর ফল দেবে না।”
রঞ্জন ভট্টাচার্যের মতে, পশ্চিমবঙ্গে মনোবিদ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও মনোসমাজকর্মীর সংখ্যা মাত্র ৮০০-১০০০। রাজ্যের হাতেগোনা কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজে মানসিক স্বাস্থ্য (Mental Health) পরিষেবা রয়েছে, আর মনোরোগ হাসপাতাল রয়েছে মাত্র সাতটি। তিনি মনে করেন, সরকারকে আরও উদ্যোগী হয়ে জেলাভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য প্রকল্পের পরিসর বাড়াতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া খুব দরকার। এজন্য এমন পরিষেবা গড়ে তুলতে হবে, যা সাধারণ মানুষের কাছে সহজে পৌঁছায়- যেমন স্থানীয় বা পাড়াভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থা।
মানসিক অসুখ নিয়ে সমাজে অনেক ভুল ধারণা বা লজ্জা (stigma) আছে, সেগুলো দূর করতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে যাতে তারা ভয় না পেয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন।
আর শরীরের চিকিৎসার মতোই, মানসিক চিকিৎসাকেও প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। ভবিষ্যতে সুস্থ সমাজ গড়তে এটাই সবচেয়ে জরুরি পথ।