মার্কিন শুল্কচাপে বিপর্যস্ত বাংলার রপ্তানি, ঝুঁকিতে লক্ষাধিক জীবিকা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২১.৩০: ভারতীয় পণ্যের উপর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে পশ্চিমবঙ্গের রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতি গভীর সংকটে পড়েছে। সূত্রের খবর, ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্কের ফলে রাজ্যের প্রায় ১৭,০০০ কোটি টাকার রপ্তানি ঝুঁকির মুখে। এই পরিস্থিতিতে উৎপাদন স্থগিত, কর্মসংস্থান থমকে এবং ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পে ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শুল্ক বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি সংক্রান্ত কূটনৈতিক চাপ। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, রুশ তেল কেনার মাধ্যমে ভারত ও চীন পরোক্ষভাবে ইউক্রেন যুদ্ধকে অর্থ জোগান দিচ্ছে। সেই কারণেই এই দুই দেশের উপর শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে বিভিন্ন শিল্পে ক্ষতির পরিসংখ্যান
- ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য: ৯,০০০ কোটি টাকার রপ্তানি ঝুঁকিতে, ফলে বিপদের মুখে প্রায় ১ লক্ষ কর্মসংস্থান
- সামুদ্রিক পণ্য (চিংড়ি): ৬,০০০ কোটি রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত, ফলে বিপদে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও মেদিনীপুরে কৃষক ও ১০,০০০ শ্রমিক
- চর্ম শিল্প: কলকাতার বানতলা চর্ম শিল্পকেন্দ্রে ৫ লক্ষ শ্রমিকের ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা, যেখানে ৫০০-এর বেশি ইউনিট যুক্ত
- পোশাক শিল্প: ৪০০-৪৫০ কোটি টাকার রপ্তানি হারাচ্ছে মার্কিন ক্রেতা, বিকল্প বাজারে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে উঠছে
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের রপ্তানিকারীরা মার্কিন বাজার হারিয়ে ফেলায় বিকল্প বাজার খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই ইউরোপে উৎপাদন স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন, যাতে “মেড ইন ইউরোপ” ট্যাগ ব্যবহার করে শুল্ক এড়ানো যায়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে দেশের জিডিপি ৬ শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে। মার্কিন ক্রেতারা ইতিমধ্যেই থাইল্যান্ড ও তুরস্কের দিকে ঝুঁকছেন, যেখানে শুল্ক অনেক কম। ফলে ভারতের রপ্তানি প্রতিযোগিতা কমে যাচ্ছে, এবং এনপিএ ও দেউলিয়াত্বের ঝুঁকি বাড়ছে। যদিও মোদী সরকার “দৃঢ় কূটনীতির” প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বাস্তবে আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় রপ্তানি বাজারে ধস নেমেছে। পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিক, কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এই কূটনৈতিক ব্যর্থতার সরাসরি শিকার।