Durga Puja 2025: ঠনঠনিয়ার লাহাবাড়িতে স্বয়ং দেবী দুর্গা এসেছিলেন, জানেন সেই কাহিনি?

September 25, 2025 | 2 min read
Published by: Ritam

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৬:৩০: শ্যামবাজারের ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, উল্টোদিকের লাল পাথরের বাড়িটাই হল সুপ্রাচীন লাহাবাড়ি। কলকাতার বনেদি পুজোর ইতিহাসের সঙ্গে মিশে রয়েছে এই বাড়ির ঐতিহ্য। শিবের কোলে দুর্গা অবস্থান করেন লাহাবাড়িতে। লাহা বংশে প্রথম পুজো শুরু করেন বনমালী লাহা তাও আবার বর্ধমানের বড়শূল গ্রামে। লাহা বংশের মধুমঙ্গল লাহা পুজো করেন চূঁচুড়ায়। দূর্গাচরণ লাহা প্রথম কলকাতায় দুর্গাপুজো শুরু করেন।

লাহা বাড়ির পুজোর জাঁকজমক বাড়ে শিবচরণ লাহার আমলে। বৈষ্ণব রীতিতে পুজো চলত। এবাড়ির প্রতিমা শিবের কোলে অস্ত্রবিহীন দুর্গা। দেবী এখানে মহিষাসুরমর্দিনী রূপে পূজিতা হন না, দেবী এখানে বরাভয় মূর্তিতে বিরাজ করেন। দুই হাত বিশিষ্ট দেবীর দুই পাশে গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী থাকেন। জন্মাষ্টমীর দু-তিনদিন পরই লাহাবাড়ির কাঠামো পুজো হয়। দেবীর মূল পুজো শুরুর আগে পর্যন্ত একটি ছোট্ট মাটির গণেশকে লাহা বাড়িতে দেবীরূপে পুজো করা হয়। পুজোর সময় পঞ্চমী আর ষষ্ঠীতে পরপর রচনা, কল্পনা আর অধিবাস অনুষ্ঠিত হয়। ষষ্ঠীর দিন সমস্ত রূপার অলঙ্কারে সাজানো হয় দেবীকে। লাহাবাড়িতে দেবীর ভোগে তিল, নারকেল, সুজি, বেসন ইত্যাদি দিয়ে নাড়ু তৈরি করে নিবেদন করা হয়। ভোগে একুশ প্রকারের মিষ্টি দেওয়া হয়। লাহাবাড়িতে অন্নভোগ বা পশুবলি হয় না।

 

 

পুজোর সময় ষষ্ঠীতে বোধনের সময় পরিবারের কুলদেবী সিংহবাহিনীকে রুপোর সিংহাসনে বসিয়ে পুজো করা হয়। বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী হওয়ায় এরা ছাঁচিকুমড়ো ও শশা বলি দেন। এই পরিবারে দুর্গাপুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল অষ্টমীর সন্ধিপুজো। সন্ধিপুজো যতক্ষণ চলে ততক্ষণ বাড়ির মহিলারা দু-হাতে ও মাথায় মাটির সরার মধ্যে ধুনো জ্বালিয়ে ঠাকুর দালানে বসে থাকেন।

নবমীর দিন দেবীর জন্যে খই, মুড়কি, মিষ্টি ইত্যাদি একটা হাঁড়িতে ভরে নিবেদন করা হয়, একে বলা হয় কোলহাড়ি দেওয়া। দশমীতে বেলপাতায় দেবীর নাম লিখে বাড়ির পুরুষেরা দেবীকে অর্পণ করেন। দশমীর অঞ্জলি সারেন পুরুষরাই। কুলিদের কাঁধে চড়ে দেবী দুর্গা যান বিসর্জনে। বিসর্জন সেরে বাড়ি ফিরে আসেন পুরুষরা, বন্ধ দরজার বাইরে থেকে জিজ্ঞাসা করেন মা আছেন কি-না আর ভিতর থেকে মহিলারা জানান মায়ের অবস্থানের কথা। এভাবে তিনবার পরপর জিজ্ঞাসা করার পরে পুরুষরা দরজা খুলে ভিতরে ঢোকেন। এটাই লাহাবাড়ির দুর্গাপুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট। প্রথমে মাটির দুর্গাপ্রতিমা এবং তাঁর সামনে বিরাজমান জয় জয় মাকে বরণ করেন বাড়ির মহিলারা৷ তারপর জয় জয় মা অর্থাৎ সিংবাহিনীর মূর্তিকে বাড়ির ঠাকুর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এরপর দড়ি দিয়ে মাটির প্রতিমা বেঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ যেহেতু কাঁধে করে শব নিয়ে যাওয়া হয়, সেই কারণে দেবী প্রতিমাকে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হয় না এই বাড়িতে৷ বাড়ি থেকে দুর্গা প্রতিমা বেরিয়ে যাওয়ার পর বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিসর্জন দিয়ে কাঠামো না ফেরা পর্যন্ত বাড়ির দরজা বন্ধ থাকে৷

 

 

কথিত আছে, বিসর্জন শেষে বাড়ি ফিরে স্নান করছিলেন বাড়ির কর্তা দুর্গাচরণ লাহা। সেই সময় দেখেন, এক বালিকা এসে ভিক্ষা চাইছে। বিরক্ত হয়ে তিনি তাকে তাড়িয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর দুর্গাচরণ উপলব্ধি করলেন‚ ওই বালিকা আর কেউ নয়‚ স্বয়ং মা দুর্গা। এরপর তাঁর সময় থেকে শুরু হয় এই পরিবারের দুর্গাপুজোর এক নতুন নিয়ম। বিসর্জনের সময় বন্ধ থাকে বাড়ির সব দরজা এবং জানালা। প্রধান দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায় দুর্গা প্রতিমা। তারপর বন্ধ হয়ে যায় সেই দরজা। বাড়ি ফিরে কর্তা সদর দরজার বাইরে থেকে তিনবার চেঁচিয়ে প্রশ্ন করেন, “মা কি আছেন বাড়ির ভিতরে?” গৃহকর্ত্রী আড়াল থেকে উত্তর দেন‚ পারিবারিক দেবী জয় জয় মা ফিরে গিয়েছেন ঠাকুরঘরে। আর মা দুর্গা রওনা হয়েছেন কৈলাসের পথে। এই উত্তর পেয়ে গৃহকর্তা প্রবেশ করেন বাড়িতে।​

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen