Durga Puja 2025: দুর্গাপুজোর অর্থনীতি ছাড়াল ১ লক্ষ কোটি, সরাসরি উপকৃত পাঁচ কোটি মানুষ

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৮:৩০: বাংলার অর্থনীতিকে বরাবর পুষ্টি জুগিয়ে এসেছে বাংল-বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে তা রীতিমতো নজির গড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে এবার পুজোর অর্থনীতি পৌঁছে গিয়েছে ১ লক্ষ কোটিতে। যা প্রায় গোটা বাংলার জিডিপির পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি। ২০২৪ সালে পুজো-অর্থনীতির পরিমাণ ছিল ৭৫-৮০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৫ সালে তা বেড়ে এখনই ১ লক্ষ কোটি টাকা পেরিয়ে গিয়েছে। যদিও পুরোপুরি পরিসংখ্যান আসা বাকি এখনও। অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ থেকে শুরু করে আমেরিকা-ব্রিটেন-ফ্রান্স-জার্মানির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পুজো-অর্থনীতিকে শিক্ষার অংশ হিসাবে পাঠ্যক্রমে রাখছে।
বণিকসভাগুলির বক্তব্য, উৎসবকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে বিপ্লবের পথ দেখালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনাতেই পুজো-অর্থনীতি এবার এক লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। বাংলার পাশাপাশি ভিনরাজ্যের কয়েক লক্ষ মানুষও লাভবান করছে বাংলার দুর্গাপুজোকে ঘিরে। ভবতোষ সুতার, সুশান্ত পাল, প্রদীপ দাস, পরিমল পাল মতো শিল্পীরা জানিয়েছেন, দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করেই দেশ-বিদেশে কাজের প্রস্তাব ও বরাত পাচ্ছেন তাঁরা। কর্মসংস্থান হচ্ছে পুজো-শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার শিল্পী-শ্রমিক-কর্মচারীর। বিদেশি ও ভিন রাজ্যের পর্যটকরা বাংলায় এসে শিল্পীদের সৃষ্টি দেখে কাজের বরাত দিয়েছেন।
বাংলার গারমেন্টস ও ফুড-ইন্ডাস্ট্রি সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে। কেবল কলকাতা-কেন্দ্রিক নয়, দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি, আসানসোল, পুরুলিয়া, বহরমপুর, মালদহ-কোচাবিহারের মতো বণিকসভাগুলির মতে, জেলাতেও পুজোকেন্দ্রিক ব্যবসা আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পুজো থেকে বাংলার ৪ কোটি ৯০ লক্ষের বেশি মানুষের আয় বেড়েছে।
বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স, মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স, ফসমি, ভারত চেম্বার অফ কমার্স সহ বিভিন্ন বণিকসভাগুলোর দাবি, গত বছর পুজোকে ঘিরে ৮০ হাজার কোটির বেশি বাণিজ্য ছিল। এ বছর মুখ্যমন্ত্রীর পুজো অনুদান বৃদ্ধি এবং রাজ্য সরকারের একগুচ্ছ সিদ্ধান্তের জেরে পুজো কেন্দ্রিক বাণিজ্য ১ লক্ষ কোটি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কেনাবেচার জেরে জিএসটি বাবদ প্রচুর আয় হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের। একাধিক সামাজিক প্রকল্প, পাশাপাশি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী সহ ৮০টির বেশি প্রকল্পের জেরে মানুষের হাতে অর্থ এসেছে। গ্রামের বাজার চাঙ্গা হয়েছে। কেনাকাটা বেড়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে জোয়ার এসেছে। পুজো অনুদান পুজোর অর্থনীতিকে আমূল বদলে দিয়েছে। পুজোর সংখ্যা বেড়েছে ২৫ শতাংশ।
বাংলার নানা প্রান্তের শিল্পীদের তৈরি করা গয়না-হস্তশিল্প পুজোর-বাজারে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। শিল্পীদের উৎপাদনের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। উপকৃত হয়েছেন হাজার হাজার কুটির শিল্পী। স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও কুটির শিল্পের সঙ্গে যুক্ত দেড় কোটির বেশি শ্রমিক-নারী বাড়িত উপার্জন পেয়েছেন। বণিকসভা বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স সূত্রে খবর, কয়েক হাজারের বেশি সংস্থা ও তাদের শ্রমিকরা মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের জেরে পুজোয় গতবারের চেয়েও বাড়তি রোজগার করলেন। সংখ্যাটা দেড় লক্ষের বেশি। শুধু কলকাতা নয়, জেলার বণিকসভাগুলিও গতবারের তুলনায় এবার বেশি বাণিজ্য করেছে। অনুদান মেলায় গ্রামীণ অর্থনীতির আরও শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে। এমনকী ভিনরাজ্যের বহু শ্রমিক বাংলার দুর্গাপুজোর মাধ্যমে এবছরও আরও বেশি সংখ্যায় উপকৃত হয়েছেন।
এছাড়াও সমাজ মাধ্যমে রিল বানিয়ে ও বিভিন্ন সংস্থা এবং দোকানের বিজ্ঞাপনে ‘ইনফ্লুয়েন্সার’ হিসাবে কয়েক কোটি টাকা রোজগার করেছেন বাংলার ছেলেমেয়ে। টলিউডও ছোঁয়া পেয়েছে এই পুজো-অর্থনীতির। চারটি ছবি রিলিজ হয়েছে। দেদার প্রচার চলেছে। টলিপাড়ার কয়েক হাজার শিল্পী-কলাকুশলীরা রোজগার করেছেন। বড় থেকে ছোট সব রেস্তোরাঁর সামনেই হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছে। পুজোর সময় বাঙালির বাইরে বেড়াতে যাওয়ার জন্য পর্যটনশিল্প চাঙ্গা হত, এখন বিদেশ থেকে বাংলায় পা রাখছে মানুষ। গুজরাত-উত্তরপ্রদেশ-রাজস্থান থেকে এবছরও কয়েক হাজার মানুষ বাংলায় এসে পুজো দেখছেন। আবার গ্রামে পুজো দেখতেও যাচ্ছেন তাঁরা।
মমতার পরিকল্পনাতেই বিগত এক দশকে দেশের সেরা উৎসবে পরিণত হয়েছে দুর্গাপুজো। বিদেশিরাও বাংলার উৎসবে শামিল হচ্ছেন। এমন আগে দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক সম্মানের পালক যুক্ত হয়েছে পুজোর সঙ্গে। দুর্গোৎসব হয়েছে বিশ্বজনীন। মোট আয় বেড়েছে ১৫ শতাংশ। গতবারের তুলনায় আয় বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটির বেশি। প্রায় ৫ কোটি মানুষের পরোক্ষে আয় বেড়েছে।