আজ একাদশী, উত্তরে দেবী দুর্গা পূজিতা হবেন ভাণ্ডানি রূপে

October 3, 2025 | 2 min read
Published by: Ritam

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ০৯:৩০: দুর্গাপুজো শেষ, প্রথামতো নিরঞ্জন হয়ে গিয়েছে দেবীর। কিন্তু উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের কিছু কিছু এলাকায় পুজো বাকি। আজ একাদশীর দিনে শুরু হয় একদিনের দুর্গাপুজো। একদিনের এই পুজোয় দেবী দুর্গা রূপে নন, দেবী পূজিতা হন ভাণ্ডানি নামে। মূলত উত্তরবঙ্গের রাজবংশী কামতাপুরী ভাষাভাষী প্রধান গ্রামগুলিতে আজও সপরিবারে ভাণ্ডানি রূপে পূজিতা হয়ে থাকেন দেবী উমা।

 

জনশ্রুতি রয়েছে, মা কৈলাসে ফিরে যাওয়ার পথে এলাকার মানুষ শােকাহত হয়েছিলেন। তখন মা উমা তাদেরকে দেখা দেন এবং ওই সব অঞ্চল পুনরায় শস্যশ্যামলা হয়ে ওঠে। সেই থেকে মা দুর্গা ভাণ্ডানি রূপে পূজিতা হচ্ছেন উত্তরবঙ্গে। এই ভাণ্ডানি পুজো উপলক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে মেলাও বসে। ভাণ্ডানী দেবী মূলত দ্বিভূজা এবং ব্যাঘ্র বাহিনী ও রক্তিম বর্ণা। দেবী পশ্চিম অভিমুখে বসেন। যদিও সময়ের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় দেবীর রূপে পরিবর্তন এসেছে। যেমন কোথাও কোথাও বাহন বাঘ হয়েছে সিংহ। দ্বিভূজা দেবী হয়েছেন চতুর্ভুজা।

 

এই দেবী ভাণ্ডানিকে কোথাও দুর্গা, কোথাও বনদুর্গা রূপে পুজো করার প্রথাও চালু হয়েছে। দশমীর রাতে ভাণ্ডানি পুজোর সমস্ত প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়ে যায়। রাজবংশী সমাজের পুরোহিত দেউসি একাদশীর ভোরে দুধ, দই, চিনি, বাতাসা দিয়ে নৈবেদ্য সাজিয়ে পুজো শুরু করেন।

উত্তরবঙ্গের এই দেবী ভাণ্ডারনি, আবার কোনও কোনও জায়গায় ভাণ্ডলী নামেও পরিচিত।

 

ব্যাঘ্রবাহিনী দেবীকে নিয়ে জনশ্রুতির শেষ নেই। অনেকে মনে করেন, দেবী দুর্গা দশমীতে কৈলাসে ফিরে যাওয়ার পথে গ্রামের পর্ণ কুটিরে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি একাদশীতে ভাণ্ডানি রূপে পূজিতা হন আবার একদল দাবি করেন, ভাণ্ডানি হল দেবী দুর্গার জিনিসপত্রের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন। পুজোর পরে কোচবিহারের রাজবাড়ি থেকে দেবী ফিরে যাওয়ার পথে ভাণ্ডানি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেবী বাধ্য হয়ে আরও তিনদিন থেকে যান। ওই সময় ফের তাঁর পুজোর আয়োজন হয়।

 

তবে ঐতিহাসিক এবং গবেষকদের ধারণা অনুযায়ী , ভাণ্ডানি হল আদতে মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভুত। কৃষি ভিত্তিক সমাজের শস্যের দেবী রূপে শস্যের প্রাচুর্যের আশায় ভাণ্ডানি দেবীর আরাধনার সূচনা হয়। প্রকৃত অর্থে মা ভাণ্ডানি হলেন কৃষির দেবী। গবেষকেদের একাংশের দাবি, ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ছিল শ্বাপদসঙ্কুল ঘন জঙ্গলে ভরা মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভুত নানা গোষ্ঠীর বসতি এলাকা। ভালুকের উপদ্রব ছিল অত্যন্ত বেশি। স্থানীয় সমাজে ভালুক ভাণ্ডি নামে পরিচিত। ওই ভাণ্ডির হাত থেকে রক্ষার জন্য তাঁরা যে দেবীর আরাধনা শুরু করে সেটাই ভাণ্ডানি নামে পরিচিতি পায়। ‘ভাণ্ডি’ শব্দটি কামতাপুরী বা রাজবংশী ভাষার শব্দ যার অর্থ ভালুক। সব মিলিয়ে আজ পুজোর আনন্দে ভাসবে উত্তরবঙ্গের নানা এলাকা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen