North Bengal Floods: বিনা তদন্তে মোদীর দোষারোপ ‘রাজনৈতিক নীচতা’, পাল্টা আক্রমণ মমতার

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২৩:৪৬: বৃষ্টি ও ভূমিধসে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গের নাগরাকাটা (Nagrakata) সোমবার পরিণত হল রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রে। এদিন দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়েন শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ (BJP MLA Shankar Ghosh) এবং মালদা উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মু (BJP MP Khagen Murmu)। পরে রাতেই সেই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয় রাজনৈতিক তরজার নতুন অধ্যায়—প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক টুইট বার্তায় তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী যথাযথ তদন্তের আগেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
মমতা লেখেন, “এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং উদ্বেগজনক যে দেশের প্রধানমন্ত্রী কোনও তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে রাজনৈতিক আক্রমণের অস্ত্র বানিয়েছেন, যখন উত্তরবঙ্গের মানুষ বন্যা ও ভূমিধসের দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন।”
তিনি আরও জানান, রাজ্যের প্রশাসন ও পুলিশ যখন ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে দিনরাত ব্যস্ত, তখন বিজেপি নেতারা কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা ঘিরে বিশাল গাড়ির বহর নিয়ে দুর্গত এলাকায় পৌঁছে যান, স্থানীয় প্রশাসনকে কোনও রকম তথ্য না দিয়েই। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “এই পরিস্থিতিতে কীভাবে রাজ্য প্রশাসন, স্থানীয় পুলিশ বা তৃণমূল কংগ্রেসকে দোষারোপ করা যায়?”
মমতার বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী কোনও প্রমাণ, প্রশাসনিক রিপোর্ট বা আইনি অনুসন্ধান ছাড়াই তৃণমূল ও রাজ্য সরকারকে দায়ী করেছেন, যা তিনি ‘সংবিধানবিরোধী’ এবং ‘রাজনৈতিক নীচতা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর দাবি, “গণতন্ত্রে দোষ প্রমাণের একমাত্র পথ হল আইনি প্রক্রিয়া, কোনও রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে করা টুইট নয়।”
তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থলটি এমন একটি বিধানসভা এলাকায়, যেখানে বিজেপিরই বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। তবুও প্রধানমন্ত্রী ঘটনার দায় তৃণমূলের উপর চাপাচ্ছেন, যা মমতার মতে “অপরিণত ও অনভিপ্রেত”।
প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “যিনি মণিপুরে জাতিগত হিংসার ৯৬৪ দিন পর গিয়েছিলেন, তাঁর হঠাৎ এই ‘বঙ্গপ্রেম’ অনেকটাই রাজনৈতিক অভিনয়ের মতো দেখায়।”
উল্লেখ্য, এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সমাজমাধ্যমে বাংলায় তিনি লিখেছেন, ‘‘যে ভাবে আমাদের দলের সহকর্মীরা—যাঁদের মধ্যে একজন বর্তমান সাংসদ ও বিধায়কও রয়েছেন—পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটি তৃণমূল কংগ্রেসের অসংবেদনশীলতা এবং রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার করুণ রূপের স্পষ্ট প্রতিফলন।’’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘আমার একান্ত কামনা পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেস এই কঠিন পরিস্থিতিতে হিংসায় লিপ্ত না হয়ে মানুষের সাহায্যে আরও মনোযোগী হোক। আমি বিজেপি কার্যকর্তাদের আহ্বান জানাই, তাঁরা যেন জনগণের পাশে থেকে চলতি উদ্ধার কাজে সহায়তা করে যান।’’
এ প্রসঙ্গে মমতা স্পষ্ট জানান, সহিংসতার নিন্দা সকলেরই করা উচিত, কিন্তু এই সময় রাজনীতি নয়, মানুষের পাশে দাঁড়ানোই একমাত্র কাজ। তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিজেপি ইচ্ছে করে উত্তরবঙ্গ বনাম দক্ষিণবঙ্গের বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করছে, যা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মেরুকরণের কৌশল।
টুইটের শেষে মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানান, “নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে শুনুন, শুধু আপনার দলের নেতাদের নয়। আপনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, কেবল বিজেপির নয়। এখন সময় বিভাজন নয়, ঐক্যের। রাজনীতি পরে হবে, এখন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময়।”