ডায়বেটিসের বিরুদ্ধে বাংলার লড়াইয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১২.২৫: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে অসংক্রামক রোগ মোকাবিলার অন্যতম শীর্ষ বিশেষজ্ঞ জিন বুকম্যান (Gene Bukhman) গত শুক্রবার পৌঁছন কলকাতার রাজ্য সরকার পরিচালিত আইপিজিএমইআর তথা এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালে। তাঁর এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিমবঙ্গের টাইপ-ওয়ান ডায়াবেটিস মোকাবিলার অনন্য উদ্যোগ, যা এখন “বেঙ্গল মডেল” নামে আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত, তা কাছ থেকে দেখা ও শেখা।
টাইপ-ওয়ান ডায়াবেটিস একটি অটোইমিউন রোগ, যা সাধারণত শিশু ও কিশোরদের মধ্যে দেখা যায়। এই রোগের চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণে বাংলাই ভারতের প্রথম রাজ্য যেখানে বিশেষ টিডি ক্লিনিক চালু হয়েছে। পিজির অধ্যাপক ডাঃ সুজয় ঘোষের নেতৃত্বে ২০২২ সালে পাঁচটি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রকল্প শুরু হয়, যা বর্তমানে রাজ্যের ১৫টি জেলায় চলছে।
এই ক্লিনিকগুলো শুধু রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা নয়, বরং রোগীর পূর্ণাঙ্গ যত্ন, পরামর্শ, পুনর্বাসন এবং নিয়মিত তথ্যসংগ্রহের কাজও করে থাকে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ শিশু এই প্রকল্পের আওতায় চিকিৎসা পেয়েছে।
জিন বুকম্যান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমি এই বেঙ্গল মডেল সম্পর্কে শুনেছিলাম, যেখানে সুজয় ঘোষ ও তাঁর দল অসাধারণ কাজ করেছেন। তাই আমি নিজে এসে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম এবং তাঁদের কাছ থেকে এই প্রকল্প সম্পর্কে আরও জানতে চেয়েছি।”
বুকম্যান নিজে ব্রিগহ্যাম অ্যান্ড উইমেন্স হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপকও বটে, পাশাপাশি তিনি এনসিডিআই দারিদ্র্য নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি। এটি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যা বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসংক্রামক রোগ ও দুর্ঘটনা থেকে হওয়া স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে কাজ করে।
এই প্রকল্পের বিশেষত্ব হলো, এখানে ইনসুলিন এবং ফলো-আপ সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। গবেষক দলটি রোগীদের চিকিৎসার প্রতিটি ধাপ ও ফলাফল নথিভুক্ত করে, এমনকি পরিবারের আর্থিক চাপ সম্পর্কেও বিশদ তথ্য সংগ্রহ করে। দেখা গিয়েছে, অংশগ্রহণকারী শিশুদের পরিবারের গড় মাসিক আয় প্রায় ৭০০০ টাকা, যার প্রায় চল্লিশ শতাংশ আগে খরচ হতো শিশুর ডায়াবেটিস চিকিৎসায়। এখন সেই ব্যয় নেমে এসেছে মাসে মাত্র ২২০ টাকায়, যা মূলত ক্লিনিকে যাতায়াত বা এক দিনের কাজের ক্ষতির খরচ। গত দু’বছরে এই প্রকল্পের আওতায় থাকা কোনো শিশুর মৃত্যু হয়নি।
বুকম্যান বলেন, “বাংলার এই উদ্যোগ শুধু ভারতের নয়, বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্যও এক অনুকরণীয় মডেল। এই কাজ সত্যিই প্রশংসনীয় এবং আশার আলো দেখাচ্ছে।”