সত্যিই কি বিহারে BJP-র ভোট বাক্সে সুনামি আছড়ে পড়েছে?

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১১:৩০: বিহারের ভোটের ফল ঘোষণা হওয়ার পরে অনেকে বলছেন, দিদি যা ভাবেন, গোটা ভারত তা ভাবে পরদিন। বাংলার মাটিতে যে ‘অস্ত্র’ ব্যবহার করে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট এবং ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই ‘অস্ত্র’ ব্যবহার করেই নীতীশ কুমার এবং বিজেপির জোট সামলে দিল দীর্ঘকাল শাসনের স্থিতাবস্থা বিরোধিতা।
তবে বিজেপি’র অন্দরে কিন্তু শুক্রবার থেকে উৎসবের হাওয়া। এদিন সন্ধেয় বিজেপির সদর দপ্তরে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফুল, মালা, গোলাপের পাপড়িতে তাঁকে স্বাগত জানানোর পর সটান মঞ্চে উঠে গলার উত্তরীয় উঁচিয়ে ধরে ঘোরাতে শুরু করেন তিনি। অনেকটা লর্ডসের মাঠে যেভাবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জার্সি ঘুরিয়েছিলেন। ছবিটা দেখে এই ধারণাই হতে পারে যে বিহারে বিজেপির ভোট বাক্সে সুনামি আছড়ে পড়েছে। বিপুল ভোট বেড়েছে গেরুয়া শিবিরের। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে ব্যাপারটাকে উপস্থাপন করেছেন, তা সেই ধারনা জোরালো হতে পারে। তবে বাস্তব হল, বিহারে এই নির্বাচনে গত ভোটের তুলনায় বিজেপির ভোট বেড়েছে মাত্র ০.৬১ শতাংশ (রাত ৯.০৫ পর্যন্ত হিসাব। সূত্র নির্বাচন কমিশনের রেজাল্ট ওয়েবসাইট)। ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে বিহারে বিজেপি পেয়েছিল ১৯.৪৬ শতাংশ ভোট। তা বেড়ে হয়েছে ২০.০৭ শতাংশ ভোট।
এক কথায় জবাব দিলে বলা যায়, নীতীশ কুমারের ঘাড়ে চড়ে। বিহারে নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দলের ভোট বরং বেড়েছে ৩.৮৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪ শতাংশ। ২০২০ সালে বিহার বিধানসভা ভোটে জেডিইউ পেয়েছিল ১৫.৩৯ শতাংশ ভোট। তা বেড়ে এবার হয়েছে ১৯.২৭ শতাংশ ভোট। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অধিকাংশের মতে, ভোটের আগে মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যে ১০ হাজার টাকা করে পাঠিয়েছে নীতীশ সরকার, তার অভিঘাতেই বিহারে এবার মহিলাদের ভোটদানের হার এক লাফে ১২ শতাংশ বেড়েছে। এরই বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন নীতীশ।
দু’দফার ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, বিহারে গত বারের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি মহিলা এ বার বুথে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। যত সংখ্যক পুরুষ ভোটার দিয়েছেন, তার চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি মহিলা ভোট দিয়েছেন। যার ফল— বেশি ভোট এবং আরও বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরছে এনডিএ। সম্পূর্ণ ধরাশায়ী আরজেডি এবং কংগ্রেসের মহাগঠবন্ধন।
বিহারে যে নীতীশ-বিজেপির জোট ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে, তা আন্দাজ করেছিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। বিহারের জয় স্পষ্ট হতেই শুক্রবার রাজ্য বিজেপির পাশাপাশি সর্বভারতীয় নেতারাও হুঙ্কার দিতে শুরু করেন, ‘‘এর পর বাংলা!’’ বিজেপির এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে এখন থেকেই বাতাবরণ তৈরি করবে, তা স্বাভাবিক। কিন্তু তাতে উদ্বিগ্ন হওয়া দূরস্থান, সার্বিক ভাবে তৃণমূল বরং নীতীশ এবং বিজেপি জোটের জয়ের নেপথ্যের কারণগুলির জন্য ‘উদ্বুদ্ধ’। এনডিএ-এর প্রত্যাবর্তন স্পষ্ট হতেই রাজ্যসভায় তৃণমূলের অন্যতম মহিলা মুখ সাগরিকা ঘোষ সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘মহিলা ভোটারদের ক্ষমতা দেখা গেল ২০২৫ সালের বিহার নির্বাচনে। আগামী বছর বাংলাও দেখাবে। কারণ, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো জননেত্রী আছেন। যিনি ‘মহিলা ফ্যাক্টর’কে আকর্ষিত করেন। খেলা হবে!’