‘অসাংবিধানিক ও স্বেচ্ছাচারী’, পাহাড়ে কেন্দ্রের মধ্যস্থতাকারী নিয়োগে মোদীকে ফের চিঠি মমতার

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৮:০০: ফের তীব্র হল কেন্দ্র-রাজ্যের সংঘাত। দার্জিলিং, তরাই ও ডুয়ার্সের গোর্খাদের নানা দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক (Union Ministry of Home Affairs) অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস পঙ্কজকুমার সিংহকে (Pankaj Kumar Singh) মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ করেছে। এই সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক এবং স্বেচ্ছাচারী’ বলে আবারও আপত্তি তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সোমবার তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে (Narendra Modi) নতুন চিঠি পাঠিয়ে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, পাহাড় প্রশাসন এবং শান্তিরক্ষার মতো সংবেদনশীল বিষয় রাজ্যের আওতাভুক্ত। তবু জিটিএ-র (GTA) ভবিষ্যৎ বা পাহাড়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি রাজ্যের সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী এবং পাহাড়ে স্থিতাবস্থা নষ্ট করতে পারে।
গত মাসেও একই কারণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন মমতা। সেই চিঠির পরও কেন্দ্র সিদ্ধান্ত বদল করেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। নতুন চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের চিঠি অনুযায়ী মধ্যস্থতাকারীর দফতর ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। তাঁর কথায়, এই তড়িঘড়ি পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অপ্রত্যাশিত।
তৃণমূল কংগ্রেসের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে পোস্ট করে জানানো হয়েছে, “এটি একটি পরিকল্পিত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ, যা রাজ্যের অগোচরে কার্যকর করা হয়েছে এবং মুখ্যমন্ত্রীর আগের যোগাযোগকে অগ্রাহ্য করেছে, যা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় নিজেই স্বীকার করেছিল। নিয়োগটি যে বেআইনি ও অসাংবিধানিক, তা জানানো সত্ত্বেও মোদী সরকার জোর করে এগিয়ে গেছে। এতে আবারও প্রমাণিত হলো, তাদের শাসনব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর নয়, বরং কর্তৃত্ববাদী মানসিকতার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।”
এছারাও বলা হয়েছে, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) স্পষ্টভাবে এই অসাংবিধানিক আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং এর অবিলম্বে প্রত্যাহার দাবি করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, পশ্চিমবঙ্গ দিল্লির অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ, চাপ বা অসম্মান কোনওভাবেই সহ্য করবে না। বাংলার ঐক্য, সাংবিধানিক অধিকার এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতা নিয়ে কোনও সমঝোতা করা হবে না। আর কোনও ‘জমিদারি শাসন’ (ZAMINDARI DIKTAT) বাংলার ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।”
Smt. @MamataOfficial has written to PM @narendramodi, exposing yet another brazen assault on India’s federal structure by @BJP4India-led Centre. Without consultation, without legality, without jurisdiction, and without the slightest respect for constitutional boundaries, the… pic.twitter.com/AUycwz1Vs0
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) November 17, 2025
পাহাড়ে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ নতুন নয়। আশির দশকে সুবাস ঘিসিংয়ের আন্দোলনের সময় কংগ্রেস আমলে এই দায়িত্বে ছিলেন দার্জিলিংয়ের সাংসদ ইন্দ্রজিৎ খুল্লার। পরে ২০০৯ সালে ইউপিএ সরকার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিজয় মোহনকে একই ভূমিকা দেয়। তবে তখন পাহাড়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে উত্তাল পরিস্থিতি ছিল। এখন তেমন পরিবেশ না থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।
২০১১ সালে কেন্দ্রীয় মধ্যস্থতায় জন্ম নেয় গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। সেই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল গোর্খাদের সাংস্কৃতিক পরিচিতি বজায় রেখে পাহাড়ের শিক্ষা, ভাষা, সংস্কৃতি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। সেই প্রসঙ্গ তুলে মমতা আবারও বলেছেন, পাহাড়ের শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের বহু বছরের পরিশ্রম আছে। তাই গোর্খা এবং জিটিএ-সংক্রান্ত কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার আগে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা হওয়া উচিত।