করোনা পরীক্ষার খরচ কমাল রাজ্য
কোভিড পরীক্ষার খরচে ফের রাশ টানলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার থেকে আর ২ হাজার ২৫০ টাকা নয়। বেসরকারি ক্ষেত্রে পরীক্ষা করানো যাবে মাত্র দেড় হাজার টাকায়। লাগাম টানা হল বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার খরচেও। সেই সঙ্গে বাড়ছে শয্যাসংখ্যা। সংক্রমণের বেয়াড়া গতির মধ্যে রাজ্যবাসীর কাছে যা স্বস্তির খবর। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে করোনা মোকাবিলায় একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজ্যের প্রতিটি পদক্ষেপকেই স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন মহল।
মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘সরকারি হাসপাতালে সম্পূর্ণ নিখরচায় করোনার পরীক্ষা হয়। বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবরেটরিতে তা করতে হয় অর্থের বিনিময়ে। সেই খরচ এবার দেড় হাজার টাকায় নামিয়ে আনা হল।’ করোনা পরীক্ষাব্যবস্থার কো-অর্ডিনেটর ডাঃ প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘সম্ভবত গোটা দেশে প্রাইভেটে কোভিড টেস্টের এটাই সর্বনিম্ন খরচ।’ বর্তমানে সরকারি ক্ষেত্রে রোজ ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার করোনা পরীক্ষা হয়। বেসরকারি ক্ষেত্রে কমবেশি পাঁচ হাজার। মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে প্রতিদিন সরাসরি উপকৃত হবেন কমপক্ষে পাঁচ হাজার মানুষ।
বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবায় বাড়তি খরচ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠছিল দীর্ঘদিন ধরেই। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন। এদিনই ১৫০’র বেশি বেড রয়েছে এমন ৩০টি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনের চেয়ারম্যান অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। রাতে তিনি জানিয়েছেন, বৈঠকে মূলত চারটি বিষয় নিয়ে ইতিবাচক কথা হয়েছে। এক, শহর ও শহরতলির ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার খরচ সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য অ্যাম্বুলেন্সের ক্ষেত্রে কিলোমিটার পিছু ২৫ টাকা (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত)। সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সে তা হবে ২০ টাকা। স্যানিটাইজেশন ও অক্সিজেন (প্রতি ঘণ্টা) খরচ নির্ধারিত হয়েছে যথাক্রমে ৩০০ ও ৫০০ টাকা। দুই, উৎসব মরশুমে বেসরকারি ক্ষেত্রে বেডের সংখ্যা বাড়ানো হবে ৫০০টি। তিন, ভর্তির সময় থেকে ২৪ ঘণ্টার হিসেবে বিল করতে হবে। চার, কোনও রোগীকেই ফেরানো যাবে না। বেড না থাকলে অন্য হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সরকারি ক্ষেত্রে শয্যাসংখ্যাও অন্তত ৫০ শতাংশ বাড়াতে চলেছে রাজ্য।
মুখ্যসচিব বলেছেন, ‘বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত আশঙ্কাজনক রোগীদের জন্য ১ হাজার ২৪৭টি শয্যা রয়েছে। বাড়ছে আরও ৬০০ আইসিইউ এবং এইচডিইউ শয্যা। নিয়োগ করা হচ্ছে ২ হাজার ৪৭৫ জন নার্সকে।’
পুজোর সময় চিকিৎসা পরিষেবা সুষ্ঠু রাখতে নবান্নে কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব। কন্ট্রোল রুমের নম্বর ১০৭০। এছাড়াও ২২১৪-৩৫২৬ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে ২৪ ঘণ্টা সাতদিন সাহায্য মিলবে ১৮০০৩১৩৪৪৪২২২ নম্বরে। সেই সঙ্গে বাতিল করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সমস্ত ছুটি। তালিকায় স্বাস্থ্যভবনও। পরবর্তী সময়ে তাঁরা ছুটি পাবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন মুখ্যসচিব।
এছাড়া ‘সিঙ্গল ডক্টর্স চেম্বার’ নিয়েও চিকিৎসকদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে নিল সরকার। মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, পাড়ায় পাড়ায় যে সব চিকিৎসক চেম্বারে রোগী দেখছেন, তাঁরা যাতে নির্ভয়ে ও স্বচ্ছন্দে পরিষেবা দিতে পারেন, তার জন্য ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট’-এর খুঁটিনাটি নিয়ম থেকে তাঁদের মুক্ত করা হল।