BLO রিঙ্কুর মৃত্যুতে কমিশন-বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ, SIR প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সরব তৃণমূল

November 22, 2025 | 5 min read
Published by: Raj

 

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৮.০০: শনিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন (BJP) ও কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলল তৃণমূল কংগ্রেস। বুথ লেভেল অফিসার (BLO) রিঙ্কু তরফদারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে (TMC) তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন দলের নেতারা।

তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়, এসআইআর-এর (SIR) অতিরিক্ত চাপ, অবাস্তব সময়সীমা এবং অমানবিক কাজের বোঝা রিঙ্কু দেবীকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে। এই মৃত্যুর জন্য সরাসরি নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রকে দায়ী করল শাসকদল।

এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর ও তৃণমূলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী (Arup Chakraborty) এবং সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল (Pratima Mondal)। সম্মেলনের শুরুতেই রিঙ্কু তরফদারের সুইসাইড নোটের অংশ ভিজ্যুয়ালে দেখানো হয়। অরূপ চক্রবর্তী বলেন, রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে এসআইআর আতঙ্কে। তাঁদের মধ্যে ৩১ জন সাধারণ ভোটার এবং তিনজন বিএলও। তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘রিঙ্কু দেবীর চিঠি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কী চাপের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে বিএলওদের’’।

তৃণমূলের অভিযোগ, যেই কাজ সাধারণত দেড় থেকে দুই বছরের সময়সীমায় সম্পন্ন করা হয়, তা জোর করে এক থেকে দেড় মাসে শেষ করতে বলা হয়েছে। হঠাৎ করে শেষ সময়সীমা এগিয়ে আনা হয়েছে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত। রিঙ্কু তরফদারের কথায়, তিনি কম্পিউটার জানতেন না, তবুও তাঁর উপর ডেটা এন্ট্রি ও আপলোডের অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আবেদন সত্ত্বেও কোনও ছাড় মেলেনি।

অরূপ চক্রবর্তী সরাসরি অভিযোগ করেন, ‘‘এই মৃত্যুর দায় জ্ঞানেশ কুমার, মনোজ আগরওয়াল, অমিত শাহ এবং বিজেপির নেতাদের নিতে হবে।’’ তাঁর কথায়, সার্ভার সমস্যায় সাধারণ মানুষ দিনে কয়েকটি ফর্মও আপলোড করতে পারছিলেন না, সেখানে বিএলওদের উপর টার্গেট ছিল প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ ফর্ম আপলোড করার।

SIR আতঙ্কে রাজ্যে ক্রমাগত মৃত্যু এবং বিজেপি-কমিশনের ভূমিকা প্রসঙ্গে ঝাঁঝালো ভাষায় আক্রমণ করে অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “কাকচিল, শকুনের রাজনীতি এইযে অতৃপ্ত প্রেতাত্মা ভারতীয় জনতা পার্টি। এটাই প্রমাণ করে এরা কতটা বাংলা বিরোধী। আমি আবারও বলছি ক্ষতিপূরণ সেই পরিবারটার পাশে থাকার একটা প্রয়াস মাত্র। সেই মানুষটাকে ফিরিয়ে আনা যাবে না। আমরা পারবো না রিঙ্কু তরফদারকে ফিরিয়ে আনতে। আমরা পারবো না যে মানুষ প্রদীপ কর থেকে শুরু করে খিতিশ মজুমদার যারা চলে গেছেন তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে তার পরিবারের কাছে। কিন্তু তারা চলে গেছেন ভারতীয় জনতা পার্টি আর নির্বাচন কমিশনের অত্যাচারে।”

করোনাকালে মানুষের মৃত্যুর স্মৃতি উস্কে অরূপ বলেন, “২০২১-এ যখন কোভিড হয়েছিল সেকেন্ড ওয়েভে যদি খবরের কাগজের পাতা খুলে দেখেন উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদের গঙ্গার তীরে হাজার হাজার লক্ষ মানুষের যখন মৃতদেহ পড়েছিল। সেখানে যোগী আদিত্যনাথ সরকারে ছিল ওখানে যায়নি তিনিই করেছেন ওই ব্যবস্থা মানুষকে নূন্যতম মরে যাবার পরে যার শেষ অধিকার সৎকার সেটা পায়নি।”

সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা ও বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোভিডের সময় পশ্চিমবঙ্গের মানুষের পাশে থেকেছেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে মজবুত করেছেন আর এখনো যদি যেটা নির্বাচন কমিশনের এই হটকারী সিদ্ধান্তের ফলে যে এসআইআর এর জন্য যে মানুষ মারা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী তিনিই কিন্তু তাদের পাশে আছেন। ইতিহাসের পাতায় যদি কালো অক্ষরে কারোর নাম লেখা থাকে তাহলে ভারতীয় জনতা পার্টির নাম লেখা থাকবে। অমিত শাহর নাম লেখা থাকবে। নরেন্দ্র মোদীর নাম লেখা থাকবে। আর নির্বাচন কমিশনার ভারত সরকারের তাদের নামও লেখা থাকবে এবং পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কমিশনারের এর নামও লেখা থাকবে।”

এরপর বক্তব্য রাখেন সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল। তিনি রিঙ্কুর সুইসাইড নোট উল্লেখ করে বলেন, ‘‘ওই চিঠির ভাষা শুনলে মনে হবে যেন ‘মেঘে ঢাকা তারা’-র নীতার সেই আর্তনাদ-আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম।’’

প্রতিমা মণ্ডল অভিযোগ করেন, তড়িঘড়ি করে এসআইআর চালুর সিদ্ধান্ত কার্যত মানুষের উপর অত্যাচারের সমান। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই বলেছিলেন যে ভোটার তালিকা সংশোধন জরুরি হলেও তা দুই বছরের প্রক্রিয়া। ‘‘আজ ৩১ জন সাধারণ মানুষ ও ৩ জন বিএলও মারা গেছেন। এই দায় কে নেবে?’’ প্রশ্ন সাংসদের।

তিনি আরও বলেন, বিজেপি (BJP) শুধু মুসলিমদের নয়, মতুয়া সহ সব সম্প্রদায়ের বৈধ ভোটারদের বিভ্রান্ত করছে। বনগাঁ থেকে শুরু করে উত্তর ২৪ পরগনা পর্যন্ত বহু এলাকায় ২০০২ সালের বেস লিস্টে ব্যাপক অসঙ্গতি ধরা পড়ছে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘অনেকের ভোটার কার্ড ১৯৯৫ সালে ইস্যু হয়েছে, কিন্তু ২০০২ লিস্টে তাদের নামই নেই।”

SIR-এর নামে প্রকৃত ভোটারদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া বিজেপির প্ল্যান বলে অভিযোগ তৃণমূলের। দলের বক্তব্য, “বাংলার সর্বত্র উদ্বেগজনক হারে প্রকৃত ভোটারদের নাম ভোটার তালিকা থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। শুধু খাপাইডাঙাতেই ৫৮১টি নাম উধাও। কোচবিহার উত্তর বিধানসভার বুথ ৩০৩-এ এবং মাথাভাঙার একাধিক বুথে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী শত শত ভোটারের নাম মুছে ফেলা হয়েছে। নাটাবাড়ির বুথ নম্বর ২-এ তালিকাটি ৭১৭ নাম থেকে নেমে মাত্র ১৪০-এ দাঁড়িয়েছে, আর বুথ নম্বর ১৬০-এ ৪১৭ থেকে ৮৪১ নম্বর পর্যন্ত পুরো অংশটাই গায়েব। অশোকনগরে এক বুথে ভোটার সংখ্যা ‘শূন্য’ দেখানো হয়েছে—আরেক বুথে পুরো সেকশনই হারিয়ে গেছে। আলিপুরদুয়ারের মাঝেরডাবরিতে এমনকি BLO-র নিজের বাবা, মা এবং ভাইয়ের নামও উধাও। এগুলো কোনও সাধারণ ভুল নয় — এটি পরিকল্পিতভাবে ভোটাধিকার লুট অভিযান।”

বিজেপির একাধিক নেতার ভোটার পরিচয় নিয়ে অনিয়মের অভিযোগও তোলেন প্রতিমা মণ্ডল। বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় নাম থাকা অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের ভোটার হয়ে বিজেপির পদ প্রাপ্তি-এমন একাধিক উদাহরণ তুলে আক্রমণ করেন তিনি।

তিনি বলেন, “কর্ণাটকের বিজেপির সাংসদ যিনি বলেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জনগণ মনকে জাতীয় সংগীত রাখা যাবে না তিনিও কি আসবেন কারণ বিজেপি বাংলা এবং বাঙালিদের কি রকম সম্মান করে হেমন্ত বিশ্বশর্মা কি আসবেন যিনি বলেছেন আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি গান গাইলে এফআইআর হবে কারণ ওটা নাকি অন্য দেশের জাতীয় সংগীত ভাবুন দেশটা তৈরি হলো ১৯৭১-এ রবীন্দ্রনাথ গানটা লিখেছেন ১৯০৫ সালে যখন বঙ্গভঙ্গ হচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রাম রাম জন্মানোর আগেই রামায়ণ লিখে ফেলছে। তা আমরা জানতে চাই এই বাংলা বিরোধী জমিদাররা এরা কি এ রাজ্যের প্রচারে আসবে?”

তৃণমূলের দাবি, বৈধ ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হলে দল রাস্তায় নেমে আন্দোলন করবে। একই সঙ্গে বিহারের নির্বাচনে একাধিক বিজেপি নেতার দ্বৈত ভোটদানের অভিযোগও তুলে সতর্ক করে দেন বক্তারা।

দ্বৈত নাগরিক বিজেপির নানা পদে আসীন, অথচ কমিশন কোন‌ও পদক্ষেপ করছে না। এনিয়ে উদাহরণ সহকারে তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য, “বিজেপিরই গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সুভাষ চন্দ্র মণ্ডল একসঙ্গে দুই দেশে ভোটার! ভারতীয় ভোটার তালিকায় উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরে তিনি “সুভাষ চন্দ্র মণ্ডল”, আর বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় তিনি “সুভাষ মণ্ডল”—দুই পরিচয়েই নিবন্ধিত। এমন দ্বৈত নাগরিক পরিচয় থাকা সত্ত্বেও তিনি ২০২৩-এর পঞ্চায়েত ভোটে বুথ-১০০ থেকে নির্বাচিতও হয়েছেন। বাংলায় ভোটার বাতিলের নামে বিজেপি যতই চিৎকার করুক, তাদের নিজের প্রতিনিধি নির্বিঘ্নে দুই দেশের ভোটার পরিচয় নিয়ে চলছে — নির্বিঘ্নে, কোনও চেকিং ছাড়াই!”

এছাড়াও “রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার ঘোষণা করেছেন—“বিজেপি ক্ষমতায় এলে ভারত ও বাংলাদেশ এক হয়ে যাবে, কোনও সীমান্ত থাকবে না।” অথচ সেই সীমান্ত রক্ষা না হওয়ার জন্যই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাকে দোষারোপ করেন—যে সীমান্ত তাঁদের নিজের সাংসদই মুছে দিতে চান! যদি বিজেপি সত্যিই জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে, তাহলে এই সাংসদকে অবিলম্বে বহিষ্কার করা উচিত।”

দ্বৈত নাগরিক (বাংলাদেশ-ভারত) হয়েও বিজেপির নানা পদে আসীন, অথচ কমিশন কোন‌ও পদক্ষেপ করছে না। এনিয়ে উদাহরণ সহকারে তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য, “বিজেপিরই গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সুভাষ চন্দ্র মণ্ডল একসঙ্গে দুই দেশে ভোটার! ভারতীয় ভোটার তালিকায় উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরে তিনি “সুভাষ চন্দ্র মণ্ডল”, আর বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় তিনি “সুভাষ মণ্ডল”—দুই পরিচয়েই নিবন্ধিত। এমন দ্বৈত নাগরিক পরিচয় থাকা সত্ত্বেও তিনি ২০২৩-এর পঞ্চায়েত ভোটে বুথ-১০০ থেকে নির্বাচিতও হয়েছেন। বাংলায় ভোটার বাতিলের নামে বিজেপি যতই চিৎকার করুক, তাদের নিজের প্রতিনিধি নির্বিঘ্নে দুই দেশের ভোটার পরিচয় নিয়ে চলছে — নির্বিঘ্নে, কোনও চেকিং ছাড়াই!”

এছাড়াও “রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার ঘোষণা করেছেন—“বিজেপি ক্ষমতায় এলে ভারত ও বাংলাদেশ এক হয়ে যাবে, কোনও সীমান্ত থাকবে না।” অথচ সেই সীমান্ত রক্ষা না হওয়ার জন্যই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাকে দোষারোপ করেন—যে সীমান্ত তাঁদের নিজের সাংসদই মুছে দিতে চান! যদি বিজেপি সত্যিই জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে, তাহলে এই সাংসদকে অবিলম্বে বহিষ্কার করা উচিত।”

শেষে তৃণমূলের দুই নেতা জানান, রিঙ্কু তরফদার-সহ মৃতদের পরিবারের পাশে রয়েছে তৃণমূল এবং মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই শোকবার্তা জানিয়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘এসআইআর-এর নামে বাংলায় আতঙ্ক ছড়ানো হলে ২০২৬ সালে মানুষই উপযুক্ত জবাব দেবে।’’

 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen