‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে হাওড়া-হুগলিতে ব্যাপক সাড়া
সরকার ‘দুয়ারে’ পৌঁছতেই উপচে পড়ল ভিড়। মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের ‘দুয়ারে সরকার’(Duare Sarkar) কর্মসূচির প্রথম দিনে হুগলি ও হাওড়ার শিবিরগুলিতে বহু মানুষ ভিড় করেন। তবে হুগলির তুলনায় হাওড়ার শিবিরগুলিতে জনসমাগম অনেক বেশি ছিল। করোনা আবহে শিকেয় উঠেছিল দূরত্ব-বিধি।
উলুবেড়িয়া ১ ব্লকের শ্রীকৃষ্ণপুর হাইস্কুলে চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের জন্য শিবির হয়। বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে বলেন, ‘‘এত মানুষ আসবেন বুঝতে পারিনি। এ দিন থেকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আবেদনপত্র নেওয়া শুরু হয়েছে। তাই বহু মানুষ এসেছেন।’’ এই কর্মসূচিতে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প-সহ মোট ১১টি প্রকল্পের সুবিধা মানুষ পাচ্ছেন কিনা, তা জানার চেষ্টা করছে প্রশাসন।
শ্রীকৃষ্ণপুর হাইস্কুলের বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে ১১টি কাউন্টার খোলা হয়। ল্যাপটপ নিয়ে হাজির ছিলেন সরকারি কর্মীরা। আবেদনপত্র দেখে নাম নথিভুক্ত করেন তাঁরা। সেখানে একটি কাউন্টার খোলা হয়েছিল স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করানোর জন্য। ভিড় উপচে পড়ায় আরও তিনটি কাউন্টার খোলা হয়। শিবিরে আসা অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছিল না। ডাকা হয় পুলিশ। তাতেও কাজ হয়নি।
ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রায় ৫ হাজার মানুষ এদিন স্বাস্থ্যসাথীর জন্য নাম নথিভুক্ত করেছেন। লাইনে দাঁড়ানো প্রসাদপুর গ্রামের দীপক জানা বলেন, ‘‘এই প্রকল্পে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা মিলবে। আমি গরিব চাষি। খুব উপকার হবে।’’
দুয়ারে দুয়ারে কর্মসূচিতে এ দিন ১১টি শিবির হয়েছে হুগলিতে (Hoogly)। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও জানান, ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে দু’হাজার শিবির হবে। এ দিন জেলায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ বিভিন্ন শিবিরে এসেছিলেন। তিন জন মহিলার হাতে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কার্ড তুলে দেন জেলাশাসক। দুয়ারে দুয়ারে সরকার কর্মসূচির জন্য হুগলির দায়িত্বপ্রাপ্ত নোডাল অফিসার ওঙ্কারসিংহ মিনা বলেন, ‘‘অধিকাংশ মানুষ কোনও না কোনও প্রকল্পের আওতায় আছেন। বাকিদেরও সামিল করতেই এই প্রচেষ্টা।’’
পান্ডুয়া ব্লকের সিমলাগড়-ভিটাসিন পঞ্চায়েতের তালবোনা রাধারানি উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি শিবিরে বাবাকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন রবীন শীল। জেলাশাসককে সামনে পেয়ে বলেন, ‘‘বাবার বয়স হয়েছে। লাঠি ছাড়া হাঁটতে পারেন না। রোজগার কার্যত নেই। অথচ বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন না।’’ ব্লক আধিকারিকদের জেলাশাসক নির্দেশ দেন, দরখাস্ত জমা নিয়ে শীঘ্রই ওই কাজ যেন করে দেওয়া হয়।
দুপুরে ওই শিবিরে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত শ’পাঁচেক গ্রামবাসী হাজির হয়েছেন সেখানে। জাহিরা গ্রামের রাখি বিবির অভিযোগ, পঞ্চায়েত থেকে বিডিও অফিস— সর্বত্র বিধবা ভাতার আবেদন করেও তা পাননি। এ দিন ফের দরখাস্ত জমা দিয়েছেন। কাটাগোড়ের অভিনয় মালিকের দাবি, খাদ্যসাথী কার্ড পাননি তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে। তালবোনা গ্রামের যুবক প্রেমনাথ মালিকের অভিযোগ, কয়েক মাস আগে আবেদন করলেও মেলেনি জবকার্ড। এ দিন ফের নথিপত্র জমা দেন।
সরকারের এই কর্মসূচিকে কটাক্ষ করে পান্ডুয়ার সিপিএম (CPM) বিধায়ক আমজাদ হোসেনের মন্তব্য, ‘‘পরিষেবা দিতে প্রশাসন যে ব্যর্থ, ভোটের মুখে এই কর্মসূচিই তার প্রমাণ।’’