রামপুরহাটে গোষ্ঠী কোন্দল, অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির
রামপুরহাটে দলীয় কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরের নেতাদের সামনেই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন বিজেপি (BJP) কর্মীরা। বিক্ষোভের মুখে পড়েন একাধিক নেতাও। বিধানসভা নির্বাচনের আগে গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব। যদিও এই ঘটনা নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েনি তৃণমূল। শাসক দলের দাবি, এটা ওদের ধারাবাহিক সিরিয়াল।
এদিন তারাপীঠ মন্দিরে পুজো দিয়ে রামপুরহাট (Rampurhat) শহরে দেশবন্ধু রোডে গৃহ সম্পর্ক অভিযান করেন মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্য সম্পাদক বিবেক সোনকার ও জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। পরে রামপুরহাটের একটি বেসরকারি অনুষ্ঠান ভবনে কার্যকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন তাঁরা। সেখানেই দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতারা দলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে চিঠি তুলে দেন। মৌখিকভাবেও জানাতে থাকেন তাঁরা। অশান্তির আঁচ পেয়ে তিনি তড়িঘড়ি পাশের রুমে এসে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সবাই বিজেপি পরিবারের সদস্য। কৃষক আন্দোলন প্রসঙ্গে তাঁর জবাব, কমিউনিস্টরা ও কংগ্রেস ভুল বুঝিয়ে দিল্লিতে কৃষকদের দিয়ে আন্দোলন করাচ্ছে।
এরপর তিনি বেরিয়ে যেতেই অফিসিয়াল গোষ্ঠীর সঙ্গে বিক্ষুব্ধদের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। অনুষ্ঠান ভবনের নীচে আসতেই দলের জেলা সহ সভাপতি শুভাশিস চৌধুরীর সঙ্গে বিক্ষুব্ধদের হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। পরে সেই অশান্তি চলে আসে প্রকাশ্য রাস্তায়। পথচলতি মানুষজন বলেন, ক্ষমতায় আসার আগেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে ক্ষমতায় এলে কী হবে।
বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী তথা রামপুরহাট বিধানসভার প্রাক্তন কনভেনর কালিদাস পাল বলেন, শ্যামাপদ মণ্ডল জেলা সভাপতি হওয়ার পর তৃণমূলকে সুযোগ করে দিতে ৩৩টি মণ্ডল সভাপতি, সহ একাধিক কার্যকর্তাকে অন্যায়ভাবে সরিয়ে নিজের পচ্ছন্দের লোকজনদের পদে বসিয়েছেন। অপসারিতদের দলীয় কর্মসূচিতে ডাকা হচ্ছে না। তিনি কোটিপতি তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছেন। অথচ লোকসভা ভোটের সময় আমরাই পাঁচটি বিধানসভা থেকে দলকে লিড দিয়েছি। তিনি দলে একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছেন। একইভাবে ক্ষোভ উগরে রামপুরহাট-১ মণ্ডল কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস রায় বলেন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও আরএসএস, সঙ্ঘ পরিবারের কার্যকর্তাদের কোনও গুরুত্ব দিচ্ছেন না জেলা সভাপতি। দ্রুত সমস্যার সমাধান না করলে নির্বাচনে গতবারের থেকেও হারের ব্যবধান আরও বাড়বে।
যদিও এই ইস্যুতে জেলায় বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এই প্রথম নয়। মাস কয়েক আগে জেলার মিটিংয়ে কার্যকর্তাদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়েছে। গত বছরের মে মাসে প্রকাশ্যে অফিসিয়াল গোষ্ঠীর সঙ্গে বিক্ষুব্ধদের মারামারি হয়। গত ১২ অক্টোবর জেলা সভাপতিকে পিকের দালাল অ্যাখ্যা দিয়ে রামপুরহাট শহরে ঢাক ঢোল সহযোগে মিছিল করেন বিক্ষুব্ধ নেতা কর্মীরা। দলের একাংশের মধ্যে বারবার কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসায় ভোটে যে বিজেপিকে বেকায়দায় ফেলবে তা আড়ালে মানছেন একাধিক জেলা নেতা। এ ব্যাপারে জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, অপসারিত মণ্ডল সভাপতিদের জেলা কমিটিতে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা তাতে সন্তুষ্ট নন। ওঁরা পুরনো পদই চাইছেন। পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তা কখনও সম্ভব নয়। ওঁরা যদি দলের কাজ করতে চান, তাহলে স্বাগতম। যদি মনে করেন ভিতরে ভিতরে কারও সঙ্গে যোগসাজশ রেখে দলকে বিপাকে ফেলবেন, তাহলে পার্টি সিদ্ধান্ত নেবে। এদিকে সব দেখে খোঁচা দিতে ছাড়েনি তৃণমূল। কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তৃণমূলের (Trinamool) বিরুদ্ধে পরে লড়বে। আগে ওরা নিজেদের মধ্যে লডুক। আদি ও নব্য বিজেপির মারামারিতে কেউ জখম হয়ে থাকলে তাঁদের চিকিৎসার দায়িত্ব আমরা নেব।