মমতার চাপে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে ‘ধীরে চলো’ নীতি কেন্দ্রের
তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে শেষপর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হল না। ভারত ও বাংলাদেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স ঘিরে ছিল তীব্র জল্পনা। কিন্তু বৈঠকের শেষে জারি হওয়া যৌথ বিবৃতি থেকে স্পষ্ট, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আপাতত অতি সক্রিয়তা দেখাতে প্রস্তুত নয় ভারত সরকার। তিস্তা জলচুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ বারংবার ভারতকে চাপ দিয়েছে যাতে চুক্তি দ্রুত সম্পাদিত করা হয়। ভারত সরকারেরও নীতিগত আপত্তি নেই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লাগাতার এই চুক্তির বিপক্ষে। কারণ তিস্তা চুক্তিতে উত্তরবঙ্গের সর্বনাশ হবে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আজ ভারতের বিদেশমন্ত্রক সতর্ক মন্তব্য করে বলেছে, আলোচনা হয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত ওই চুক্তি অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে।
এছাড়া এদিনের বৈঠকে একঝাঁক সিদ্ধান্ত হয়েছে যার মধ্যে বেশ কিছু নিশ্চিতভাবে ঐতিহাসিক। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) শেখ হাসিনাকে (Sheikh Hasina) ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সাধুবাদ জানিয়েছেন মায়ানমার থেকে অত্যাচারিত হয়ে দেশত্যাগী রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য। বৃহস্পতিবার দুই প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের হলদিবাড়ি থেকে বাংলাদেশের চিলাহাটি পর্যন্ত রেলপথ আবার চালু করে দেওয়ার সবুজ সঙ্কেত দিলেন। আপাতত এই পথে পণ্য চলাচল করলেও, আগামী বছর থেকে চালু হবে যাত্রী চলাচলও।
কলকাতা থেকে ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস, কলকাতা থেকে খুলনা বন্ধন এক্সপ্রেসের পর, আবার দুই দেশের মধ্যে নতুন ট্রেন চালু হচ্ছে। এই রেলপথটি ১৯৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ সালে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এই রেলপথ আবার চালু হবে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্তরের বৈঠকে শিল্প, বাণিজ্য এবং সীমান্ত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ হয়েছে বলেই কূটনৈতিক মহলের ধারণা।
গত বছর নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আর এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত আমাদের সবথেকে বন্ধু রাষ্ট্র। ভারতের সেনাবাহিনীর অবদান ও আত্মত্যাগ বাংলাদেশ ভুলবে না। অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দু’দেশের সম্পর্কের উন্নতিকল্পের অন্যতম মাধ্যম যে আগামীদিনে হতে চলেছে ভ্যাকসিন, সেটা স্পষ্ট করে দেন। এদিন দু’দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছে। খুলনা, রাজশাহি, বরিশালের উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তিস্তা নিয়ে সিদ্ধান্ত না হলেও, মনু, মুহুরি, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার নদীর জল বন্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছো। একইভাবে ভারত-মায়ানমার-থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক হাইওয়ে প্রকল্পে বাংলাদেশও সংযুক্ত হতে চেয়েছে। যা ভারতকে যথেষ্ট উৎসাহী করেছে। সীমান্ত সমন্বয় নিয়ে একঝাঁক নতুন ব্যবস্থা কার্যকর করতে দুই দেশই অগ্রসর হচ্ছে। রাজশাহী জেলায় পদ্মা নদীর রুটে উভয় দেশের মধ্যে একটি বিশেষ করিডরও চালু হতে চলেছে।