সিঙ্গুরে শিল্প গড়তে আগ্রহী ১০০ সংস্থা
সিঙ্গুরে শিল্পে ফিরতে চায় রাজ্য সরকার। সেকথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই (Mamata Banerjee)। তারপর জমি বণ্টনের জন্য আগ্রহপত্র আহ্বান করে রাজ্য। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০০ সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েছে সিঙ্গুরে (Singur) শিল্প গড়ার জন্য। তালিকায় আছে জাপানি সংস্থাও। তবে শিল্প গড়ার জন্য জমির দাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি। জানা গিয়েছে, সরকারি কর্তারা কাঠা পিছু পাঁচ থেকে সাড়ে ছ’লাখ টাকা দাম রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন। অর্থদপ্তর এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
ন্যানো কারখানা গড়ার জন্য সিঙ্গুরের উর্বর জমি টাটাদের দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আর সেই জমি রক্ষার লড়াইয়ে সিঙ্গুরের মাটি আঁকড়ে পড়েছিলেন বিরোধী নেত্রী মমতা। তাপসী মালিকের মৃত্যু সেই কৃষিজমি আন্দোলনে নতুন ইন্ধন জুগিয়েছিল। তিন ফসলি জমিতে কিছুতেই শিল্প করা যাবে না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অনড় মনোভাব শেষ পর্যন্ত সিঙ্গুরের মাটি ছাড়তে বাধ্য করেছিল টাটাদের। বিরাট ধাক্কা দিয়েছিল ক্ষমতাসীন সিপিএমকেও। এদিকে, রতন টাটার স্বপ্নের ন্যানো প্রকল্প গুজরাতে পাড়ি দিলেও বন্ধ হয়ে যায় সেই গাড়ির উৎপাদন। অন্যদিকে, সিঙ্গুর থেকে টাটাদের এমন বিদায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরও ‘শিল্পবিরোধী’ তকমা সেঁটে দেয়। ক্ষমতায় আসার পর থেকে সেই তকমা ঝেড়ে ফেলতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী।
সিঙ্গুরে শিল্প গড়ার জন্য সওয়াল করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। যদিও টাটাদের সেই জমি এখনও পরিত্যক্ত হয়েই পড়ে আছে। তবে তারই কাছে রতনপুরের একটি জমিতে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। জমিটি এখন রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগমের হাতে। তারাই সেখানে পরিকাঠামো গড়ে দেবে শিল্পের জন্য। প্রায় ১০.৭ একর জমিতে প্লট করে শিল্প গড়ার জন্য অনুমতি দেবে রাজ্য। এই ব্যাপারে গত ২৮ ডিসেম্বর আগ্রহপত্র আহ্বান করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান বিপ্লব রায়চৌধুরী বলেন, আমরা সিঙ্গুরের জমিতে শিল্প গড়ার বিষয়ে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি।
ইতিমধ্যেই প্রায় ১০০টি সংস্থা আমাদের কাছে জমি নিতে চেয়েছে। প্রস্তাব এসেছে কৃষিভিত্তিক হরেক শিল্পের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে স্বপ্ন দেখছেন সিঙ্গুরকে ঘিরে, আমরা তা সফল করতে পারব বলেই আশা রাখছি। যে জমিটি আমরা হাতে পেয়েছি, তার অবস্থান ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ ভালো। অমি শীঘ্রই জমিটি দেখতে সিঙ্গুরে যাব এবং কীভাবে পরিকাঠামো গড়া যায়, সেই বিষয়ে আলোচনা করব। আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সিঙ্গুরের জমির জন্য আগ্রহপত্র জমা দিতে পারবে শিল্প সংস্থাগুলি। কিন্তু তার আগে আগ্রহী সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিল রাজ্য। গত বৃহস্পতিবার শিল্পসদনে এই সংক্রান্ত একটি অলোচনাসভা হয়।
সূত্রের খবর, সেখানেই প্রাথমিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, জমির দাম কাঠা পিছু পাঁচ থেকে সাড়ে ছ’লাখ টাকার মধ্যে রাখা হবে। কিন্তু তা এখনই চূড়ান্ত নয়। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে অর্থদপ্তর। শিল্পদপ্তরের কর্তারা বলছেন, জমি নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে যারা চিঠি দিয়েছে, সেই তালিকায় যেমন আছে জাপানি সংস্থা, তেমনই দিল্লি এবং গুজরাতের সংস্থাও রয়েছে। সব মিলিয়ে সিঙ্গুর নিয়ে খুশির হাওয়া শিল্পদপ্তরে।