মোদীর নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে অসম্মান বিদগ্ধদের

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এদিন ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে একটি অলোচনাসভার আয়োজন করা হয়।

January 24, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বলে কথা। তা কি চাট্টিখানি ব্যাপার! শনিবার ন্যাশনাল লাইব্রেরির (National Library)অনুষ্ঠানে হাজির হওয়া বিদগ্ধজনদের মধ্যে তাই সবাইকে হাজির করা হল না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামনে। অথচ প্রত্যেকেই আমন্ত্রিত ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে দেখার অনুমতিই যাঁদের দেওয়া হল না, তাঁদের আটকে রাখা হল একটি ঘরে, পুলিস পাহারায়। উদ্যোক্তাদের চরম অসৌজন্যতার এই ঘটনায় অসম্মানিত বোধ করলেন বহু বিদগ্ধ ব্যক্তি। এমনকী যে অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এত আয়োজন, তার ধারের কাছে ঘেঁষলেন না প্রধানমন্ত্রীও। এদিকে ন্যাশনাল লাইব্রেরির আশপাশের রাস্তা বিজেপির পতাকায় মুড়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই গেরুয়াকরণের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন অনেকে। 

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এদিন ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে একটি অলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক ছিল ন্যাশনাল লাইব্রেরি, ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ এবং কেন্দ্রীয় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রক। সেই আন্তর্জাতিক আলোচনাসভায় আমন্ত্রিত ছিলেন বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, নেতাজি গবেষক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। সকাল থেকেই সেই অনুষ্ঠান শুরু হয়। যাঁরা অনুষ্ঠানে এসেছিলেন, নিরাপত্তার খাতিরে পুলিস ও নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁদের দফায় দফায় পরীক্ষা করেন। সব মিলিয়ে প্রায় শ’দেড়েক অতিথি হাজির ছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। বিকেল তিনটে নাগাদ আলোচনাসভার শেষে ঘোষণা করা হয়, এই সভা থেকে যাঁদের নাম ডাকা হবে, একমাত্র তাঁরাই বাইরে বেরতে পারবেন। তাঁরা আলোচনা সভা থেকে বেরিয়ে সেমিনার হলের বাইরের সিঁড়িতে গিয়ে দাঁড়াবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে গ্রুপ ছবি তুলবেন। 

এরপর একে একে নাম ডাকতে থাকেন ঘোষক। যাঁদের নাম ডাকা হয়, তাঁরা ঘরের বাইরে গিয়ে দাঁড়ান। এক সময় নাম ডাকা থামিয়ে দেন ঘোষক। কিন্তু তখনও সেমিনার হলে বসে রয়েছেন বহু অতিথি। তাঁরা জানতে চান, কী এমন অপরাধ তাঁরা করলেন, যে তাঁদের নাম ডাকা হল না? ঘোষক জানিয়ে দেন, তাঁর কাছে যাঁদের নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাঁরাই একমাত্র সভাঘর ছেড়ে সিঁড়িতে দাঁড়াতে পারবেন, বাকিরা নয়। এরপর অবশ্য সাফাই দিতে আসরে নামেন আয়োজকদেরই একজন। তিনি ঘোষণা করেন, সবার নাম দিল্লিতে পাঠানো হলেও, তা ছেঁটেছে ‘স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ’ বা এসপিজি। দিল্লি থেকে সেই তালিকা এসেছে। তার বাইরে কোনও ব্যক্তিকে অনুমতি দেওয়া হবে না। যাঁরা ঘরে আছেন, তাঁরাও সেই ঘর ছেড়ে বেরতে পারবেন না। কারণ ‘ভিভিআইপি মুভমেন্ট’ হচ্ছে! ঘরের সব ক’টি দরজা আটকে দাঁড়িয়ে থাকে এসপিজি কমান্ডোরা।  

যে অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এতটা অপমানিত হতে হল বিশিষ্টদের একাংশকে, সেই অনুষ্ঠানের ধারের কাছে এদিন আসেননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিকেল ৩.৫২ মিনিটে ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে ঢোকেন। লাইব্রেরির মাঠে নেতাজির মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানান। মাঠ প্রদক্ষিণ করেন। যে অতিথিরা সেমিনার হলের সিঁড়িতে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে ছবি তোলেন। তার পর ভিক্টোরিয়ায় মেমোরিয়ালের উদ্দেশে রওনা হন। যে অতিথিদের ঘরের মধ্যে রীতিমতো পুলিস পাহারায় আটকে রাখা হল, তাঁদের অনেকেই এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনবেন বলে। একবার সামনে থেকে তাঁকে দেখার সাধও ছিল অনেকেরই। কিন্তু সেসব আশায় জল ঢাললেন উদ্যোক্তারাই। কেন অতিথিদের এভাবে দু’দলে বিভক্ত করা হল, তার প্রকৃত কারণ জানতে আগ্রহী ছিলেন অনেকেই। কারণ আয়োজকদের যুক্তি গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়নি অনেকের। একই অনুষ্ঠানে রীতিমতো আমন্ত্রণ করে ডেকে এনে বিশেষ কয়েকজনকে কেন খাতির করা হল, বাকিদেরই বা কেন অপমান করা হল, তা দিন শেষে অজানাই রয়ে গেল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen