গত মরশুমের তুলনায় কৃষকদের থেকে ১০ লক্ষ টন বেশি ধান কিনতে সমর্থ রাজ্য
গত খরিফ মরশুমের এই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ লক্ষ টন বেশি ধান কৃষকদের থেকে কিনতে সমর্থ হল রাজ্য সরকার। গত খরিফ মরশুমে জানুয়ারি মাসের শেষে সরকারি উদ্যোগে ১৮ লাখ টন ধান কেনা হয়েছিল। এবার সেই পরিমাণ প্রায় ২৮ লাখ টন ছুঁয়েছে। চলতি খরিফ মরশুমে সরকারি উদ্যোগে ধান কেনা নভেম্বর মাসে শুরু হয়। খাদ্যদপ্তরের শীর্ষকর্তারা মনে করছেন, চলতি খরিফ মরশুমে কৃষকদের কাছ থেকে রেকর্ড পরিমাণ ধান কেনার দিকে যাচ্ছে সরকার। এখনও পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগে সবথেকে বেশি পরিমাণ (প্রায় ৪৯ লাখ টন) ধান কেনা হয়েছে গত (২০-২১) খরিফ মরশুমে। এবার তা ৫০ লাখ টন ছাড়াতে পারে বলে মনে করছেন খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকরা।
গতবারের মতো এবারও রাজ্য সরকারের ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪৬ লাখ টন। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা এফসিআই-কে এবারও রাজ্য সরকারের তরফে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) থেকে ৬ লাখ টন ধান কিনতে বলা হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এফসিআই রাজ্যে ধান কেনা কার্যত শুরু করেনি বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। খাদ্যদপ্তরের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, প্রয়োজনে নবান্নের (Nabanna) বিশেষ অনুমোদন নিয়ে লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি পরিমাণ ধান এবারও কিনতে হতে পারে রাজ্যকে। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় সব রেশন গ্রাহকের জন্য বিনা পয়সায় খাদ্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ফলে রেশনে চালের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই লকডাউন ও করোনা সংক্রমণের মধ্যেই মে মাস থেকে ফের জোর কদমে ধান কেনার অভিযানে নামে খাদ্যদপ্তর। রেকর্ড পরিমাণ ধান কেনাও হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর আগামী জুন মাস পর্যন্ত বিনা পয়সায় রেশনে খাদ্য দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিয়েছে খাদ্যদপ্তর। মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সভায় বলছেন, জুন মাসের পরও রেশনে বিনা পয়সায় খাদ্য দেওয়া অব্যাহত থাকবে। রেশন গ্রাহকের সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে রেশনের জন্য চালের চাহিদা আগামী দিনে আরও বাড়বে বলে মনে করছে খাদ্যদপ্তর (Food Department)। রেশন ছাড়াও স্কুলের মিড ডে মিল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য চাল সরবরাহও খাদ্যদপ্তর করে। আগে ৩৫-৩৬ লাখ টন ধান কেনা হলেও চাহিদা মেটানো যেত। এখন চাহিদা অনেকটা বেড়েছে।
ধান (Paddy) সংগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদিত চাল মজুত করা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি উদ্যোগে ধান সংগ্রহ করার পর তা ভানিয়ে চাল উৎপাদনের জন্য রাইস মিলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্ত চাল উৎপাদনের পর তা দ্রুত যাতে সরকার নিয়ে নেয়, তার জন্য রাইস মিল মালিকরাও খাদ্যদপ্তরকে চাপ দিচ্ছেন। রাইস মিল মালিকদের সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, বিষয়টি তিনি খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে জানিয়েছেন। বেশি পরিমাণে চাল রাখতে রাইস মিল মালিকরা সমস্যায় পড়ছেন। খোলা জায়গায় ধান-চাল ফেলে রাখলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। চালের গুণগত মান খারাপ হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। রাজ্য সরকারের গুদামে প্রায় ১৩ লাখ টন চাল মজুত করার ব্যবস্থা এখন আছে। আরও চাল মজুত করার জন্য গুদাম তৈরি হচ্ছে।