খড়্গপুরে রেলমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ তৃণমূলের
বিপাকে পড়ে মঙ্গলবার প্রচারের শেষদিন খড়্গপুরে রেলমন্ত্রীকে নির্বাচনী প্রচারে নামাল বিজেপি। রেল শহরে রেলকর্মীরাই ছিলেন তাঁর টার্গেট। সেই লক্ষ্যে রেলের একটি হলে রেলকর্মীদের ডেকে তাঁদের বিজেপিকে(BJP) ভোট দেওয়ার আবেদন জানানোর পাশাপাশি নানা প্রতিশ্রুতিও দিলেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল(Piyush Goyal)। বস্তি এলাকায় বড় বাড়ি তৈরি করে পুনর্বাসনেরও প্রতিশ্রুতিও তিনি দিয়েছেন। কী কী কাজ হচ্ছে, তারও ফিরিস্তি দেন তিনি। নির্বাচনের মুখে এভাবে প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় রেলমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। রেলমন্ত্রী কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, খড়্গপুরের উন্নয়নের স্বার্থে আপনারা, আপনাদের পরিবার, আত্মীয় পরিজন সবাই বিজেপি প্রার্থীকে জয়ী করুন। আমাদের প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে জেতাতে হবে।
প্রসঙ্গত, ’১৬-র বিধানসভা নির্বাচনেও তৎকালীন রেলমন্ত্রীকে এনে নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সেবার বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ প্রায় ছ’হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। পরে উপ নির্বাচনে অবশ্য বিজেপি প্রার্থী আর জিততে পারেননি। জয় ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। এবারও গত বিধানসভা নির্বাচনের মতোই রেলকর্মীদের ভোটের দিকে তাকিয়ে রেলমন্ত্রীকে প্রচারে নামানো হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার বলেন, রেলমন্ত্রী ভোটের আগে এসে যেভাবে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা নির্বাচনী বিধিভঙ্গের সমান। গত নির্বাচনেও রেলমন্ত্রীকে এনে একইভাবে নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেইসব প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। এবারও ভোটারদের প্রলোভিত করা হল। কিন্তু এতে কোনও লাভ হবে না। রেলমন্ত্রী বিধি ভাঙলেও কিছু করার নেই। কারণ কমিশনে অভিযোগ জানিয়ে কোনও লাভ হবে না। রেলমন্ত্রী বলেন, আমি শুনলাম, এখানে ৬৫টি বস্তি আছে। সেখানে বহু মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেন। কিন্তু ওই এলাকায় কোনও উন্নয়ন হয়নি। আমরা সেখানে পিপিপি মডেলে উন্নয়ন করতে চাই। বড় বাড়ি করে সেখানে তাদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে। কিন্তু পিপিপি মডেলে বিরোধীরা বাধা দিচ্ছে। এখানের সরকারও এব্যাপারে রেলকে সহযোগিতা করেনি। ‘ডবল ইঞ্জিনে’র সরকার হলে সেই কাজ হবে। কারণ বাধা দেওয়ার কেউ থাকবে না। তাই এখানে বিজেপি প্রার্থীকে জেতাতে হবে। বিজেপি সরকার তৈরি করতে হবে।
তিনি দাবি করেন, রাজ্যে ২০৭টি আসন নিয়ে বিজেপির সরকার হবে। কারণ দিদির প্রতি আর জনতার বিশ্বাস নেই। কর্মীদের তিনি বলেন, রেল শহর খড়্গপুরকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে ভোট দিন। সুন্দর শহর গড়ে তোলার জন্য ও কাজ করবে। এখানে এসে দেখলাম, বিরোধীরা ভুল প্রচার করছে। রেল আপনাদের সম্পত্তি, আপনাদেরই থাকবে। কেউ হাত লাগাতে পারবে না।
বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি শমিত দাশ বলেন, এদিন মূলত রেল কর্মচারী, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী, ব্যবসায়ী, বস্তি এলাকার প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছিল। জেলা সহ সভাপতি গৌতম ভট্টাচার্য বলেন, মন্ত্রী বস্তির সমস্যা ও তার উন্নয়নের কথা বলেছেন। তা কিছুতেই নির্বাচনী বিধিভঙ্গের মধ্যে পড়ে না। মুখ্যমন্ত্রীও তো প্রচারে গিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
এদিন খড়্গপুর শহরে বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী গোলবাজার থেকে ইন্দা মোড় পর্যন্ত রোড শো করেন। সেখানে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভালোই ভিড় হয়েছিল। তবে রোড শো-র জন্য যেপথ বেছে নেওয়া হয়েছিল, সেখানে অবশ্য বসতি নেই বললেই চলে। এদিনই বিজেপির আর এক সংসদ সদস্য তথা গায়ক মনোজ তেওয়ারিও খড়্গপুর শহরে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে রোড শো করেন।