সিঙ্গুরে বুথ থেকে বুথে দৌড়ে বেড়ালেন বেচারাম, অফিসে ঝিমোলেন মাষ্টারমশাই
টাটাদের কারখানার কাছেই দিল্লি রোডের ধারে তৈরি হচ্ছে বহুতল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আওতায় থাকা নারকোটিক দপ্তরের প্রস্তাবিত ভবন সেটি। সেখানেই আপাতত অস্থায়ী পার্টি অফিস বানিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী ‘মাস্টারমশাই’ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। সেখানে বসেই সকাল থেকে ভোট পরিচালনা করছেন তিনি। সকাল সাতটার মধ্যে ভাত, ডাল, ভাজা, দু’ রকমের তরকারি এবং চাটনি খেয়ে সেই অফিসে এসে ঘাঁটি গেড়েছেন তিনি। তবে সারাদিন মাঝে মাঝে তন্দ্রা আসছে, ঝিমুনি আসছে, হাই উঠছে। দুপুরের দিকে একটু তন্দ্রা এসেছে, তখনই একজন ছুটে এসে খবর দিল, ৭৩ নম্বর বুথে গোলমাল হচ্ছে। সেখানে এজেন্টকে বসতে দেওয়া হচ্ছে না। একটু বিচলিত হলেন মাস্টারমশাই। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা কীভাবে করা হবে, তা অবশ্য দলীয় কর্মীরা ঠিক করে নিলেন। মাস্টারমশাই অবশ্য বললেন, খুচরো কিছু ঘটনা ছাড়া ভোট মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই হচ্ছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছেন। প্রশ্ন করলাম, এই এলাকা ছেড়ে যাবেন না? ঘুরে দেখবেন না ভোট কেমন হচ্ছে? রবীন্দ্রনাথবাবু বললেন, প্রয়োজন পড়লে যাব বৈকি। কিন্তু এখনও তেমন কিছু হয়নি। বিজেপির উপরেই ভোটাররা আস্থা রাখছে বলেই মনে করছিলেন মাস্টারমশাই। বললেন, অন্যান্য বিধানসভা কেন্দ্রে কী হয়েছে, বলতে পারব না। তবে আমার এলাকায় শুধু দুর্নীতি হয়েছে। আর আমাকে লাগাতারভাবে অপমানিত হতে হয়েছে। ভোটাররা এর জবাব দেবেন।
তারকেশ্বর রোডের ছিনার মোড় থেকে একটু ভিতরের দিকে ঢুকলেই পরপর কয়েকটা বুথ চোখে পড়ে। সব ক’টিতেই মাঝারি মাপের লাইন। ভোট পর্ব চলছে নিরুত্তাপভাবে। একটু দূরে তৃণমূলের ক্যাম্প। ভোটের দিকে নজর কর্মীদের। সঙ্গে মুড়ি-ঘুগনি। সব ঠিকঠাক চলছে? তৃণমূলের ক্যাম্প থেকে এক ব্যক্তি মুচকি হেসে বললেন, সবকিছু যে ঠিকঠাক চলছে, তা বলি কী করে! জানালেন, অনেকেই ভোটের কাজে নামেননি। অর্থাৎ দলেরই কিছু কর্মী সাবোতাজ করছে, স্পষ্ট জানালেন তিনি। পাশাপাশি বললেন, এসব করে অবশ্য খুব একটা লাভ হবে না। সকাল ন’টা পর্যন্ত এই বুথে ২০০ ভোটার ভোট দিয়ে চলে গিয়েছেন। পরিস্থিতি দেখেই বোঝা যায়, ছোটখাটো দু’একজন দলীয় কর্মী ব্যাগড়া দিলে কিচ্ছু যায় আসে না। আমরা জিতছি।
তৃণমূল কর্মীদের গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা গেলেও জেতার ব্যাপারটি এখনই নিশ্চিত করে বলতে চান না সিঙ্গুরের সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য। বেড়াবেড়ি বাজারের সামনে যখন তাঁর সাদা গাড়িটি এসে থামল, তখন মাথার উপর চড়া রোদ। তবু ক্লান্তি এতটুকু ছাপ ফেলেনি। চোখেমুখে সেই চেনা হাসি। বললেন, সিপিএম এলাকায় যে মাটি খুইয়েছিল, তার বেশির ভাগটাই উদ্ধার হয়েছে। গত একমাস ধরে প্রচারে যে সাড়া পেয়েছি, তাতে আমি অনেকটাই আশাবাদী, ভালো ফল করব। বড়ায় বিজেপি এবং এই বেড়াবেড়িতে তৃণমূল কিছুটা ভালো ফল করলেও বাকি জায়গায় আমরা ঠিকই আছি। সৃজনের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানের দাদা অরুণ ঘোষ। তৃণমূলের এই কর্মীও খানিকটা মজা করেই বললেন, আপনারা ভালো ফল করলেই আমাদের মঙ্গল!
তবে কার কিসে মঙ্গল, তা নিয়ে পাটিগণিতের অঙ্ক কষার ফুরসৎ পাননি তৃণমূল প্রার্থী বেচারাম মান্না। এক বুথ থেকে অপর বুথে দিনভর ঘুরে বেড়িয়েছেন চরকির মতো। গোপালনগর, বৈঁচিপোতা, বিঘাটি, আনন্দনগর, দিয়াড়া বা নসিবপুরে টহলদারি করেছেন তিনি। ভোট পর্ব শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বাড়ি ফিরছিলেন বেচারাম মান্না। গাড়িতে বসে বললেন, নিজের ভোট দেওয়ার পর সকাল সাড়ে সাতটা থেকে এলাকায় টহল দিতে শুরু করেছিলাম। যখন সন্ধ্যা গড়িয়ে গেল, তখন ২৩০টা বুথ ঘোরা হয়ে গিয়েছে। সকালে একবার মুড়ি-আলুর দম খাওয়ার ফুরসৎ পেয়েছিলেন, আর দুপুরে সামান্য ভাত। প্রার্থী বললেন, এতদিন ধরে প্রচার করেও যে মানুষগুলোর সঙ্গে দেখা হয়নি, ভোট দিতে এসে তাঁদের সঙ্গে দেখা হল। শুভেচ্ছা বিনিময় হল। আমি আগেই বলেছিলাম রেকর্ড ভোটে জিতব। সারাদিন ঘুরে সেই দাবি থেকে একচুলও সরছি না।