আন্তর্জাতিক বাজারে লাগাতার কমেছে গ্যাসের দাম, সুবিধা থেকে বঞ্চিত দেশবাসী
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের চড়া দরে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। আগুনে দামে হাঁড়ি চড়ানোই দায়। সেখানে গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে রান্নার গ্যাসের দাম। কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুন মাসেও কলকাতাবাসীকে রান্নার গ্যাস কিনতে হবে ৮৩৫ টাকা দিয়ে। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারদরের উপর নির্ভর করেই রান্নার গ্যাসের দাম ধার্য করা হয়। এদিকে তথ্য বলছে, গত তিন মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে লাগাতার দাম কমেছে গ্যাসের। কিন্তু কেন্দ্র সেই সুবিধা কোটি কোটি দেশবাসীকে দিতে নারাজ। অর্থাৎ, আমজনতার পকেট শুষেই নিজেদের ভাঁড়ার ভরাতে ব্যস্ত নরেন্দ্র মোদি সরকার, বলছে সংশ্লিষ্ট মহল। আর মুখ বুজে এই জুলুম হজম করতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
দেখে নেওয়া যাক, গত তিন মাসে ১৪.২ কেজি রান্নার গ্যাসের জন্য কত টাকা দাম চোকাতে হয়েছে গ্রাহকদের। গত মার্চে কলকাতায় সিলিন্ডারের মূল্য ছিল ৮৪৫ টাকা। এপ্রিলে অবশ্য তা ১০ টাকা কমায় কেন্দ্র। দাম হয় ৮৩৫ টাকা। মে এবং জুন মাসে তা অপরিবর্তিত রয়েছে। এবার আসা যাক আন্তর্জাতিক বাজারদরে। রান্নার গ্যাস উৎপাদনে ব্যবহৃত দু’টি মূল উপাদান—প্রোপেন ও বিউটেন। ‘সৌদি আরামকো’ নামের বিশ্বখ্যাত সংস্থাটি এই দুই উপাদানের যে দর ঘোষণা করে, সেটাই আন্তর্জাতিক বাজারে দামের অন্যতম মাপকাঠি হিসেবে গ্রাহ্য হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনও মাসে গ্যাসের দর কত হবে, তা নির্ভর করে আগের মাসে ওই দুই উপাদানের বাজারদরের ওঠানামার উপর। সেই মতো গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতি টন প্রোপেনের দর ছিল ৬০৫ মার্কিন ডলার। মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসে তা ছিল যথাক্রমে ৬২৫, ৫৬০ এবং ৪৯৫ ডলার। অর্থাৎ মার্চ থেকে প্রোপেনের দর লাগাতার কমেছে। অন্যদিকে, বিউটেনের দর গত ফেব্রুয়ারিতে টন পিছু ৫৮৫ ডলার ছিল। পরবর্তী তিন মাসে তা গিয়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৫৯৫, ৫৩০ এবং ৪৭৫ ডলারে। অর্থাৎ, এক্ষেত্রেও মার্চ থেকে লাগাতার দাম কমেছে বিউটেনের। অথচ, ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে রান্নার গ্যাসের দামে তার কোনও প্রভাবই পড়েনি।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাব কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই এদেশে টের পাওয়া গিয়েছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের যুক্তি, বিউটেন ও প্রোপেনের দর মার্চের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে চড়া ছিল। তাই মার্চ মাসে কলকাতায় রান্নার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয় ২৫ টাকা। মোদ্দা কথা, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে জনগণের থেকে ঘাড় ধরে তা আদায় করে নিয়েছে সরকার। কিন্তু, বিদেশে দাম অনেকটা কমলেও তার ছিটেফোঁটা সুবিধা পায়নি সাধারণ মানুষ। অথচ, পরপর কয়েক মাস বাণিজ্যিক গ্যাসের দাম কমেছে। চলতি মাসেও তা কমেছে ১২৩ টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর থেকেই স্পষ্ট যে, কেন্দ্রীয় সরকার বাণিজ্যিক গ্যাসের দামে আন্তর্জাতিক বাজারদরের প্রভাব কিছুটা বজায় রেখেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের থেকে অন্যায্যভাবে টাকা উশুল করতে তারা বদ্ধপরিকর। এই অত্যাচার থেকে বাদ যাননি উজ্জ্বলা যোজনার আওতায় থাকা আট কোটি গরিবও। কারণ, সাধারণ গ্রাহকদের মতো তাঁরাও ভর্তুকি পান না বললেই চলে। বাজারদরেই সিলিন্ডার কিনতে হয় তাঁদের।