মোদীর যাবতীয় অসাফল্যের দায় নিয়েই ইস্তফা দিতে বাধ্য হলেন ১২ জন মন্ত্রী?
সব ব্যর্থতাই মন্ত্রীদের। তাই বিগত দু’বছরে দ্বিতীয় মোদী সরকারের যাবতীয় অসাফল্যের দায় মাথায় নিয়ে ইস্তফা দিতে বাধ্য হলেন ১২ জন মন্ত্রী। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শ্রম, সার ও রসায়ন, আইন, তথ্য-প্রযুক্তি, তথ্য-সম্প্রচার, পরিবেশ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের পূর্ণ ও রাষ্ট্রমন্ত্রীদের ‘বরখাস্ত’ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এইসব মন্ত্রকের দায়িত্বে এলেন একঝাঁক নতুন মুখ। বহু প্রতীক্ষিত মন্ত্রিসভার রদবদল হল বুধবার সন্ধ্যায়। নজিরবিহীনভাবে সরকারের মেয়াদের মাঝপথে একসঙ্গে ৪৩ জন মন্ত্রী শপথ নিলেন। তাঁদের মধ্যে ৩৬ জনই নতুন। একে রদবদল বলা হলে অবশ্য কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। আসলে গোটা মন্ত্রিসভাকে ঢেলে সাজা হল। বিরোধীরা বলছে, এই সিদ্ধান্ত আদতে পরোক্ষে স্বীকার করা যে, সরকারের সিংহভাগ মন্ত্রকই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।
সবথেকে বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষ বর্ধনকে সরিয়ে দেওয়া। কোভিড এখনও পুরোদমে সক্রিয়। গোটা দেশ আশঙ্কায় তৃতীয় ঢেউ নিয়ে। এতদিন দেশ-বিদেশের তাবৎ সমালোচনাকে হেলায় উড়িয়ে মোদী সরকার দাবি করেছে, অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে সামাল দেওয়া হয়েছে কোভিড সঙ্কট। তাহলে স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া হল কেন? প্রশ্ন অবশ্য সেখানেই সীমাবদ্ধ নয়। মন্ত্রিসভার রদবদলে ধাঁচ থেকে স্পষ্ট যে, যাবতীয় ব্যর্থতার দায় অন্য মন্ত্রকের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। দায়মুক্ত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কোভিড মোকাবিলা অথবা ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্টে সর্বপ্রধান দায়িত্ব নিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এবং সর্বোচ্চ টাস্ক ফোর্স। কোভিড প্রোটোকল পালন কিংবা লকডাউনের নির্দেশিকা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। রাজ্যে রাজ্যে প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এই প্রতিটি পদক্ষেপকেই সরকারের সক্রিয়তা ও সাফল্যের তকমা দেওয়া হয়েছে। অথচ, তারপর স্বাস্থ্যমন্ত্রীই বরখাস্ত!
ধুমধাম করে উচ্চশিক্ষার সংস্কারে জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রকাশ করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল। সেই নীতিকে যুগান্তকারী আখ্যা দিয়ে পৃথক ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এদিনের রদবদলে সেই পোখরিয়ালকেই মন্ত্রিসভা থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। ইস্তফা দিয়েছেন ট্যুইটারের বিরুদ্ধে জেহাদে নামা আইন ও তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে তথ্য সম্প্রচার ও পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকরকে। সার ও রসায়নমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া, শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গওয়ারও ইস্তফা দিয়ে বুঝিয়েছেন কর্মসংস্থানে ব্যর্থ এই সরকার। বাংলা থেকে মনোনীত বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরীকেও মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে বাংলার চারজন বিজেপি এমপি স্থান পেয়েছেন মন্ত্রিসভায়। অথচ, এবারও পূর্ণ মন্ত্রক পেল না পশ্চিমবঙ্গ। সকলেই রাষ্ট্রমন্ত্রী। মতুয়াদের মন জয় করতে শান্তনু ঠাকুর, জঙ্গলমহলকে ইতিবাচক বার্তা দিতে সুভাষ সরকার, উত্তরবঙ্গের প্রতি বিজেপি কতটা যত্নশীল সেটা প্রমাণ করতে নিশীথ প্রামাণিক এবং জন বারলাকে মন্ত্রী করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইনি সেই জন বারলা, যিনি উত্তরবঙ্গকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নতুন রাজ্যের দাবিতে সবথেকে বেশি সরব।
মোদীর নয়া মন্ত্রিসভায়, স্বাধীনতার পর এই প্রথম ত্রিপুরা পেল প্রথম এক ভূমিকন্যা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী—প্রতিমা ভৌমিক। এর আগে ত্রিপুরা থেকে রাজ্যসভা ও লোকসভায় নির্বাচিত হয়ে দু’জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন। ডঃ ত্রিগুণা সেন এবং সন্তোষমোহন দেব। কিন্তু, তাঁরা কেউই ত্রিপুরার ভূমিপুত্র ছিলেন না। নতুন মন্ত্রিসভার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একসঙ্গে এত বেশি অনগ্রসর শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব আগে হয়নি। ১২ জন তফসিলি জাতি, ৮ জন তফসিলি উপজাতি, ২৭ জন ওবিসিভুক্ত মন্ত্রী এখন মোদী মন্ত্রিসভায়। দলবদলুদের পুরস্কার দিতে কার্পণ্য করেনি মোদী সরকার। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং নারায়ণ রানে পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। ১২ জন মন্ত্রীকে (Cabinet Reshuffle) ব্যর্থতার দায় নিয়ে ইস্তফা দিতে হয়েছে। কিন্তু, গত দু’বছরে সবথেকে বেশি ব্যর্থতার অভিযোগ কোন মন্ত্রকের বিরুদ্ধে? উত্তরটা হল অর্থমন্ত্রক। নির্মলা সীতারামনকে স্বপদে বহাল রেখে প্রধানমন্ত্রী বার্তা দিলেন, অর্থনীতির পারফরম্যান্সে তিনি সন্তুষ্ট! বরখাস্ত হওয়া পূর্ণমন্ত্রীদের মধ্যে একটি বিশেষ সাদৃশ্যও রয়েছে। তাঁরা সকলেই বিজেপির দীর্ঘকালের সদস্য। কেউ কেউ ছিলেন প্রথম এনডিএ সরকারেও। নয়া রদবদলের পর বাজপেয়ি-আদবানি টিমের সামগ্রিক বিদায় ঘটল।
এবার নতুন মুখ। নতুন বিজেপি। টিম মোদী!