পুরনো বিলগ্নিকরণই নয়া মোড়কে পেশ করছে মোদী সরকার
এ যেন সেই শেয়াল পণ্ডিত আর কুমিরছানার গল্প! চমক দিতে গিয়ে সেই গল্পেই আস্থা রাখছে মোদী সরকার। পুরনো বিলগ্নিকরণ প্রকল্পগুলিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পেশ করা হচ্ছে নতুন মোড়কে, গালভরা নামে। তার বড় প্রমাণ সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ঘোষণা করা ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন প্রকল্পটি। সেই অ্যাসেট পাইপলাইনের ‘মার্কি প্রজেক্ট’গুলির মধ্যে অন্যতম ‘স্টেশন রিডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ বা দেশের ৪০০টি রেলস্টেশনের আধুনিকীকরণ। অথচ সরকারি তথ্য বলছে, পিপিপি মডেলে সেই প্রকল্প শুরু হয়ে গিয়েছে বছর চারেক আগেই। ইতিমধ্যে ১২৫টি স্টেশনে চলছে আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়া। তালিকায় আছে বাংলার আসানসোল এবং কলকাতা স্টেশনও। সেখানে অবশ্য কাজ রয়েছে একেবারে প্রাথমিক স্তরে।
এখানেই শেষ নয়, ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইনে দেশের ১০৯টি রুটে ১৫০-র বেশি বেসরকারি ট্রেন চালানোর ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। জানানো হয়েছে সারা দেশে হাওড়া সহ ১২টি ক্লাস্টার তৈরির কথাও। কিন্তু আদতে ওই ঘোষণাও এক বছর আগে করে দিয়েছে রেল বোর্ড। যদিও সেই বেসরকারি ট্রেন চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে রেলমন্ত্রককে। সরকারি সূত্রের খবর, এই সংক্রান্ত দরপত্রই কার্যত বাতিল হওয়ার মুখে। উল্লিখিত ক্ষেত্রের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চালু আছে বলেই ইতিপূর্বে জানিয়েছেন রেল বোর্ড।
রেলমন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি স্টেশন রিডেভেলপমেন্টের প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। তখন তালিকাভুক্ত ছিল দেশের মোট ২৩টি রেলওয়ে স্টেশন। দেশব্যাপী ৪০০টি স্টেশনের আধুনিকীকরণের জন্য রেলের আনুমানিক খরচ হবে এক লক্ষ কোটি টাকা। প্রতিদিন লক্ষাধিক যাত্রী যাতায়াত করেন, প্রাথমিকভাবে এমন স্টেশনগুলিকেই পিপিপি মডেলে আধুনিকীকরণের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইনে তার লক্ষ্যমাত্রাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে কেন্দ্র। বলা হয়েছে, ২০২১-’২২ আর্থিক বছরে শেষ হবে ৪০টি স্টেশনের কাজ। পরবর্তী তিনটি অর্থবর্ষে সম্পন্ন হবে ১২০টি করে বাকি ৩৬০টির কাজ। রেল বোর্ড সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ইন্ডিয়ান রেলওয়ে স্টেশন ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (আইআরএসডিসি) ৬৩টি এবং রেল ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (আরএলডিএ) ৬০টি স্টেশনের কাজ শুরু করে দিয়েছে।
পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে রেলের অধীনস্থ আইআরএসডিসি এবং আরএলডিএ-ই দেশজুড়ে এই কাজ করছে। সদ্য ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইনে সেগুলিই ঘোষণা করা হয়েছে বলে দাবি মোদি সরকারের। সেই তালিকার অন্যতম গুজরাতের গান্ধীনগর ক্যাপিটাল রেলওয়ে স্টেশন। অথচ ঘটনা হল, রিডেভেলপমেন্টের পর গত ১৬ জুলাই সেটির উদ্বোধন করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই। আধুনিকীকরণের কাজ প্রায় শেষ মধ্যপ্রদেশের হাবিবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনেরও। ফলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে মোদী সরকারের এই চমক নিয়ে।