মোদী সরকারের নীতি হীনতার কারণেই দেশে কয়লা সঙ্কট?

কোল ইন্ডিয়ার নজর কয়লা থেকে সরে যাওয়াই এর কারণ কি না, তা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।

October 10, 2021 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

স্বচ্ছ ভারত অভিযানে শৌচালয় গড়তে গিয়ে কি কয়লা উৎপাদন তদারকির কাজ থমকে গিয়েছে? প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে। অগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে তিন মাস হতে চলল কয়লার টানাটানি চলছে। দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্যে আঁধার ঘনানোর আশঙ্কা। কোল ইন্ডিয়ার নজর কয়লা থেকে সরে যাওয়াই এর কারণ কি না, তা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।

সরকারি তথ্য বলছে, প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০১৪-র অক্টোবরে স্বচ্ছ ভারত অভিযান ঘোষণার পরেই কোল ইন্ডিয়া ২৩৫ কোটি টাকা খরচ করে ১ লক্ষ বাড়িতে ও ৬ হাজার স্কুলে শৌচালয় তৈরির লক্ষ্য নেয়। কয়লা থেকে নজর তখনই সরে যায় বলে আজ তোপ দেগেছেন প্রাক্তন কয়লা সচিব অনিল স্বরূপ। তাঁর মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে কয়লা মন্ত্রকের কর্তারাও বলছেন, নতুন কয়লা খনির সন্ধান তখন আর কোল ইন্ডিয়ার অগ্রাধিকারে ছিল না।

ইউপিএ সরকারের আমলে কয়লা খনি বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট যাবতীয় খনি বণ্টন বাতিল করে দিয়েছিল। সেই ধাক্কা কাটিয়ে কয়লার উৎপাদন বাড়াতে কয়লা মন্ত্রক ও কোল ইন্ডিয়ার কর্তাদের কালঘাম ছুটে গিয়েছিল। ২০১৪ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। কিন্তু তার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে স্বচ্ছ ভারত অভিযানে নেমে কোল ইন্ডিয়া অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে শৌচালয় তৈরিতে নেমে পড়ে। কয়লা খনি অঞ্চলের স্কুলে, বাড়িতে বাড়িতে শৌচালয় তৈরিই কোল ইন্ডিয়ার কর্তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় উপরে চলে আসে।

তারই ধাক্কায় এখন দেশের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লার অভাবে রাজধানী দিল্লি-সহ একাধিক রাজ্যে আঁধার ঘনিয়ে আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে কি না, তা নিয়েই প্র‌শ্ন অনিল স্বরূপের। তাঁর বক্তব্য, কোল ইন্ডিয়ার উৎপাদন এক জায়গায় আটকে রইল কেন? এর সম্ভাব্য উত্তর হিসাবে তাঁর দাবি, ২০১৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ কয়লা উৎপাদন হয়েছিল। তার পরে এক বছর কোল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে কেউ ছিলেন না। কোল ইন্ডিয়ার ম্যানেজাররা কয়লা খননের বদলে শৌচালয়ের গর্ত খোঁড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

গত এক সপ্তাহ ধরেই দেশের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী রাজকুমার সিংহ নিজেই তিন দিন আগে বলেছেন, তিনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন না। কারণ ৪০ থেকে ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে তিন দিনের বেশি কয়লা মজুত থাকছে না।

আজ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে কয়লা সঙ্কটে তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। কেজরীবালের আশঙ্কা, দিল্লিতে বিদ্যুৎ সঙ্কট দেখা দিতে পারে। দিল্লিতে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী অন্যতম সংস্থা টাটা পাওয়ার আজ গ্রাহকদের এসএমএস পাঠিয়ে জানিয়েছে, বুঝেশুনে বিদ্যুৎ খরচ করতে। পঞ্জাবে কয়লার অভাবে বহু এলাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের আটটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার অভাবে আজ উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

তবে সঙ্কটের মোকাবিলায় কেন্দ্র ইতিমধ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠী তৈরি করেছে। আজ তার বৈঠকের পরে সরকারের দাবি, চাহিদা ও জোগানের ব্যবধান ক্রমশ কমছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কয়লার জোগান বাড়ানো যাবে বলেও আশা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি যাতে কয়লার ব্যবহার সঠিক পথে করে, তার জন্য নির্দেশিকাও পাঠানো হয়েছে।

সরকারি সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী দেশের ১৩২টি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ৯৯টিতে পাঁচ দিনেরও কম কয়লা মজুত ছিল। বিদ্যুৎ মন্ত্রক আশা করছে, অক্টোবরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বিদ্যুতের চাহিদা কমতে শুরু করলে কয়লার চাহিদাও কমবে। কোল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান প্রমোদ আগরওয়াল শুক্রবার নাগপুরে বলেছেন, বিজয়া দশমীর পরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে তা স্বাভাবিক হতে মার্চ মাস হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে অনেক জায়গাতেই চার দিনের বেশি কয়লা মজুত থাকছে না। এর মধ্যে অন্যান্য শিল্প ক্ষেত্রে আচমকা চাহিদার বৃদ্ধি হলে সব হিসেব গুলিয়ে যেতে পারে।

প্রাক্তন কয়লা সচিব অনিল স্বরূপ আজ যুক্তি দিয়েছেন, কোল ইন্ডিয়া নতুন কয়লা খনিতে লগ্নি করার বদলে সরকারের নির্দেশে সার কারখানায় লগ্নি করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারকে বেশি পরিমাণে ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কয়লা খনির বেসরকারিকরণ এবং বিদ্যুৎ আইন সংশোধন করে বিদ্যুৎ বণ্টন বেসরকারিকরণের প্রস্তাব নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে সংঘাতও কয়লা সঙ্কটের অন্যতম কারণ বলে তাঁর ইঙ্গিত। কয়লা মন্ত্রকের কর্তারা সরকারি ভাবে কেউ মুখ খুলতে রাজি না হলেও, ঘরোয়া আলোচনায় প্রাক্তন সচিবের যুক্তি মেনে নিচ্ছেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen