বিধানসভায় চাদরের তলায় টেপ রেকর্ডার বাজিয়েছিলেন সুব্রত, স্মৃতিচারণ সৌগতর
বন্ধু সৌগত রায়ের কলমে প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণ। লেখায় উঠে এলো অনেক অজানা মজার ঘটনা। কী লিখলেন সৌগত রায়! দেখে নিন………
সুব্রত মুখোপাধ্যায় আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু। অতি ঘনিষ্ঠ এক সহকর্মীকে হারালাম। ১৯৬৭ সালে বিএসসি পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর থেকে ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব। ওর সঙ্গে ছাত্র পরিষদ করেছি। সুব্রতর অসম্ভব সাহসি ভূমিকা ছিল। সেই সময় বামপন্থী জমানায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্র পরিষদের ধ্বজা ওড়ানোর কৃতিত্ব ওর। যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়ে এই কাজটা করেছিল সুব্রত। তারপর আমি রাজনীতি থেকে কিছুদিন সরে ছিলাম।
১৯৭০-’৭১ সালে নকশাল-সিপিএমের যৌথ আক্রমণের মুখে প্রিয়দার নেতৃত্বে সুব্রত অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭০ সালে ছাত্র পরিষদের সভাপতি হয় ও। ’৭১ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে বিধায়ক হয়েছিল। সেবার আমি ওর নির্বাচনে কাজ করেছিলাম। ১৯৭২ সালে আবার নির্বাচিত হয় এবং সিদ্ধার্থবাবুর মন্ত্রিসভার সদস্য হয়। এত অল্প বয়সে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্ব কেউ পায়নি। সেই সময় প্রিয়-সুব্রত জুটি মুখে মুখে ঘুরত। সুব্রত সেখানেই প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়। আমার মনে হয়, বিরোধী নেতা হিসেবেই ওর ভূমিকা অসাধারণ ছিল। প্রথম ছাত্র জীবন। তার ১৯৭৭ সালের পর থেকে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন। ১৯৭৮ সালে যে সময় ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেস ভাঙলেন, তখন সুব্রত একটা বড় ভূমিকা পালন করেছিল। সেখান থেকেই ইন্দিরা গান্ধীর কাছাকাছি যেতে পেরেছিল ও। সুব্রত ১৯৮২ সালে আবার বিধায়ক হয়। সেই সময় মুখ্যসচেতক ছিল। ১৯৮৭ সালে বিধায়ক হওয়ার পর আমি একসঙ্গে কাজ করেছি। বিধানসভায় বিরোধী হিসেবে ওর সদর্থক ভূমিকা ছিল। বিধানসভায় অনেক মজা করেছি। একবার জল নিয়ে হইচই করার জন্য ও বিধানসভা থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিল। একবার বিধানসভার মধ্যে চাদরের তলায় রেখে টেপ রেকর্ডার বাজিয়েছিল, চোলি কে পিছে কেয়া হ্যায়…।
ওর আরেকটা উজ্জ্বল সময় হল কলকাতার মহানাগরিক হিসেবে। কলকাতার মানুষকে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ওর বড় ভূমিকা ছিল। ওই সময়েই কালীঘাট, কসবা, বড়বাজারে নতুন জলাধার তৈরি হয়েছিল। প্রশাসক হিসেবে ভালো ভূমিকা পালন করেছে। ট্যাক্স না দেওয়ায় ধর্মতলার একটি নামকরা হোটেলের জলের লাইন কেটে দিয়েছিল। কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে ইতস্তত করত না। সুদীর্ঘ রাজনীতির পথ এড়িয়ে রাজ্যে পরিবর্তন। ২০১১ সালে ফের বিধায়ক ও মন্ত্রী হয় সুব্রত। পঞ্চায়েতমন্ত্রী হিসেবে ওর খুব ভালো ভূমিকা ছিল। রাজ্যে ওর অধীনে দু’বার পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল। ওর প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং আস্থা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মন্ত্রিসভায় প্রবীণতম ছিল সুব্রত। ওর শরীর এতটা খারাপ, এটা বুঝতে পারেনি। শরীর সচেতন ছিল। সিগারেট পর্যন্ত খেত না। নিয়মিত যোগা করত। হঠাৎ কী এমন হল, কয়েক দিনের অসুখে চলে গেল। ওর চলে যাওয়া আমাদের পীড়িত করেছে। কলকাতায় সাবেকি ঢঙে পুজো করা ও প্রচলন করেছিল। থিমের পুজোর ভিড়ের মধ্যেও ওর পুজো হতো নিয়ম-নিষ্ঠা মেনে। সুব্রত বর্ণময় চরিত্র। সত্তরের দশকের লড়াকু সুব্রত পরে পরিণত হয় হাস্যরসবোধ সম্পন্ন একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে। ওর অভার অনুভব করব। সুব্রতর চলে যাওয়া খুবই কষ্টের।