‘বিজেপির লোক’, জোটের জল্পনা উড়িয়ে হুমায়ুন প্রসঙ্গে ঝাঁঝালো আক্রমণ ওয়েইসির দলের

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৮:০০: মুর্শিদাবাদে অযোধ্যা ধামের পাল্টা ‘বাবরি’ ধাঁচের মসজিদ নির্মাণ নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই ভরতপুরের সাসপেন্ডেড তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে (Humayun Kabir) বড়সড় রাজনৈতিক ধাক্কা দিল আসাদউদ্দিন ওয়েইসির (Asaduddin Owaisi) দল অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM)। রবিবার কড়া ভাষায় হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে সম্ভাব্য জোটের জল্পনা নস্যাৎ করে দিল মিম। শুধু তাই নয়, তাঁকে সরাসরি ‘বিজেপির লোক’ বলেও তোপ দেগেছে ওয়েইসির দল।
শনিবার মসজিদ শিলান্যাসের পর হুমায়ুন কবীর দাবি করেছিলেন, হায়দ্রাবাদ থেকে ওয়েইসির তরফে তাঁকে আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে। তাঁর এই মন্তব্যের পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে জল্পনা ছড়িয়েছিল যে, তবে কি মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) মিমের হাত ধরছেন ‘বিদ্রোহী’ হুমায়ুন? কিন্তু রবিবার সেই সম্ভাবনায় কার্যত জল ঢেলে দিলেন মিমের জাতীয় মুখপাত্র সায়দ আসিম ওয়াকার (Syed Asim Waqar)।
হুমায়ুন কবীরকে তীব্র আক্রমণ করে মিম মুখপাত্র বলেন, “হুমায়ুন কবীর আসলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) ঘনিষ্ঠ বৃত্তের লোক। আর গোটা দেশ জানে, শুভেন্দু অধিকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের (Amit Shah) কোর টিমের সদস্য। আমরা শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশ্নে কোনও আপস করি না।” তাঁর আরও সংযোজন, যে রাজনীতি মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে, সেখানে মিমের কোনও জায়গা নেই। বাংলার মুসলিম সমাজ খুব ভালো করেই জানে হুমায়ুন কার নির্দেশে এসব করছেন।
মিমের এই আক্রমণের পাল্টা জবাব দিয়েছেন হুমায়ুন কবীরও। তাঁর দাবি, “হায়দ্রাবাদ থেকে ওয়েইসির ঘনিষ্ঠ কয়েকজনই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। আর বিজেপির এজেন্ট তকমা তো ওয়েইসি নিজেও বহুবার পেয়েছেন। রাজনীতিতে এসব কথার মূল্য নেই।” পাল্টা হুঙ্কার দিয়ে তিনি বলেন, “মিম যদি বাংলায় শক্তি বাড়াতে চায়, তবে ওদেরই আমাকে প্রয়োজন হবে।”
একইসঙ্গে হুমায়ুন স্পষ্ট করেছেন, শুধু মিম নয়, প্রয়োজনে আইএসএফ (ISF), বামফ্রন্ট (Left Front) এবং কংগ্রেসকেও (Congress) পাশে চান তিনি। তাঁর কথায়, “AIMIM তো স্থির। আইএসএফ এলে ভালো, বামফ্রন্ট চাইলেও স্বাগত। কংগ্রেস নিয়েও আমার আপত্তি নেই। আমার লক্ষ্য একটাই বঙ্গ বিজেপিকে রোখা এবং আরএসএস ভাবাদর্শের মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমতা থেকে সরানো।”
এদিকে, এই মসজিদ বিতর্ক ও জোট জল্পনা নিয়ে তৃণমূল ও কংগ্রেসের অবস্থানও কড়া। তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম হুমায়ুনকে সাসপেন্ড করার সময়েই ‘বিজেপির লোক’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। অন্যদিকে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী তৃণমূল ও বিজেপি উভয়কেই নিশানা করে বলেছেন, “দুই দল মিলেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষ ছড়াচ্ছে। এদের রোখা না গেলে এমন দিন আসবে, যেদিন মুর্শিদাবাদে হিন্দু ও মুসলমানকে আলাদা চায়ের দোকানে বসতে হবে।”
তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বাবরি মসজিদ (Babri Masjid) নির্মাণের ঘোষণা এবং ৮০ কোটি টাকার ‘গোপন’ অনুদানের কথা বলে হুমায়ুন কবীর যে রাজনৈতিক চমক তৈরি করতে চেয়েছিলেন, মিমের এই প্রত্যাখ্যান তাতে বড় ধাক্কা দিল।