শিঙাড়া-জিলিপি নিয়ে কেন্দ্রের ‘ফতোয়া’ বাংলায় কার্যকর হবে না, জানালেন মমতা
এই ঘটনায় বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে— খাবারের গুণমান নিয়ে সচেতনতা জরুরি হলেও, তা নিয়ে ‘ফতোয়া’ মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হানা দিতে পারে।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৭:২৪: বৃষ্টির দিনে চা আর শিঙাড়া—এটাই তো বাঙালির রসনার আনন্দ! কিন্তু এবার সেই চেনা খাবার নিয়ে ‘সতর্কীকরণ’ জারি করল কেন্দ্র। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন জিলিপি-শিঙাড়ার মতো খাবারের ক্যালোরি, ট্রান্স-ফ্যাট ও চিনির পরিমাণ জানিয়ে পোস্টার টাঙাতে হবে। যেখানে জিলিপি, শিঙাড়া-জাতীয় অস্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে সতর্কতা জারি করতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জিলিপি-শিঙাড়া (samosa, jalebi) নিয়ে জারি হয়েছে ‘সতর্কীকরণ’ বিজ্ঞপ্তি। এই নির্দেশিকাকে ঘিরেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূল। খাবারের গুণমান নিয়ে সচেতনতা জরুরি—তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে সেই সচেতনতার নামে অতিরিক্ত নির্দেশ বা ‘ফতোয়া’-র প্রয়োগ মানুষের খাওয়ার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে—এমনই মত বিরোধীদের।
এই বিতর্কের মধ্যেই পিআইবি ফ্যাক্ট চেক (Press Information Bureau Fact Check)-র সাফাই, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরামর্শে কোথাও এমন কোনও ‘ওয়ার্নিং লেবেল’ সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা নেই, যা রাস্তাঘাটে বিক্রি হওয়া সিঙাড়া-জিলিপি-লাড্ডুর মতো ভারতীয় খাবারের উপর প্রযোজ্য।
উল্টে, ফ্যাক্ট চেক অনুযায়ী, এই নির্দেশিকায় ভারতীয় স্ন্যাকসগুলিকে বিশেষভাবে নিশানা করা হয়নি বা কোনও একতরফা দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একটি নির্দেশিকা ঘিরে শুরু হয়েছে চর্চা ও বিতর্ক। সেই প্রসঙ্গেই এবার মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় লেখেন,
“কিছু সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, নাকি স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশে এখন থেকে শিঙাড়া বা জিলিপি খাওয়া যাবে না। এটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্বারা জারি কোনও নির্দেশ নয়। আমরা প্রতিটি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছি না, এবং এই নির্দেশ রাজ্যে কার্যকর করা হবে না।”
খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এই ‘সতর্কীকরণ’কে কার্যত কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী আরও লেখেন, “আমার মনে হয়, শিঙাড়া ও জিলিপি অন্যান্য রাজ্যেও সমান জনপ্রিয়। সেই রাজ্যগুলির মানুষও এই ধরনের খাবার ভালোবাসেন।”
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘অয়েল অ্যান্ড ফ্যাট বোর্ড’ সম্প্রতি একটি পরামর্শ জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ক্যান্টিনে উচ্চ ফ্যাট, চিনিসমৃদ্ধ খাবার যেমন শিঙাড়া, জিলিপি ইত্যাদির পুষ্টিগত দিক তুলে ধরে সতর্কতামূলক তথ্য জানাতে হবে। যদিও কোথাও সরাসরি এই খাবারগুলি নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়নি।
এই নির্দেশিকা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বিরোধীরা অভিযোগ করতে শুরু করে যে, কেন্দ্র “খাবারে ফতোয়া” জারি করছে। এবার সেই ইস্যুতে রাজ্য সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই।