রাধানাথ শিকদার – বাংলা ভাষার গতিশীলতার কর্ণধার

বাংলা ভাষা সুদীর্ঘ যাত্রাপথ অতিক্রম করেছে। চর্যাপদ থেকে অভ্র সফ্টওয়ার, এই লম্বা সফরে এসেছে নানান বদল।

February 21, 2023 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

সৌভিক রায়

বাংলা ভাষা দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এসেছে। চর্যাপদ থেকে শুরু করে অভ্র সফ্টওয়ার, এই লম্বা সফরে এসেছে নানান পরিবর্তন। ‘অসূর্যস্পর্শার’ মতো শব্দ আর ব্যবহার হয়না, আবার ‘ক্যানো কী’-র অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ভাষা নিয়ে প্রতিটি যুগে কিছু সনাতনী মনোভাবাপন্ন মানুষ রে রে করে ওঠেন…… বাংলার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয় না!

কিন্তু আদপে একটি ভাষা কী চায়? ভেবে দেখেছেন কখনও?

ভাষা চায় স্বতঃস্ফূর্ততা। সঠিক উচ্চারণের চেয়েও জরুরি সেই ভাষা কত সংখ্যক মানুষ ব্যবহার করছেন। ভাষাকে জ্যান্ত রাখতে হলে, যুগে যুগে হওয়া বদলকে মান্যতা দিতে হবে। ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে গেলেই অপমৃত্যু হবে ভাষার। পরিবর্তনই ধর্ম, তাকে স্বাগত জানানোই ভাষা ব্যবহারকারীদের কর্তব্য হওয়া উচিত। ইতিহাস বলে, ভাষার সহজ-সরল, বহুজনবোধ্য, যুগোপযোগী রূপকেই মানুষ ব্যবহার করে।

বাংলা ভাষা বারবার বাঁক নিয়েছে, বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষা থেকে প্রথম চৌধুরীর গদ্য, বিদ্যাসাগরের গদ্য থেকে রবি ঠাকুরের রাবীন্দ্রিক ভাষা, কাব্যের ভাষায় বদল এনেছিলেন মাইকেল। তাঁর প্রসহন, দর্পন সাহিত্য, হুতুমের নকশা; সবই সমৃদ্ধ করেছে মাতৃভাষাকে।

আজ যে বাংলাভাষা গতিশীল তার অনেকটা কৃতিত্বই রাধানাথ শিকদারের। রাধানাথ শিকদার বলতেই মনে পড়ে, মাউন্ট এভারেস্টের কথা, রাধানাথ কেবল জরিপবিদ, পরিসংখ্যানবিদ বা গণিতজ্ঞ বা বিজ্ঞানে সুপণ্ডিত নন, বহুমুখী প্রতিভা ও গুণের সমাহার। তাঁর অজস্র গুণের মধ্যেই একটি হল তাঁর সাহিত্যিক সত্তা, যার নেপথ্যে ছিলেন বন্ধু প্যারীচাঁদ মিত্র।

গবেষকদের একাংশের মতে, নিয়মিত সাহেবদের সঙ্গে মিশতে মিশতে রাধানাথের চালচলন ও কথাবার্তা ধীরে ধীরে পুরোদস্তুর বিদেশিদের মতো হয়ে যাচ্ছিল। এক সময় তিনি বাংলা ভাষা চর্চা প্রায় ভুলেই যেতে বসেছিলেন। এ সময়ই তাঁর হাত ধরেন প্যারীচাঁদ। দুজনে মিলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। আসলে, রাধানাথও বাংলা ভাষা চর্চায় ফিরতে চাইছিলেন।

তাঁরা যুগ্মভাবে একটি পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন, নাম দেন মাসিক পত্রিকা। ১৮৫৪ সালের ১৬ই আগস্ট এই পত্রিকা আত্মপ্রকাশ করে। রেভারেন্ট জেমস লং-এর গবেষণা থেকে জানা যায়, মাসিক পত্রিকার গদ্য মূলত মৌখিক বাংলা ভাষার অনুরূপ ছিল। মহিলাসমাজ ও সাধারণ পাঠকদের কথা ভেবেই সম্পাদনা করতেন রাধানাথ। পরে অসম সরকার এই পত্রিকার ৫০০ কপির গ্রাহক হয়। পত্রিকাটি বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাখ্যানের মাধ্যমে নারীশিক্ষার পক্ষে এবং হিন্দু সমাজের নানান কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আলোচনা করত। রাধানাথ এখানে গ্রিক ও রোমান সাহিত্য চর্চা করতেন। এই পত্রিকার জন্যই প্রবন্ধ ও গল্প লিখতেন রাধানাথ। এখানেই ধারাবাহিকভাবে প্যারীচাঁদ মিত্রের বিখ্যাত উপন্যাস ‘আলালের ঘরের দুলাল’ প্রকাশ পেয়েছিল। বাংলা সাহিত্যে নতুন একটি ধারা শুরু হয়েছিল ওই সময় থেকে, যার পথিকৃৎ ছিল আলালের ঘরের দুলাল উপন্যাস।

আলালের ঘরের দুলাল ভাষার আমূল পরিবর্তন ঘটায়; এর ভাষাকেই অনেকে আলালি ভাষা বলেন। আলালি ভাষা আদপে চলিত গদ্যভাষা যেখানে মানুষের মুখের ভাষা অগ্রাধিকার পেত। সাধারণ পাঠক পড়বে বলেই, সাধারণবোধ্য ভাষা ব্যবহার করে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছিলেন দুই বন্ধু।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen