সিমলাগড়ের দক্ষিণাকালী: নরবলির জায়গায় এখন পোনা মাছের ভোগ, ৫০০ বছরের সাধনার কেন্দ্র আজও জাগ্রত

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৯:৪৫: হুগলির পাণ্ডুয়ার সিমলাগড়ের দক্ষিণাকালী মন্দির প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো। এই শক্তিক্ষেত্র একসময় ছিল শ্মশান ও জঙ্গলে ঘেরা, জনবসতি ছিল না বললেই চলে। লোককথা অনুযায়ী, এক কাপালিক পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে এই মা কালীর সাধনা করতেন। তাঁর সাধনার স্থানে আজ গড়ে উঠেছে দক্ষিণাকালীর মন্দির, যা কালীপুজোর দিনে ভক্তদের ভিড়ে মুখর হয়ে ওঠে।

এক সময় ডাকাতদের পুজোস্থল ছিল এই মন্দির। শোনা যায়, ডাকাতরা যাত্রার আগে এখানে পুজো দিতেন এবং নরবলিও দিতেন। তবে সেই প্রথা বন্ধ করেন খোদ তান্ত্রিক নটোবর ভট্টাচার্য। একদিন মন্দিরের সামনে ছড়িয়ে থাকা নরমুণ্ড দেখে তিনি পুজো না করেই ফিরে যান। পরে দেবী স্বপ্নাদেশে জানান, আমি উপোসে রয়েছি, আমার পুজো হয়নি। তখনই তান্ত্রিকের শর্তে বন্ধ হয় নরবলি। যদিও ছাগ বলির প্রথা এখনও চালু রয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জিটি রোডের গুরুত্ব বাড়ে, সেনাবাহিনীর চলাচল শুরু হয়, এবং স্থানীয়রা আতঙ্কে মায়ের শরণ নেন। ধীরে ধীরে মন্দিরের চারপাশে জনবসতি গড়ে ওঠে, দোকানপাট তৈরি হয়। বর্ধমান থেকে আগত ট্রাকচালকরা মায়ের পুজোয় মিহিদানা ও সীতাভোগ নিয়ে আসতেন। আজও জিটি রোড দিয়ে যাওয়া গাড়ির চালকরা মায়ের পুজো দিয়ে যান।
বর্তমানে মন্দিরের পুরোহিত অনামিক চট্টোপাধ্যায় জানান, “ঠিক কত বছর আগে পুজো শুরু হয়েছে তা জানা নেই, তবে মা এখানে অত্যন্ত জাগ্রত।” কালীপুজোর দিনে মাকে দেওয়া হয় ফল, সন্দেশ, এবং বিশেষভাবে পোনা মাছের ভোগ। তাঁর কথায়, “সিমলাগড়ের দক্ষিণাকালী সন্দেশ খেতে খুব ভালোবাসেন।”