টানা বৃষ্টিপাত ও DVC-র ছাড়া জলে বিপদসীমা ছাড়িয়েছে শিলাবতী-কেঠিয়া, ঘাটাল-চন্দ্রকোনায় ফের বন্যার আশঙ্কা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৭:৫৬: নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিপাত এবং DVC-র থেকে জল ছাড়ার ফলে শনিবার ভোর থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলাবতী, কেঠিয়া ও ঝুমি নদীতে জলস্তর বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। লক্ষ্মীপুজোর প্রাক্কালে ঘাটাল ও চন্দ্রকোনার বিস্তীর্ণ এলাকায় ফের প্লাবনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই এই বছর পাঁচবার প্লাবিত হয়েছে ঘাটাল মহকুমা, ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তীব্র।
মহারাজপুর, পান্না এবং বাঁকা-সহ একাধিক এলাকায় জল ঢুকে পড়েছে, যার ফলে জনজীবনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিশেষ করে ক্ষীরপাই এলাকায় কেঠিয়া নদীর বাঁকা পয়েন্টে পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে প্রশাসন তৎপর হয়েছে।
মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস ও বিডিও কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস নদী পরিদর্শন করেছেন এবং হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। ঘাটাল মহকুমায় ৩০টি ত্রাণ শিবির প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে দ্রুত আশ্রয় দেওয়া যায়।
বাসিন্দাদের মাটির বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি সাপের উপদ্রবের কারণে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। নদীতে জলস্রোত বেশি থাকায় মাছ ধরা ও স্নান থেকে বিরত থাকার নির্দেশ জারি হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় একাধিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে, যাতে দ্রুত তথ্য আদানপ্রদান ও সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হয়।
নতুন করে প্লাবনের ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ঘাটাল ও চন্দ্রকোনার কৃষকরা। প্রশাসন পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে প্রস্তুত।
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কড়া হুঁশিয়ারির পরও জলছাড়ে কোনও বিরতি নেই। শনিবার সকালেও মাইথন ও পাঞ্চেত ড্যাম থেকে মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে, যা দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় নতুন করে প্লাবনের আশঙ্কা তৈরি করেছে। ডিভিসি কর্তৃপক্ষের ‘বিনা নোটিসে’ জলছাড়ের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী শুক্রবার X হ্যান্ডেলে একাধিক পোস্টে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, “এটি কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটি ডিভিসির তৈরি করা বিপর্যয়। আমি কাউকে বাংলার বিসর্জন করতে দেব না।”
তাঁর মতে, এই জলছাড় পরিকল্পনাহীন এবং জনস্বার্থবিরোধী। শুক্রবার মাইথন থেকে ৪২,৫০০ কিউসেক এবং পাঞ্চেত থেকে ২৭,৫০০ কিউসেক জল ছাড়া শুরু হয়। শনিবারেও সেই পরিমাণে কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয় নি, সকাল থেকে মাইথন ড্যাম ৩২,৫০০ কিউসেক এবং পাঞ্চেত ৩৭,৫০০ কিউসেক হারে জল ছাড়ে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হলেও, জল ছাড়ার আচমকা সিদ্ধান্তে দক্ষিণবঙ্গজুড়ে বিপদের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।