রাজ্যের উদ্যোগেই সিঙ্গুরে কৃষিভিত্তিক শিল্প

জমি লিজ দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করতে চলেছে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দপ্তর।

November 14, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

টাটার ন্যানো কারখানা চলে গিয়েছে কবেই। কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ—বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সেই স্লোগান এখন ফিকে। কিন্তু পরিবর্তনের অন্যতম ধাত্রীভূমি সিঙ্গুরে শিল্প হচ্ছেই। তাও আবার স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকারের হাত ধরে। আর তা কৃষিভিত্তিক শিল্প। অন্তত তেমনটাই প্রাথমিক সিদ্ধান্ত। জমি চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। টাটাদের পরিত্যক্ত কারখানার অদূরেই। মোট ১০ একর। তবে পূর্বসূরির মতো ‘ভুল’ পদ্ধতিতে নয়। উর্বর জমিতে কৃষকের অনিচ্ছায় শিল্প না গড়ার অবস্থানে এখনও অনড় মমতা। তাই সিঙ্গুরে এই কারখানা হবে পূর্তদপ্তরের জায়গায়। তার জন্য জমি লিজ দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করতে চলেছে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দপ্তর।

বাম আমলে ন্যানো কারখানা গড়ার জন্য সিঙ্গুরের (Singur) উর্বর জমি টাটাদের দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আর সেই জমি রক্ষার লড়াইতে বাম সরকারের ভিত নড়িয়ে দিয়েছিলেন বিরোধী নেত্রী মমতা। তাপসী মালিকের মৃত্যু সেই কৃষিজমি আন্দোলনে নিয়ে যায় অন্য মাত্রায়। উর্বর জমিতে কিছুতেই শিল্প করা যাবে না—তৃণমূলনেত্রীর এই অনড় মনোভাব শেষ পর্যন্ত টাটাদের সিঙ্গুরের মাটি ছাড়তে বাধ্য করে। আর কিছুটা হলেও এগিয়ে আনে ক্ষমতাসীন সিপিএমের পতন। রতন টাটার স্বপ্নের ন্যানো প্রকল্প পাড়ি দেয় গুজরাতে। সেখানে কারখানা গড়া হলেও, সুখের দিন স্থায়ী হয়নি। বন্ধ হয়ে যায় সেই গাড়ি উৎপাদন। এদিকে সিঙ্গুরে টাটাদের পরিত্যক্ত প্রকল্প মমতা ব঩ন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরও শিল্পবিরোধী তকমা সেঁটে দেয়। ক্ষমতায় আসার পর থেকে তা ঝেড়ে ফেলতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী। যার ফল দেখা গিয়েছে বিগত এক দশকে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও সিঙ্গুরে শিল্প গড়ার জন্য সওয়াল করেছিলেন। যতটা জমি টাটাদের শিল্পের জন্য প্রকৃত দরকার, তার বাইরের জমি কৃষিকাজে ব্যবহারের প্রস্তাব ছিল তাঁর। কিন্তু টাটাদের সেই জমি আজও পরিত্যক্ত। তারই কাছে রতনপুরে একটি জমিতে শিল্প গড়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এখানে কৃষি হাব হবে, সেই ঘোষণা করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতাই। হুগলির জেলাশাসক রত্নাকর রাও জানিয়েছেন, রতনপুর মৌজার ওই জমিটি আগে পূর্তদপ্তরের ছিল। সেখানেই কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ার উদ্যোগ শুরু হয়েছে।

১০ একর জমিটির পরিকাঠামো গড়ার কাজ ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। যাতে শিল্প গড়তে আসা সংস্থাকে কোনও সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয়। নিগমের চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানিয়েছেন, ওই জমি রাজ্য ক্ষুদ্র শিল্পোন্নয়ন নিগমের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান বিপ্লব রায়চৌধুরী বলেন, ‘আমরা জমি পেয়েছি। কিন্তু হস্তান্তরের জন্য সামান্য প্রশাসনিক কাজ বাকি আছে। তা শেষ হলেই আমি এবং নিগমের কর্তারা জমিটি দেখতে সিঙ্গুরে যাব। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই জমি লিজে দেওয়ার কাজ শুরু হবে।’

শিল্পদপ্তরের কর্তারা বলছেন, যে এলাকায় কৃষিকাজ ভালো হয়, সেখানে শিল্প হতে বাধা নেই। বরং কৃষিভিত্তিক শিল্প হলে যেমন জায়গা কম লাগে, তেমনই উৎপাদিত ফসল কাঁচামাল হিসেবে কাজে লেগে যায়। পরিবহণের খরচও কমে। কৃষি ও শিল্পের ওই পরিপূরক অবস্থানে সুবিধা হয় উৎপাদন খরচেও। তাই সিঙ্গুরে যদি শিল্প হয়, তাতে যেমন এলাকাবাসীর উপকার, তেমনই রাজ্যের তরফে সর্বস্তরে শিল্পের সদর্থক বার্তা দেওয়াও সম্ভব।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen