৩ ফুট উচ্চতা নিয়েই সফল চিকিৎসক গণেশ, প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে জয়ীর গপ্প

December 2, 2025 | 2 min read
Published by: Ritam

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ,২১:২২: ইংরাজিতে একটা কথা আছে, ‘Never Give Up’। ৩ ফুট উচ্চতা নিয়েই সফল চিকিৎসক গণেশ। তাঁর নেপথ্যে রয়েছে জীবনযুদ্ধের গপ্প। গণেশের স্বল্প উচ্চতার কারণেই একসময় সার্কাসের একটি দল তাঁকে ৫ লক্ষ টাকায় কিনে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু রাজি হননি বাবা। সন্তানের ভবিষ্যতের উপর আস্থা রেখে আগলে রেখেছিলেন। আজ সেই ছেলে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে একজন সফল চিকিৎসক। তিনি আর কেউ নন, গুজরাটের ২৫ বছর বয়সী ডাঃ গণেশ বরাইয়া, যিনি সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে বর্তমানে সকলের পরিচিত।

গুজরাটের ভাবনগরে এক চাষি পরিবারে জন্ম গণেশের। ৯ সন্তানের মধ্যে তিনি একমাত্র ছেলে। জন্ম থেকেই বিরল রোগে আক্রান্ত, যার কারণ গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি। এই শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে তাঁর শরীরে ৭২ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এবং ওজন ২০ কেজিরও কম।

গণেশের বাবা-মাকে বহু লোক বলেছিলেন, “এই শিশু কেবল সার্কাসেই কাজ করার যোগ্য।” কিন্তু তাঁর দিদি, মা ও বাবা কখনোই তাঁকে দমিয়ে যেতে দেননি। তাঁদের সমর্থন আর ভালোবাসা ছিল গণেশের সবচেয়ে বড় শক্তি।

ডাঃ গণেশ প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক হলেও ডাক্তারি পড়ার পথ ছিল কাঁটাময়। ২০১৮ সালে তিনি PWS কোটায় NEET পরীক্ষায় সফল হন। কিন্তু তিন ফুট উচ্চতার কারণে তাঁর ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন ধাক্কা খায়। মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (MCI) তাঁকে MBBS কোর্সে ভর্তি নিতে অস্বীকার করে। কর্তৃপক্ষের যুক্তি ছিল, গণেশের শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে ডাক্তার হিসেবে কাজ করতে অসুবিধা হতে পারে।

গণেশ MCI-এর এই সিদ্ধান্ত মেনে নেননি। প্রথমে গুজরাট হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন, কিন্তু সেখানেও MCI-এর সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। দমে না গিয়ে গণেশ হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court)। এই আইনি লড়াই লড়তে তাঁকে অর্থ সাহায্য করেন তাঁর স্কুলের প্রধান শিক্ষক।

অবশেষে, ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট গণেশের পক্ষে ঐতিহাসিক রায় দেয়। NEET পরীক্ষায় সফল হওয়ার প্রায় সাত বছর পরে গণেশ তাঁর স্বপ্নের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার নিয়োগপত্রটি পান। তিনি ভাবনগর গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজে MBBS কোর্সে ভর্তি হন।

মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার পরেও প্রথম সেমিস্টারে নতুন সমস্যা দেখা দেয়। স্বল্প উচ্চতার কারণে সময় মতো উত্তরপত্র শেষ করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব হচ্ছিল। এই সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষ গণেশের জন্য একজন রাইটার এবং অতিরিক্ত এক ঘণ্টা সময় বরাদ্দ করে।

গণেশ জানিয়েছেন, কেবল চিকিৎসকরাই নন, তাঁর সহপাঠীরাও তাঁকে প্রচুর সাহায্য করেছেন। গণেশ বলেন, সহপাঠীরা সব সময়ে তাঁকে প্রথম বেঞ্চে বসার ব্যবস্থা করে দিতেন, নোটস তৈরি করে দিতেন। প্র্যাক্টিকাল ক্লাসে, বিশেষ করে অ্যানাটমিতে, প্রফেসর ও সহপাঠীরা টেবিলের উপর টুল এনে তাঁকে কাজ করার ব্যবস্থা করে দিতেন।

গণেশের রুমমেট ও বর্তমান সহকর্মী ডাঃ দীপক ভাধের জানান, “গণেশ প্রথম ক্লাসে এলে আমরা ভেবেছিলাম এ কোনও শিশু। এক মাস পরে ও আমাদের ব্যাচের সঙ্গে ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। আমরা সবাই ওকে ভালোবেসে গণি বা গণিয়া বলে ডাকি।”

বর্তমানে ডাঃ গণেশ গরিব মানুষের সেবায় মগ্ন। তিনি জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের জন্য সক্ষম চিকিৎসকের প্রয়োজন হলেও ডিউটিতে তিনি কোনও ফাঁক রাখেন না। প্রথম দেখায় রোগীরা কিছুটা অবাক হলেও, পরে তাঁরা সহজেই ডাঃ গণেশকে নিজেদের চিকিৎসক হিসেবে মেনে নেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen